বিডি ল নিউজঃ
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় ও এর আশপাশের এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গত তিন দিনে অন্তত ২০ জন নেতা-কর্মীকে গুলশান কার্যালয়ের সামনে থেকে আটক করা হয়। প্রায় ২০ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলেও চার দিন ধরে গুলশান অফিসসহ আশপাশের এলাকায় এখনো বিচ্ছিন্ন মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ডিশ লাইন ও ফ্যাক্স সংযোগ। সাংবাদিকসহ নেতা-কর্মীদের কাউকেই গতকাল কার্যালয়ের ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এদিকে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের সঙ্গে আগামীকাল বুধবার ভোর ৬টা থেকে ফের ৭২ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা দিতে যাচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গত রবিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া ৭২ ঘণ্টার হরতাল শেষ হবে বুধবার ভোর ৬টায়। ওইদিন ভোর ৬টা থেকে ফের শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত টানা হরতাল দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে ২০ দলে। আজ যে কোনো সময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ এই কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন। দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, গুলশান কার্যালয়ে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ডিশ ক্যাবল ও ফ্যাক্স সংযোগ না দেওয়া হলে অবিরাম অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি চলবে। সূত্র জানায়, নতুন নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির দাবি আদায়ে অবরোধের সঙ্গে আগামী ১৫ দিন টানা হরতাল কর্মসূচিতে থাকতে চায় ২০ দল। শুক্র ও শনিবারও হরতাল কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। উদ্দেশ্য, এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন করে সরকারকে চাপে রাখা। এতে শিক্ষার্থী বা অভিভাবকরা সরকারের ওপরই ক্ষুব্ধ হবে। নতুন নির্বাচনের দাবি আদায়ও এতে সহজ হবে বলেও মনে করেন বিএনপি নেতারা। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, আগামী ১৫ দিন হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে চাপে রাখতে পারলেই নতুন নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে। তাদের আশঙ্কা- কর্মসূচি থেকে সরে গেলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা চরম বিপদে পড়বেন। গুম, খুন বা অপহরণের মতো ঘটনার শিকার হতে পারেন নেতা-কর্মীরা। তা ছাড়া তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বেগম খালেদা জিয়াও একটি যৌক্তিক পর্যায়ে না যাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। গতকাল সন্ধ্যায় গুলশান কার্যালয় এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ৮৬ নম্বর রোডে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে ৪০ দিনের টানা দোয়া মাহফিলে অংশ নিতে কয়েকজন আলেম-ওলামাকে কার্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়। ৮৬ নম্বর রোডের দুই পাশের মাথায় ও খালেদা জিয়ার অফিসের সামনে সাদা পোশাকে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান করছে। গতকাল সকালে মহিলা দলের এক নারী সদস্য কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে তাকে আটক করা হয়। দিনভর কার্যালয়ের অফিস স্টাফ ছাড়া কাউকেই ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি সাংবাদিকদেরও ভিতরে যেতে দেওয়া হয়নি। গত দুই দিনে ২০ জন নেতা-কর্মীকে গুলশান কার্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে গত রবিবার সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালুকেও গ্রেফতার করা হয়। আটকের পর অবশ্য মহিলা দলের কয়েকজন কর্মী ও নারী আইনজীবীদের গুলশান থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিএনপির আরেকটি সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর আত্মার মাগফিরাত কামনায় আগামীকাল বুধবার সারা দেশে মসজিদে মসজিদে মিলাদ ও বিশেষ দোয়া মাহফিল কর্মসূচি দেওয়া হবে। ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে গুলশান আজাদ মসজিদে এ কর্মসূচি পালিত হতে পারে। তবে এ কর্মসূচি চলাকালেও হরতাল-অবরোধ চলবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, সরকারকে বিগত একটি বছর ছাড় দেওয়া হয়েছে। জেল-জুলুম, অত্যাচার অনেক সহ্য করা হয়েছে। সরকারকে আর ছাড় নয়। এখন আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। হরতাল-অবরোধের মতো চরম কর্মসূচিতে যাওয়া ছাড়া আমাদের সামনে বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। সরকার দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মসূচি চলতেই থাকবে বলেও জানান তিনি।
সূত্রঃ বাঙ্গলাদেশ প্রতিদিন ।
Discussion about this post