বিডি ল নিউজঃ তিন মাস কার্যালয়ে অবস্থান করে ঘটনাবহুল সময় পার করে বাসায় ফিরে বিশ্রাম নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রোববার সকালে কার্যালয় থেকে আদালতে গিয়ে জিয়া ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় জামিন নেন তিনি, এরপর তিনি সরাসরি যান গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কে তার বাসা ‘ফিরোজা’য়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসায় কর্তব্যরত কর্মকর্তারা জানান, বেলা সোয়া ১২টায় বাসায় ঢোকার পর প্রথমে ড্রইং রুমে বসে সেজ বোন সেলিনা ইসলামসহ কয়েকজন আত্মীয়কে নিয়ে ফলের রস পান করেন খালেদা জিয়া। কিছুক্ষণ কথা-বার্তা বলার পর চলে যান শোবার ঘরে। সেখানেই বিশ্রাম নিচ্ছেন তিনি।
খালেদার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা ওই বাড়িতে আগে থেকে ছিলেন, ছিলেন কয়েকজন আত্মীয়-স্বজনও। তারা ওই বাড়িতেই খাবার দুপুরের খাবার খেয়েছেন। খালেদা জিয়া সাধারণত দুপুরে ভারী খাবার খান না।
কার্যালয়ে তিন মাস খালেদার সঙ্গে থাকা বিএনপি নেত্রী সেলিমা রহমান, শিরিন সুলতানা, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল মজিদও ওই বাসায় দুপুরের খাবার খেয়েছেন।
খালেদা জিয়ার ফেরার খবরে তিন মাস পর সকালে বাজার করে দুপুরের খাবার রান্না করা হয়। ভাত, শাক ভাজা, মাছ রান্না হয়েছিল বলে বাসার কর্মকর্তারা জানান।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেমে লাগাতার অবরোধের ডাক দিয়ে গত ৩ জানুয়ারি থেকে গুলশান ৮৬ নম্বরের কার্যালয়ে ছিলেন খালেদা জিয়া। প্রথমে অবরুদ্ধ হলেও পরে পুলিশ ব্যারিকেড সরলেও কার্যালয় ছাড়েননি তিনি।
নিজের বাসায় খালেদা জিয়া
এর মধ্যে দুই মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর তার খড়গ নিয়েই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে কার্যালয়ে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে তিন মাসের লাগাতার অবরোধ এবং প্রায় লাগাতার হরতালে সহিংসতায় শতাধিক মানুষ মারা গেছে।
ওই দাবি মানতে নারাজ আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপি চেয়ারপাসনের কার্যালয় ছাড়ার পর তার তিন মাসের আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
আন্দোলনে অটল থাকার ঘোষণা দেওয়া খালেদা জিয়ার বের হওয়ার দিন কর্মসূচি হিসেবে বিএনপি জোটের অবরোধ থাকলেও হরতাল ছিল না। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নেমে ২০ দল ইতোমধ্যে তাদের কর্মসূচি শিথিল করেছে।
রোববার সকালে পৌনে ১০টার দিকে কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সরাসরি বকশীবাজারের আদালতে যান খালেদা। কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ভোর ৬টায় ঘুম থেকে ওঠেন চেয়ারপারসন।
কার্যালয় থেকে বের হচ্ছেন খালেদা জিয়া
আদালতে খালেদা জিয়া
কার্যালয়ের দোতলা থেকে নামার সময় খালেদা নিজের চেম্বারের বাইরে অন্যান্য রুমের দিকে একপলক তাকান। এরপর সেলিমা রহমান ও শিরীন সুলতানাকে নিয়ে নিজের গাড়িতে উঠেন।
জিয়া ট্রাস্টের দুই মামলার বিচার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ঢাকার একটি আদালতের বিশেষ এজলাস বসিয়ে হচ্ছে। বাসা থেকে বেরিয়ে সরাসরি সেদিকে যায় খালেদার গাড়িবহর।
জামিন নিয়ে বেরিয়ে গুলশানে বাসার উদ্দেশে যাত্রা করেন খালেদা জিয়া। বেলা ১২টা ১৮ মিনিটে গুলশান ৭৯ সড়কের ১ নম্বর ‘ফিরোজা’ ভবনের সামনে এসে পৌঁছায় তার গাড়িবহর।
কার্যালয়ে অবস্থান নেওয়া নেতারা আদালত থেকে বনানীতে ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারত ও নয়া পল্টনের কার্যালয় যাওয়ার পরামর্শ দিলেও তিনি তা নাকচ করে দেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন তার একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা।
শামীম এস্কান্দার ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা আগে থেকেই বাসায় ছিলেন খালেদার অপেক্ষায়। সকালে খালেদা জিয়া আদালতের উদ্দেশে যাত্রা করার পরপরই গুলশানের কার্যালয় থেকে তার কাপড়-চোপড়সহ অন্যান্য জিনিসপত্র বোঝাই স্যুটকেস ও ব্যাগ নিয়ে বাসায় চলে যান কানিজ ফাতেমা।
খালেদা জিয়ার ফেরা উপলক্ষে তার বাসা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মীরা বাসায় অবস্থান নেন আগের মতোই। বাসায় তোলা হয় বিএনপির পতাকাও।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে তিন মাস ধরে কার্যালয়ে সেলিমা রহমান, শিরীন সুলতানাসহ বিএনপি নেতা আবদুল কাইয়ুম, প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ছিলেন।
নেতা-কর্মী-কর্মকর্তা-নিরাপত্তা রক্ষী মিলিয়ে অর্ধশত জন ছিলেন সেখানে। খালেদা বের হওয়ার পর তারাও বেরিয়ে আসেন।
কার্যালয়ে থাকা একজন বেরিয়ে আসার পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওয়ারেন্ট জারির (তল্লাশি পরোয়ানা) পর রাতে ঘুমাতে পারতাম না। মনে হত, এই বুঝি পুলিশ কার্যালয়ে গেইট দিয়ে ঢুকছে। সে এক ভয়ের স্মৃতি।”
সূত্রঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
Discussion about this post