রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত কড়াইলের বেলতলা বাজার। সাদা একটি মাইক্রোবাস এসে থামল। সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয় নারীরা আসতে থাকেন। একেকজনের একেক সমস্যা। মাইক্রোবাসে বসিয়ে তাঁদের কথা শোনা হয়। দেওয়া হয় প্রয়োজনমতো পরামর্শ। মাইক্রোবাসের পেছনে লেখা ‘ব্লাস্ট ভ্রাম্যমাণ আইন সহায়তা কেন্দ্র। বিনা মূল্যে আইনি সেবা নিয়ে আপনার পাশে’। সঙ্গে মোবাইল নম্বর।
বেসরকারি আইনি সহায়তা প্রদান প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এ বছরের জানুয়ারি থেকে ভ্রাম্যমাণ আইনি সহায়তা কেন্দ্র চালু করেছে। রাজধানীতে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দোরগোড়ায় বিনা মূল্যে আইনি সহায়তা নিয়ে ঘুরছে ব্লাস্টের গাড়ি।
গতকাল বুধবার সকালে বনানীর কড়াইল বস্তির বেলতলায় ভ্রাম্যমাণ এ আইনি সহায়তা কেন্দ্রের কার্যক্রম দেখা যায়। ব্লাস্টের দুজন আইনি পরামর্শক, একজন পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা এ গাড়ি থেকেই সেবা দেন। সহায়তা নিতে আসা একজনের সমস্যা শোনা শেষ হলেই আরেকজন প্রবেশ করছেন। কেউ কেউ এসেছেন নিজেদের আইনি সহায়তার আবেদনের অগ্রগতি জানতে।
লতা রানী ভ্রাম্যমাণ এ সহায়তা কেন্দ্রের একজন আইনি পরামর্শক। তিনি বলেন, ঢাকায় বনানীর সাততলা বস্তি ও কড়াইলের বেলতলা, মিরপুরের ভাষানটেক ও যাত্রাবাড়ীর ধলপুরের নির্দিষ্ট স্থানে এ গাড়ি যায়। প্রতি সপ্তাহে তাঁরা এলাকাগুলোয় একবার করে যান। রবি থেকে বৃহস্পতিবার তাঁদের ভ্রাম্যমাণ কার্যক্রম চলে। শুধু সোমবারে প্রধান কার্যালয়ে অফিস করতে হয়। সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত তাঁরা নির্দিষ্ট এলাকায় থাকেন।
কী কী ধরনের সাহায্য দেওয়া হয়—এ প্রশ্নে লতা বলেন, ‘আমরা মূলত সালিসের কাজ করি। আপসযোগ্য হলে তা আবেদনকারী (আইনি সহায়তা চান যিনি) এবং অপরপক্ষের উপস্থিতিতে সালিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হয়। ব্লাস্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয় না। আবেদনকারীর ইচ্ছা অনুযায়ী ব্লাস্ট সাহায্য করে।’
পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা রেশমা আকতার বললেন, এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার মানুষ ভ্রাম্যমাণ সহায়তা কেন্দ্রের সেবার আওতায় এসেছেন। সবার পক্ষে কাকরাইলের ব্লাস্টের প্রধান কার্যালয়ে আসা সম্ভব নয়। তাঁরা বেশির ভাগ দিন এনে দিন খান। কাজ বন্ধ করে আসতে চান না। তাই আইনি সেবা তাঁদের দরজায় পৌঁছে দেওয়ার জন্যই এ গাড়ি শহরের তিনটি অঞ্চলে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এ কেন্দ্রের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নারী ও শিশুদের সহায়তা করা। তবে পুরুষেরাও আসেন। তাঁদেরকে সমস্যার ধরন অনুযায়ী প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। তা ছাড়া প্রতি মাসে একবার করে একেক এলাকায় নারী-পুরুষ সবার জন্য ‘আইন সচেতনতা সভা’ আয়োজন করা হয়। সেখানে জানানো হয় আইনের বিভিন্ন দিক ও বস্তিবাসীর অধিকার সম্পর্কে। ব্লাস্টের প্রধান কার্যালয়ে সালিসের আয়োজন করা হয়। এ ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে ব্লাস্ট যাতায়াত ভাড়াও দেয়।
বিভিন্ন এলাকায় ব্লাস্টের স্থানীয়ভাবে কিছু প্রতিনিধি আছেন। তাঁরা এ গাড়ির ব্যাপারে মানুষকে জানান। শাহেদুজ্জামান কড়াইলের একজন স্থানীয় প্রতিনিধি। তিনি বলেন, ‘একটু আগে আমাকে এক মহিলা এসে বলেন, ‘‘আমার কার্ড (স্মার্ট কার্ড) পুইড়া গেছে। কী করব?’’ তাঁকে বলেছি, থানায় গিয়ে জিডি করেন। তিনি দেরি না করে থানায় গেছেন।’ শাহেদুজ্জামান আরও বলেন, অন্য সময় হলে ওই নারী একে–ওকে ধরতেন থানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। এখন তিনি নিজেই জানেন জিডির পদ্ধতি এবং এটা ফ্রি। নারীরা এখন নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন।
ব্লাস্টের উপপরিচালক (লিগ্যাল) বরকত আলী ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্রের তত্ত্বাবধান করেন। তিনি বলেন, আইনি সুবিধা সব শ্রেণির মানুষের কাছে পৌঁছাতে একটি পাইলট প্রকল্প চালু হয়েছে। বস্তির সালিস সাধারণত স্থানীয় নেতারা করে থাকেন। এ সেবার ফলে সেটা কমে গেছে। তাঁরা প্রথমে একটু সমস্যা করতেন। এ ছাড়া সবার সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে।
Discussion about this post