আজ বুধবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চের কাজী বশির মিলনায়তনে জাতীয় শ্রমিক লীগের ২১ আগস্টের আলোচনা সভায় ‘দেশ, দল ও শেখ হাসিনার স্বার্থে’ নেতা-কর্মীদের ‘ভাগ-বাঁটোয়ারা’ ত্যাগের অনুরোধ করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তাঁর মতে, সামান্য কিছু পাওয়ার জন্যই সংগঠনের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যদি সবকিছু হেলায় হেলায় নিজেদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করি, নিজেদের মধ্যে বিভক্ত সৃষ্টি করি; তাহলে আমরা কিন্তু দুর্বল হয়ে পড়ব। তাহলে তারা আবার আঘাত করবে। আমি সকল আওয়ামী পরিবারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি-ঐক্য গড়ে তুলুন। ক্ষমতায় আছেন দেখে এই সামান্য দু-চার পয়সার ভাগ-বাঁটোয়ারা ত্যাগ করতে পারেন না? দেশের বৃহত্তর স্বার্থে, দলের বৃহত্তর স্বার্থে, জননেত্রীর স্বার্থে। এই সামান্য কিছু পাবেন বলে…. পাওয়ার চেষ্টার মধ্যে সংগঠনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এ জন্য আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকুন। ইনশা আল্লাহ জননেত্রীর কিছুই হবে না, আওয়ামী লীগের কিছুই হবে না।’
|সৈয়দ আশরাফ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘যদি আপনারা ঐক্যবদ্ধ না হন তাহলে বাংলাদেশে ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। যড়যন্ত্রকারীরা, খালেদা জিয়ারা কিন্তু এক সেকেন্ডের জন্যও বসে থাকে না। তারা সব সময় সুযোগ সৃষ্টির প্রচেষ্টা করে। আমাদের কাজ হবে, যতবারই তারা চেষ্টা করবে, আমরা তাদের কায়েমি হতে দেব না। আমি আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী পরিবারের সবার প্রতি পরিপূর্ণ ঐক্যের ডাক দিচ্ছি।’
১৫ ও ২১ আগস্টের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে আশরাফ বলেন, ‘১৫ আগস্টে লক্ষ্য ছিল বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে হত্যা করা। আর ২১ আগস্টে টার্গেট ছিল ভিন্ন। সেখানে নেত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে এক হামলায় শেষ করে দেওয়ার প্রয়াস ছিল। শেখ হাসিনার রক্ষা হয়। আর আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতা-কর্মী নিহত হন। শত শত আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী পরিবারের নেতা-কর্মী আহত হন।’
সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় শিখেছি, কীভাবে গ্রেনেড নাড়াচাড়া করতে হয়। কীভাবে পিন খুলতে হয়। এটা করতে তিন মাস ট্রেনিং করতে হয়। যাঁরা ২১ আগস্ট গ্রেনেড ছুড়েছে তারা নিশ্চয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিল এবং পরিকল্পনা ছিল আমাদের সকল জাতীয় নেতৃত্বকে সেদিন শেষ করে দেওয়া। আল্লাহর রহমতে নেত্রী বেঁচে গেলেন। কিন্তু আমাদের দলের ২২ জনকে হত্যা করা হলো। একটা দলের এত শোক কি বইবার শক্তি আছে? একদিকে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার; আরেক দিকে আইভি রহমানসহ ২২ জন। এই এতগুলো মৃত্যুর বোঝা প্রতিদিন জননেত্রীকে বইতে হচ্ছে।’
আশরাফ বলেন, এত আত্মত্যাগের পরও জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বারবার হত্যা করার ষড়যন্ত্র করা হয়। এখন পর্যন্ত তিনি রেহাই পেয়েছেন। কিন্তু ষড়যন্ত্র থেমে নাই। প্রতিদিনই বিভিন্ন কৌশলে জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর হামলা করার পরিকল্পনা করা হয়। এখানে বিএনপি একটি ষড়যন্ত্রকারীদের দল, খুনিদের দল। সেই দল সব সময় পরিকল্পনা করে কীভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতৃত্বকে ধ্বংস করা যায়। তিনি বলেন, ‘আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, সজাগ থাকতে হবে। যদি আমরা সজাগ না থাকি, প্রস্তুত না থাকি তাহলে এ ধরনের ঘটনা আবারও ঘটতে পারে। আমরা আজকে ক্ষমতায়, ঠিকই আজকে আমরা ক্ষমতায়…কিন্তু আমাদের গার্ড শক্ত হতে হবে। ক্ষমতায় আছি দেখে যদি আপনারা মনে করেন আমরা নিরাপদ। না না, তা না। সব সময় আমাদের সজাগ থাকতে হবে।’
শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।-প্রথম আলো
Discussion about this post