সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জোর লড়াইয়ের তাগিদ এসেছে ব্রিকস সম্মেলনে; এই সম্মেলনের একটি পর্বে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এক্ষেত্রে সবাইকে একাট্টা হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গোয়ায় এবারের ব্রিকস সম্মেলনের মধ্যে বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর নেতাদেরও অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেয় নয়া দিল্লি।
ভারত, ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার জোট ব্রিকস। এবার সম্মেলনের সভাপতি ভারত বৈঠকের শেষ দিন রোববার প্রথমবারের মতো ব্রিকস ও বিমসটেক আউটরিচ সম্মেলনের আয়োজন করে।
বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার বিমসটেকের সদস্য। সেই সঙ্গে সার্কভুক্ত আরও দুই দেশ আফগানিস্তান ও মালদ্বীপকেও আউটরিচ সম্মেলনে নিয়ে আসে ভারত।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের ব্রিকস সম্মেলন যতটা না ছিল বাণিজ্যিক, তার চেয়ে বেশি ছিল রাজনৈতিক। সেই সঙ্গে মোদী নিজেকে জাহির করে আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়টিকেই সামনে এনেছেন।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান বাদে আর সবগুলো দেশের নেতারাই রোববার এক হন গোয়ায়।
এবছর পাকিস্তানে হওয়ার কথা ছিল সার্ক শীর্ষ সম্মেলন। কিন্তু কাশ্মির জঙ্গি হামলা এবং পাল্টা অভিযান নিয়ে নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদের উত্তেজনার মধ্যে এই সম্মেলন পণ্ড হয়ে গেছে।
তার মধ্যে বিমসটেক দেশগুলোর নেতাদের ব্রিকসের নেতাদের সঙ্গে এক করে মোদী ইসলামাবাদকে একঘরে করার চেষ্টা চালালেন বলে পাকিস্তানের দৈনিক ডন সরাসরিই বলেছে।
সম্মেলনে মোদীও উরিতে সেনা ঘাঁটিতে হামলার পর পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ঢুকে জঙ্গি ঘাঁটিতে অভিযানের যৌক্তিকতা তুলে ধরে ব্রিকসের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালিয়েছেন এবং তাতে সফল হয়েছেন বলে মনে করছে ভারতের সংবাদ মাধ্যম।
এই অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের জন্য সন্ত্রাস একটি বড় হুমকি উল্লেখ করে পাকিস্তানকেই এজন্য দায়ী করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
“দুঃখজনকভাবে, ভারতের একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রই সন্ত্রাসের জন্মদাতা,” পাকিস্তানের দিকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য মোদীর।
পাকিস্তানের সার্ক সম্মেলন বয়কটের পেছনে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে ইসলামাবাদের প্রতিক্রিয়াকে কারণ দেখানো হয়েছিল ঢাকার পক্ষ থেকে।
বিমসটেক রিট্রিটে বক্তব্যে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গঠনের পরিকল্পনা নেওয়ার তাগিদ দেওয়ার সঙ্গে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলায় বিক্ষত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, “যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদকে পরাজিত করতে আমাদের এক হতে হবে। বাংলাদেশের আমরা সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছি।
“সন্ত্রাসের দীক্ষাদানকারী, মদদদাতা, পরিকল্পনাকারী এবং অর্থদাতা ও অস্ত্র সরবরাহকারীদের ও প্রশিক্ষকদের খুঁজে বের করতে হবে আমাদের।”
সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ নির্মূল করতে বিসমটেকের মধ্যে থেকে সহযোগিতা জোরদার করা যাবে বলেও দৃঢ় আশার কথা জানান শেখ হাসিনা।
বিমসটেক রিট্রিটের পর ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সম্মেলনেও শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় আবার এক হওয়ার আহ্বান জানান।
“সন্ত্রাস ও চরমপন্থা নির্মূলে আমাদের সকলের হাতকে একত্রিত করতে হবে।”
আউটরিচ সম্মেলনের এই আলোচনার মতো ব্রিকসের সম্মেলনের যৌথ ঘোষণায়ও সন্ত্রাসবাদকে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবে মন্তব্য করা হয়।
ভারতের উপর জঙ্গি হামলার নিন্দা একযোগে জানানো হলেও যৌথ ঘোষণায় পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
রাশিয়াসহ অন্য দেশগুলোর সমর্থন মোদী আদায় করতে পেরেছেন বলে ভারতীয় গণমাধ্যম দাবি করলেও রয়টার্সের প্রতিবেদনে পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের মিত্র চীনকে নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়।
মূল সম্মেলনের আগের দিন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে একান্ত বৈঠকও করেছিলেন মোদী। তবে চীনের প্রেসিডেন্ট গুরুত্ব দিতে চেয়েছেন বাণিজ্যকেই।
লন্ডনের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিস ইনস্টিটিউটের গবেষক শশাঙ্ক জোশি রয়টার্সকে বলেন, “এখন পর্যন্ত আমরা এমন কোনো ইঙ্গিত পাইনি যে পাকিস্তানের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন থেকে চীন সরে যাচ্ছে।”
এই অবস্থায় পাকিস্তানকে একঘরে করতে সার্ককে পাশ কাটিয়ে বিমসটেককে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ‘মোদী কূটনীতিতে’ সামনে আর কী কী আসে, তার অপেক্ষায় থাকতে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
Discussion about this post