সাঈদ চৌধুরী:
আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এক আলোক বর্ষ সম্পর্কে বইয়ের পাতায় ধারনা দেয় কিন্তু ব্যবহারিকের ক্ষেত্রে ঘর থেকে বের হয়না বা হতে পারেনা । বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারের জন্য কি কাজ হচ্ছে বর্তমানে কারও ধারনা আছে । শুধু মাত্র ক্লাসের পর প্রাকটিক্যাল ক্লাসের নামে এখনও অনেক বিদ্যালয়ে ব্যবহারিক খাতা কিভাবে লিখতে হবে তাই দেখানো হয় তা আবার সাধারণ ক্লাস রুমেই ।অনেক স্কুলে ভালো ব্যবহারিক শিক্ষক নেই, নেই ব্যবহারিক ক্লাস রুম । শুধু ঢাকা ও বড় বড় শহর কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা চিন্তা করলে বিজ্ঞানের সুফল গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা কিভাবে পাবে অথবা গ্রামে বসবাসরত শিক্ষার্থীরা কিভাবে তাদের মেধাকে কাজে লাগাবে । দিন যাচ্ছে বিজ্ঞান আগাচ্ছে দুরন্ত গতিশীল ভাবে । কিন্তু আমরা কি এই গতিশীলতার সাথে তাল মেলাতে পারছি ?
আমাদের দেশের মেধাবীরা অন্য দেশে চলে যায় । পাশ্চাত্যে গিয়ে গবেষনা করে মূল্যবান অনেক কিছু আবিস্কার করে কিন্তু সুনাম কেড়ে নিয়ে যায় সেই দেশ । যৌথভাবে আবিস্কারের তকমা লেগে যায় আমাদের মেধাবী সন্তানদের গাঁয়ে । সম্প্রতি অনেকগুলো আবিস্কারের সাথে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের অবদানের কথা চলে এসেছে কিন্তু ঘরোয়া ভাবে আমরা আসলে কতটা চিন্তা করতে পারি নব নব আবিস্কারের ক্ষেত্রগুলো অথবা আবিস্কারকদের নিয়েই !
স্কুল কলেজের বিজ্ঞান মেলাগুলোতে ছোট ছোট বাচ্চারা অনেক ধরনের গবেষনার ফল নিয়ে আসে । দেখে ভালো লাগে তারাও ইলেক্ট্রনিক্স, বংশগতিবিদ্যা, রসায়ন নিয়ে ভাবতে শিখেছে কিন্তু এর প্রয়োগিক চিন্তা করতে গেলেই তৎক্ষনাত হতাশ হতে হয় আমাদের ।
অনেক আগের কথা মনে পড়ছে ।জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে একবার দেখালো একজন পানির উপর দিয়ে ভাসমান সাইকেল আবিস্কার করেছে । সে সাইকেল শুধু স্থলে নয় জলেও একইভাবে চালানো যায় ।
তারপর আরেকটা আবিস্কারের কথা মনে পড়ছে যা পত্রপত্রিকায় এসেছিলো গুরুত্ব দিয়ে । ডিজেল ছাড়াই চলবে পানির পাম্প এবং তা কৃষিকাজে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারবে এই পাম্প । কিছুদিন আলোচনার পর আর শোনা যায় না এগুলো । পাথরকুচি পাতা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনও এমন একটি ব্যপারের মধ্যেই পড়ে ।
হয়ত দেখা যাচ্ছে এই আবিস্কার গুলোই দেখে বা শুনে অন্য দেশ করে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব নিয়ে যাচ্ছে তাদের নামে ।
আমার এক পরিচিত রয়েছেন যিনি একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র আবিস্কার করেছেন । তার ভাষায় এই যন্ত্র অণ্যান্য অনেক যন্ত্র থেকে আধুনিক ভাবে কাজ করতে সক্ষম । পিনাক-6 জাহাজটি ডুবে যাওয়ার পর তিনি নৌযান সনাক্তকরন এ যন্ত্র আবিস্কার করেন । এই যন্ত্র দিয়ে খুব সহজেই ডুবে যাওয়া নৌযান সনাক্ত করা যায় । এই বিষয়টি অনেকগুলো পত্রিকায় একযোগে আসে বিভিন্ন সময়ে । যে আবিস্কারক তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো ডুয়েটেও ।
কিন্তু অতঃপর সে আর আলোচনায়ই এলোনা । পিনাক -6 ডোবার পর খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়েছিলো বলেই তার এ আবিস্কারের নেশা । কিন্তু এই আবিস্কার কোথায় সে দেখাবে কিভাবে বোঝাবে সে একজন বিজ্ঞান মনস্ক ব্যক্তি এবং দেশের জন্য কাজে লাগার মত মানুষ !
বিজ্ঞান শিক্ষা, বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীর গবেষনা এখনও আমাদের দেশে বই পর্যন্ত মুখস্ত বিদ্যার একটি অংশ । গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনার এই রফিকুল ইসলামের আবিস্কারের সুফল কি পাবেনা এ জাতি ?
বিজ্ঞানাগার দরকার প্রতিটি স্কুলে, কলেজে, দরকার মাঠ পর্যায় থেকে ছোট ছোট আবিস্কারকে তুলে এনে প্রতিষ্ঠিত করা এবং প্রয়োজন সর্বপরি বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে কার্যকরী সিদ্ধান্ত ।
রফিকুল ইসলামের আবিস্কার, পাথর কুচির বিদ্যুৎ ও আমাদের মত একেবারে সামান্য চিন্তাগুলো কাজে লেগে হয়ত দেখা যাবে এ দেশই বিজ্ঞানে সবচেয়ে এগিয়ে । শুধু প্রয়োজন একটু সুদৃষ্টি ও বিজ্ঞান মনস্ক চিন্তা ।
আলোক বর্ষ দূরত্ব যে দেশের সন্তানের মুখস্ত করতে পারে সে দেশের মেধাবী সন্তানেরা আলোক বর্ষ দূরুত্ব অতিক্রম করে বিজ্ঞানের ভীতও শক্ত করতে পারবে বলে মনে করি ।
যারা রফিকুল ইসলামের মত ছোট ছোট আবিস্কার নিয়ে সামনে আসতে চায় তাদের সামনে আসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বিজ্ঞান বিষয়ক সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের দৃষ্টি আকর্ষন করছি । আশা করি আমাদের এ দেশও একদিন বিজ্ঞানে বিশ্বে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে ।
Discussion about this post