নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আইন কার্যকর না হওয়ায় চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘাটতির আশঙ্কা করছে সরকার। এই ঘাটতি মোকাবেলায় কর ছাড়া রাজস্ব এবং এনবিআর বহির্ভূত কর আদায় বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হচ্ছে।
কর আদায় বাড়ানোর উদ্যোগ হিসেবে রেলের ভাড়া ১৫ শতাংশ বাড়ানো, যানবাহন রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ‘যানবাহন কর’ খাতে রাজস্ব বৃদ্ধির উদ্যোগ, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত রেশন সামগ্রীর দাম বাড়ানো এবং বিয়ের রেজিস্ট্রেশন ফি বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘কর ছাড়া রাজস্ব এবং এনবিআর বহির্ভূত কর বৃদ্ধি’ সংক্রান্ত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সদ্য বিদায়ী অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন।
সভায় আইন ও বিচার বিভাগ থেকে আগত প্রতিনিধি জানান, এ বিভাগের আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে দলিল রেজিস্ট্রেশন বাবদ আয়। চলতি অর্থবছরে এ খাতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ পর্যায়ে অন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সভাপতি বিবাহের রেজিস্ট্রেশন খাতে আয় বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রতিটি বিয়ে রেজিস্ট্রেশন থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ জানান তিনি। এ বিষয়ে একটি আদেশ জারি করার জন্যও বলা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমানে বিবাহের রেজিস্ট্রেশন খাতে যা আয় হয় তা সরকারি কোষাগারেই জমা হয়। তবে রেজিস্ট্রেশন ফি বাড়বে কি না, তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। কারণ এটা জাতীয় নীতিনির্ধারণী বিষয়।
আইন ও বিচার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মুসলিম বিয়ের ক্ষেত্রে একজন বিয়ে রেজিস্ট্রার দেনমোহরের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের ফি নির্ধারণ করে থাকেন।
ধার্য করা দেনমোহরের প্রতি হাজার বা এর অংশবিশেষের জন্য সাড়ে ১২ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি। তবে রেজিস্ট্রেশন ফির পরিমাণ ২০০ টাকার কম এবং চার হাজার টাকার বেশি হবে না।
সরকার মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা- ২০০৯, ২০১১ সালের ১০ এপ্রিল সংশোধন করে। সংশোধিত আইনের ১০ ধারা মোতাবেক নিকাহ রেজিস্টার বিবাহ রেজিস্ট্রিকরণের জন্য চার লাখ টাকা পর্যন্ত দেনমোহরের ক্ষেত্রে এক হাজার বা উহার অংশ বিশেষের জন্য সাড়ে ১২ টাকা হারে ফি আদায় করতে পারবেন।
দেনমোহর চার লাখ টাকার অধিক হলে পরবর্তী প্রতি লাখে ১০০ টাকা হারে আদায় করবেন। কিন্তু দেনমোহরের পরিমাণ যাই হোক না কেন সর্বনিম্ন ফি ২০০ টাকার কম হবে না।
রেজিস্ট্রেশন ফি পরিশোধের দায়িত্ব বরপক্ষের। সরকার সময়ে সময়ে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই ফি পরিবর্তন ও ধার্য করে থাকে। রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিলে নিকাহ রেজিস্ট্রার একটি প্রাপ্তিরশিদ দেবেন। মুসলিম বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের পর নিকাহ রেজিস্ট্রার বাধ্যতামূলকভাবে বর ও কনেপক্ষকে বিয়ের কাবিননামার সত্যায়িত কপি দেবেন।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়। বাজেটে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে মোট আয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৯৩ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা এবং অনুদানসহ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ছয় হাজার ৭৭১ কোটি টাকা। তবে আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল সেটা ছিল নতুন ভ্যাট কার্যকর হবে ধরে। নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করতে না পারায় রাজস্ব আদায় ২০ হাজার কোটি টাকা কম হবে বলে ধারণা করছে সরকার।
-জাগোনিউজ
Discussion about this post