নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালার বিষয়ে সুরাহার জন্য প্রধান বিচারপতির বৈঠকের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়কে জানাবেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর এ বিষয়ে আগামী ২ আগস্ট (বুধবার) বৈঠক হতে পারে বলেও জানান তিনি।
রোববার বেলা ২টার দিকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এমন কথা জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
এর আগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, রবি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বেলা ২টা থেকে আমি এবং আপিল বিভাগের বিচারপতিরা রাত ১২টা পর্যন্ত আপনাদের (সরকার) সময় দেব। বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালা নিয়ে আর রশি টানাটানি নয়। আইনমন্ত্রীসহ সরকারের যেকোনো এক্সপার্ট আসবেন, বৈঠকে বসব। আপনিও থাকবেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালার বিষয়ে কয়েকদিন আগে আইনমন্ত্রী প্রধান বিচারপতির কাছে একটা খসড়া দিয়েছেন। আজ এ বিষয়ক মাসদার হোসেন মামলা তালিকাভুক্ত ছিল। প্রধান বিচারপতি ওই খসড়ার কয়েকটি ধারা সম্পর্কে ওনাদের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে আমাকে আদালত জানিয়েছেন, আপিল বিভাগের বিচারপতিরা আইনমন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের, যাদের সরকার পাঠাতে চান তাদের সঙ্গে বসতে চান। এ ব্যাপারটা সুরাহার জন্য। এ ব্যাপারে আমি মন্ত্রণালয়কে জানাব, বৈঠকের ব্যাপারে। ওনাদের মতামত কি সেটা জানানোর জন্য। আগামী বুধবার ওনারা (আপিল বিভাগ) বসতে চান।
রোববার সকালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির বেঞ্চ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হলো। উনি খসড়া দিয়ে গেলেন। আমি তো খুশি হয়ে গেলাম। যদিও খুলে দেখিনি। কিন্তু এটা কী! এখানে বলা হলো ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ’। এটার মানে কী? সব আইনে ব্যাখ্যা থাকে। কিন্তু এখানে কোনো ব্যাখ্যা নেই। পরে আদালত আদেশের জন্য ৬ আগস্ট নির্ধারণ করেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে খসড়াটি হস্তান্তর করেন আইনমন্ত্রী। পরে আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, বিধিমালার খসড়া প্রধান বিচারপতির কাছে হস্তান্তর করেছি। এটি এখন তিনি দেখবেন। পরে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর এটি গেজেট আকারে প্রকাশ হবে।
গত ২৩ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন মঞ্জুর করে এ গেজেট প্রকাশে আরও এক সপ্তাহ সময় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর আগে গত ১৬ জুলাই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এ সংক্রান্ত গেজেট শিগগিরই প্রস্তুত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আইনমন্ত্রী।
এরও আগে গত ২ জুলাই এক অনুষ্ঠান শেষে ১৫ জুলাইয়ের আগেই প্রকাশিত হবে বলে সাংবাদিকদের কাছে আশা প্রকাশ করেছিলেন আইনমন্ত্রী। ওইদিনই সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এ গেজেট প্রকাশে রাষ্ট্রপক্ষের করা দুই সপ্তাহের সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছিলেন, ‘এটিই লাস্ট চান্স’।
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেনের মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথককরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। আপিল বিভাগের এ নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।
গত বছরের ২৮ আগস্ট শুনানিকালে আপিল বিভাগ খসড়ার বিষয়ে বলেন, শৃঙ্খলাবিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিলো ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ। যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী।
এরপরই সুপ্রিম কোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান। পরবর্তীতে গেজেট প্রকাশে আরও কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে নেন রাষ্ট্রপক্ষ।
Discussion about this post