বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী রিভিউ শুনানিতে বিদেশি আইনজীবী চেয়ে আবেদনকারীরা দেশদ্রোহী বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
তিনি বলেন, আমাদের ৫০ হাজার আইনজীবী রয়েছেন, ‘তারা কি এই রিভিউ শুনানির অযোগ্য। যারা বিদেশি আইনজীবী চেয়ে আবেদন করেছে তাদের দেশের প্রতি, বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা থাকলে এই আবেদন করতে পারতেন না। তারা দেশদ্রোহী। রাষ্ট্রের প্রতি, বিচারব্যবস্থার প্রতি এই আস্থাহীনতা খুবই নিন্দনীয়।’ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ আবেদনের পর রোববার সকাল ১১টার দিকে অ্যাটর্নি জেনারেলের নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় বাতিল চেয়ে রিভিউ আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপরই সংবাদ সম্মেলন করেন মাহবুবে আলম।
বার কাউন্সিলে বিদেশি আইনজীবী চেয়ে আবেদনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এর আগে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, সংশোধনী বিষয়ে শুনানি হয়েছে। তখন তো বিদেশি আইনজীবীর দরকার পড়েনি। কোনো দেশের সাংবিধানিক বিষয়ে বিদেশি আইনজীবী শুনানি করেছেন এ রকম নজির পৃথিবীর আর কোথাও নেই।’পর্যবেক্ষণে বিচারকদের কোড অব কন্ডাক্ট (শৃঙ্খলাবিধি) বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘অবশ্যই। আমরা ৩৯টি কোড অব কন্ডাক্টের কথা উল্লেখ করেছি। যারা তদন্ত করবে কোড অব কন্ডাক্ট তাদের বিষয়। এখানে তো আমাদের করার কিছু নেই। কোড অব কন্ডাক্ট করার এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির।’সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী রিভিউ শুনানিতে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের অনুমতি চেয়ে বার কাউন্সিলে গত সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) আবেদন করে রিটকারীপক্ষ। আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া ডাকযোগে বার কাউন্সিল চেয়ারম্যান বরাবর এ আবেদন করেন।
এতে বলা হয়, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ শুনানিতে ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের অনুমতি দেয়া হোক। আবেদনে ভারতীয় তিন আইনজীবীর নামও সুপারিশ করা হয়। চিঠি পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যেই প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে বার কাউন্সিলকে অনুরোধও করেছেন আবেদনকারী।ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি গত ১ আগস্ট প্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্ট। রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। এরপর গত ১০ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়, যাতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা ফিরে পায় সংসদ। সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন ৯ আইনজীবী। প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর রুল দেন। রুলে ওই সংশোধনী কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। পরে ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এর বিরুদ্ধেই আপিল করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ, যা এ বছরের ৩ জুলাই খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।
Discussion about this post