বিমানের স্বেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ সিএনএফ এজেন্টরা। ফ্লাইট পৌঁছানোর পর বিমানের অবহেলায় খোলা মাঠে পড়ে থেকে প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হচ্ছে বলে জানায় সিএনএফ এজেন্ট সূত্র।
কার্গো ভিলেজ সূত্রে জানা যায়, জাহিদ এন্টারপ্রাইজের প্রায় ৫০ লাখ টাকার মাল নষ্ট হয়েছে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে। একাধিকবার বিমানের কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেও মালামাল নির্দিষ্ট সময়ে গোডাউনে লোড করাতে পারেনি কোম্পানিটি।
অন্যদিকে সেপ্টেম্বর মাসে চৌধুরী অ্যান্ড সন্সের ৭০ লাখ টাকার পণ্য নষ্ট হয়েছে পানিতে ভিজে। এসব স্বেচ্ছাচারিতার না আছে কোনো ক্ষতিপূরণ, না আছে বিচার।
বিমানের কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতার ভয়ে মুখতে খুলতে ভয় পান সিএনএফ এজেন্টরা। এসব বিষয়ে সরাসরি কথা বললেই পরবর্তীতে যেসব পণ্য আসবে তা নিয়ে ইচ্ছাকৃত হয়রানি তৈরি করবে বিমানের কর্মকর্তারা।
পণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড সন্সের সত্ত্বাধিকারী ফয়সাল চৌধুরী। তিনি বলেন, আমার পণ্য ফ্লাইট থেকে নামানোর পর খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছিলো। নির্দিষ্ট সময়ে তা গোডাউনে সরায়নি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বৃষ্টির পানিতে ভিজে আমার ৭০ লাখ টাকার পণ্য নষ্ট হয়েছে।
জাহিদ এন্টারপ্রাইজ বা চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড সন্সের মতো প্রায় সব সিএনএফ এজেন্টেরই বিমানের স্বেচ্ছাচারিতায় প্রতিদিন পণ্য নষ্ট হচ্ছে বলে জানা যায় ঢাকা কাস্টমস হাউজ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে।
সূত্রটি জানায়, বিমানে আসা পণ্য সামগ্রীর জন্য তিনটি শেড আছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। অন্যদিকে বিমানের কর্মকর্তাদের ঘুষ না দেওয়া পর্যন্ত তারা পণ্য খোলা মাঠ থেকে সরিয়ে গোডাউনে নেয় না। ফলে প্রতিদিনই প্রচুর পণ্য নষ্ট ও চুরি হচ্ছে। আর বৃষ্টি হলে তো ৫ মিনিটেই কোটি টাকার পণ্য গচ্চা দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। বছরে গড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হচ্ছে বিমানের খামখেয়ালিতে।
নিয়ম অনুযায়ী ফ্লাইট পৌঁছানোর পর বিমানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার তত্ত্বাবধায়নে লোডারের মাধ্যমে আমদানিকৃত পণ্য নেয়া হয় গোডাউনে। কিন্তু বিমানের কর্মকর্তাদের ঘুষ না দিলে এখানে হয় না কিছু বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিএনএফ এজেন্ট।
তিনি বলেন, এখানে বিমানের যে কর্মকর্তাদের ডিউটি থাকে তারা সব সময় উপস্থিত থাকেন না। কখনো অফিস টাইমে তারা বাসায়ই অবস্থান করেন। আমাদের পণ্য যখন খোলা আকাশের নিচে পড়ে নষ্ট হয় তখন বাধ্য হয়ে লোডারদের দিয়ে নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে তা গোডাউনে নিয়ে যেতে হয়। এসব লোডারদের গড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা দিতে হয়।
অন্যদিকে যেসব লোডারদের দিয়ে পণ্য বাড়তি টাকা খরচ করে গোডাউনে নেওয়া হয় তাদের কাছ থেকে কমিশন নেন বিমানের কর্মকর্তারা। গড়ে প্রতিদিন ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত লোডারের কাছ থেকে কর্মকর্তারা কমিশন নেন। কার্গো হাউজে এমন লোডার আছে প্রায় দেড়শ’।
ঘুষ, দুর্নীতির কারণে পণ্য সামগ্রী নষ্ট হওয়ার সমস্যা সমাধানে আগস্ট মাসে ঢাকা কাস্টমস হাউজ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন লিখিত চিঠি দিয়েছে বিমানকে।
এসব বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করেছেন ঢাকা কাস্টমস উজ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বিমানবন্দর উপ-কমিটির চেয়ারম্যান এস এম এ খায়ের। তিনি বলেন, বিমানের কর্মকর্তাদের অবহেলায় আমাদের পণ্য সামগ্রী নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা একাধিকবার বিমানের সাথে কথা বলেছি। কিছুদিন আগে আমরা একটি লিখিত চিঠিও দিয়েছি। তাতে তারা কিছু ব্যবস্থা নিয়েছেন। কিন্তু সমস্যা পুরোপুরি সমাধান হয়নি। এখনও নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সিএনএফ এজেন্টদের।
তবে এসব বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ বিমান কর্তৃপক্ষ। এসব বিষয়ে বিমানের কার্গো শাখা জেনারেল ম্যানেজার আলী আহসান বাবুর সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।বাংলানিউজ
Discussion about this post