বিডি ল নিউজঃ
বাংলাদেশের বিবদমান দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এখন বিশ্ব দরবারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বক্তব্য-বিবৃতি উপস্থাপন করছে বিশ্বের শক্তিমান দেশ, সংস্থা ও জোটগুলোর সদর দপ্তর ও মিশনগুলোতে। চলছে লবিং, পাল্টা লবিং। বিএনপি দিচ্ছে তাদের কর্মীদের ওপর সরকারের চালানো নির্যাতনের ছবি ও তালিকা। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক সহিংসতার ছবি দেখানো হচ্ছে ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে। ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্কে গিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী। অন্যদিকে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করতে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক। এ ছাড়া দুই দল বা জোটের পৃথক লবিস্টরা ইউরোপ-আমেরিকায় কাজ করছেন আড়ালে থেকেই। জানা যায়, গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে থেকেই আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় এবং সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের পক্ষ থেকে জোর তৎপরতা চালানো হয়। শমসের মবিন চৌধুরীর নেতৃত্বে থাকা বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রক্ষার বিশেষ উইং ঢাকার মিশনগুলোর রাষ্ট্রদূত-হাইকমিশনারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কাজ করছিল। তারা যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস, ইউরোপের পার্লামেন্ট, ব্রিটিশ হাউস অব কমন্সের সঙ্গে যোগাযোগও রক্ষা করছিলেন। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ বিষয়ে আলোচনা করে রেজুলেশনও গৃহীত হয়েছে বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর এসব পার্লামেন্টে। গত বছরের নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে তৎপরতার সঙ্গে কাজ করে সরকার। এক বছর মেয়াদে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমর্থনও আদায় করে। কিন্তু সর্বশেষ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ এবং সহিংসতায় একের পর এক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সমঝোতার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে আন্তর্জাতিক মহল। বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে গিয়ে বিএনপির মত জানানো শমসের মবিন গ্রেফতার হন। আকস্মিকভাবে রিয়াজ রহমান গুলিবিদ্ধ হন। অবশ্য এতে কিছুটা থমকে গেলেও থেমে থাকেনি বিএনপির আন্তর্জাতিক লবিং। এখন তো বিএনপি-সমর্থক এক সাংবাদিককে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উত্থাপনে পাঠানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে অ্যাক্রিডিটেশন প্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ প্রসঙ্গে। ঢাকায় নিয়মিত কূটনৈতিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক কূটনীতিক সাবিহ উদ্দিন আহমেদ। বিএনপি-সমর্থক হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে শত নাগরিকের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনকে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকেও চলছে নানা তৎপরতা। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ঢাকার কূটনীতিকরা দেখেছেন বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতায় ঘটা নৃশংসতার চিত্র। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সহিংসতার ছবি নিয়ে তৈরি করা ডিডিওর সিডি পাঠানো হয়েছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের দপ্তরে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারের অবস্থান নিয়মিত জানানো হচ্ছে ঢাকার কূটনীতিকদের। সমঝোতার জন্য দুই নেত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন বান কি মুন। দায়িত্ব দিয়েছেন অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে। শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন গিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী। বৈঠক করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে। মহাসচিব জানতে চেয়েছেন রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসানে সুনির্দিষ্ট উপায় সম্পর্কে। জন কেরিও সহিংসতা বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চান এবং বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে গণতন্ত্রে ফিরতে সহায়তা করতে আগ্রহী।
Discussion about this post