বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ঈদুল ফিতরের জামাতে নামাজ আদায় করেছেন লক্ষ লক্ষ মুসল্লী। টিপ টিপ বৃষ্টিতে দুর্ভোগের সৃষ্টি হলেও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য্য আর উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মুসলমান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করছেন বন্দরনগরীর মানুষ।
শনিবার (১৮ জুলাই) সকালে ঈদের প্রথম জামাতে নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ ময়দানে হাজার হাজার মুসল্লীর সমাগম ঘটে। ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য এক কাতারে দাঁড়ান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিসহ নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সাধারণ মানুষ। প্রথম জামাতে ইমামতি করেন জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের সিনিয়ল ইমাম আল্লামা আলহাজ্ব মাওলানা নূর মোহাম্মদ সিদ্দিকী।
জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানে দু’টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রায় লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে। দ্বিতীয় জামাতে ইমামিত করেন মসজিদের ইমাম মুফতি আহমেদুল হক।
সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে নগরীতে এবার ১৫৫ টি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্খান মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান, চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মো.নাসির উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, নগর বিএনপির সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান ও সাধারণ সম্পাদক ডা.শাহাদাৎ হোসেন, সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, জাতীয় পার্টির নেতা সোলায়মান আলম শেঠ।
প্রথম জামাতে ঈদের নামাজ শেষে ইমাম দেশের মানুষের সুখ ও শান্তি কামনায় আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানান। মোনাজাতে ইমাম দেশ ও সীমান্ত এবং মানুষের জানমাল হেফাজতের জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানান।
মোনাজাতে ইমাম বলেন, আল্লাহ, আপনি আমাদের এবাদত বন্দেগি কবুল করুন। এই জামাদের কেউ যেন আপনার রহমত থেকে বঞ্চিত না হয়। বিশ্বের সকল মুসলমানের প্রতি আপনি রহমত নাজিল করুন।
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমাদের মধ্যে অনেকে মা-বাবাকে হারিয়েছেন। আমাদের মা-বাবার কবরকে আপনি জান্নাতের বাগানে পরিণত করুন। আমাদের মা-বাবার প্রতি রহমত নাজিল করুন। আমাদের মা-বাবার সব গুণাহ আপনি মাফ করে দিন।
সিনিয়র ইমার নূর মোহাম্মদ কান্নাভেজা কণ্ঠে আল্লাহর দরবারে গুণাহ মাফ করার ফরিয়াদ জানালে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মুসল্লীরা। এসময় ইমামের সামনের চেয়ারে বসা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে কাঁদতে দেখা যায়।
হাজার হাজার মুসল্লীর সমস্বরে আমিন, আমিন ধ্বনি আর কান্নার রোলে বদলে যায় ঈদগাহ ময়দানের পরিবেশ।
এদিকে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাজনীতিক-মন্ত্রী এবং সাধারণ লোকজন পরস্পরের সঙ্গে করমর্দন করেন।
এছাড়া বৃষ্টির মধ্যেও চিরাচরিত ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বয়সী লোকজন নেমে এসেছে রাস্তায়। পরিচিত, অপরিচিত, বিভিন্ন বয়সী লোকজন পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি, করমর্দন, হাসি, ঠাট্টায় মেতে উঠছেন।
নগরীর বিভিন্ন স্থানে তরুণ, যুবকরা জড়ো হয়ে গান বাজিয়ে কিংবা হৈ, হুল্লোড় করে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার প্রস্তুতি নিয়েছেন।
ঈদ উপলক্ষে নগর ভবন সহ নগরীর বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী ভবনে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, হাসপাতাল, এতিমখানা এবং জেলা প্রশাসনের সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত চট্টগ্রামের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে।
Discussion about this post