সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যানজট নিরসনে সরকার গাড়ির ব্যবহার সীমিত করার প্রস্তাব রেখে একটি আইন করার চিন্তা-ভাবনা করছে।
পরিবার প্রতি গাড়ির সংখ্যা নির্ধারণের বিষয়টি প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ায় সংযোজন করা হবে। আইনটি হলে যানজট নিরসনে রাজধানীর রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়িও নিয়ন্ত্রণে আসবে।
রোববার (১০ এপ্রিল) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৬ এর খসড়া চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে পরিবহনখাত সংশ্লিষ্ট সকল স্টেক-হোল্ডারদের নিয়ে দিনব্যাপী জাতীয় কর্মশালা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
কর্মশালায় পরিবার প্রতি গাড়ির সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়ার জন্য সড়ক পরিবহন আইন-২০১৬ এর খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করে প্রস্তাবসমূহ চূড়ান্ত করা হবে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম এর সভাপতিত্ব করেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দেয়া সড়ক দুর্ঘটনা বিষয়ে যে তথ্য দিয়েছে তার সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেছেন, ওই সংস্থা বলেছে প্রতিদিন বাংলাদেশে ৫৯ জন হিসেবে বছরে ২১ হাজার ২৪০ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। এ তথ্য সঠিক নয়। মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশ করার কঠোর সমালোচনা করেন মন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, ‘গতকালও ( ৯ এপ্রিল) সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটটনায় মাত্র দুই জন মানুষ মারা গেছে। সেখানে ৫৯ জন হল কী করে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে আতঙ্ক করা থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমি সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট কমাতে চাই। পরিবহন সেক্টরে একটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চাই। আইন করে কিছুই হবে না, যদি আমরা যথাযথ আইন মান্য না করি। মন্ত্রীর খবরদারির জন আইন চাই না। জনগণের জন্য আইন চাই।’
নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘আইন মানুষের জন্য। মালিক-শ্রমিক থেকে শুরু কওে সকলের জন্য এই আইন।’ এই আইনে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও নেপালের মধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য এই আইন কার্যকরী হয় সেদিকে নজর রাখার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
এ সময় নিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস খান, সাংবাদিক কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, শ্রমিক নেতা সোহেল তালুকদার, বাস মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বক্তব্য দেন।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ‘সড়ক পরিবহন ও ট্রাফিক আইন’ নামে খসড়ায় ২২টি অধ্যায় ও ৩৭২টি ধারা ছিল। ২০১৩ সালে গঠিত কমিটি তা কমিয়ে ১৫ অধ্যায় ও ২৪২টি ধারায় চূড়ান্ত করে। সর্বশেষ খসড়ায় আইনটিকে ১৩টি অধ্যায় ও ৬৩ ধারায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৯৩৯ সালের ভারতীয় মোটরযান আইনে কিছুটা পরিবর্তন এনে প্রণয়ন করা হয়েছিল দ্য মোটর ভেহিকলস অর্ডিন্যান্স-১৯৮৩। এর অধীনেই দেশের পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণ হয়ে আসছে। বর্তমানে এ খাতে অনেক পরিবর্তন এসেছে, যা বিদ্যমান আইনে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন পরিবহন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। বর্তমানে অনেক পরিবার আছে, যারা দুইয়ের অধিক গাড়ির মালিক। আইনটি পাসের পর বিধিমালা করে পরিবারভিত্তিক গাড়ির সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
এ ছাড়া নতুন এই আইনে নানা বিধান সংযোজনের পাশাপাশি পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণে বিআরটিএর ক্ষমতা বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়েছে। চালকের পাশাপাশি কন্ডাক্টরদের লাইসেন্স নেয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
এ ছাড়াও প্রতিটি গাড়ি ও যাত্রীর বিমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে কানে এয়ারপ্লাগ লাগিয়ে বা সেলফোনে কথা বলা অবস্থায় গাড়ি চালানোর নিষেধাজ্ঞা-সংক্রান্ত বিধান বাদ দেয়া হয়েছে। অন্যান্য অপরাধের শাস্তির বিধান শিথিল করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত আইনের আওতায় চালকদের লাইসেন্সের বিপরীতে পয়েন্টের ব্যবস্থা রাখা হবে। আইন ভঙ্গ করলে শাস্তির পাশাপাশি লাইসেন্সের কিছু পয়েন্ট কাটা হবে। এভাবে পুরো পয়েন্ট কাটা হয়ে গেলে চালকের লাইসেন্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। তখন তিনি আর কোনো ধরনের যানবাহন চালাতে পারবেন না।
Discussion about this post