বিডি ল নিউজ, বিশেষ প্রতিবেদক; এম.আর.ওয়াজেদ চৌধুরী (রায়হান): দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদের সন্ধান পাওয়া গেছে। ভারতের মেঘালয়ের শিলং এর গলফ গ্রিন এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ইতস্তত ঘোরাফেরার সময় স্থানীয় লোকজন টইলরত পুলিশকে খবর দিলে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের পর মানসিক রোগী মনে করে চিকিৎসার জন্য মিমহ্যানস হাসপাতাল ও পরে শিলং সিভিল হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে। পরবর্তীতে সঠিক পরিচয় পাওয়ার পর মেঘালয় পুলিশ পাসপোর্ট ছাড়া ভারতে প্রবেশ করায় তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ আইনে মামলাও করেছে। মেঘালয় পুলিশ বলছে, তারা বিষয়টি তদন্ত করছে এবং সুস্থ হলে আদালতের সম্মুখীন করা হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে বাংলাদেশের সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমদের বিচার হলে, তার শাস্তি কি হতে পারে? যেহেতু ভারতের অনেক ভেতরে তাকে ধরা হয়েছে তাই ভারতীয় আইনে বিচার করে তারপর ফেরত পাঠানো হতে পারে। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতে যে বিদ্যমান আইন আছে, ওই আইনের আওতায় সালাহ উদ্দিনের বিচার হবে। এই ব্যাপারে ভারতে বলবৎ আইন ফরেন্স এ্যাক্ট ১৯৪৬ (সংশোধিত ২০০৪) এবং পাসপোর্ট আইন ১৯৫০ দু ধরনের নির্ধারিত শাস্তির কথা বলা আছে। বৈধ কাগজপত্র বিহীন বা পাসপোর্ট-ভিসা তথা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন বিদেশী নাগরিক ভারতের অভ্যন্তরীণ সীমানায় পাওয়া গেলে ফরেন্স এ্যাক্ট ১৯৪৬ এর ধারা ১৪ তে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী তথা অবস্থানকারীর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা দু’ই নির্ধারিত শাস্তির কথা বলা হয়েছে। আবার ১৪ (খ) তে বলা হয়েছে যে, শাস্তি কোনমতে দুই বছরের কম এবং আট বছরের বেশি হবে না। আরও বলা হয়েছে জরিমানার টাকা দশ হাজার রুপির কম হবে না। এছাড়া ১৯৫০ সালের ভারতীয় পাসপোর্ট আইনে, তিন মাসের কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা দু’ শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
১৯৯২ সালের এক মামলায় দেখা যায় (Mohd. Anwar v. State of Bihar 1992 Cr. L.J. 48)। একজন পাকিস্তানি নাগরিক কোন বৈধ পাসপোর্ট, ভিসা ছাড়া বাংলাদেশের মাধ্যমে ভারত প্রবেশ করে। তার অনুপ্রবেশ এবং অবস্থান সম্পর্কে ভারতীয় কোন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা ছিল না। এমনকি তার কাছে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে কোন নিবন্ধিনও ছিল না। যার ফলে তার বিরুদ্ধে পরিষ্কারভাবে ফরেন্স এ্যাক্ট 1946 অধীনে CL . 3 (1) এবং CL. 7 (2), সেকশনস 13 এবং 14 লঙ্ঘনের অভিযোগে অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়।
তবে বন্দি বিনিময় চুক্তি অনুযায়ী ভারত রাজি থাকলে তাকে বাংলাদেশ ফিরিয়ে আনতে পারে। পুশব্যাক ভারতের ব্যাপার।
কিন্তু সালাহ উদ্দিনের ক্ষেত্রে পুশব্যাকের সম্ভাবনা কম। সাংবাদিকদের পুলিশের আইজি জানিয়েছেন, ইন্টারপোলের সহায়তায় বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দীন আহমেদকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। দেশে ফিরিয়ে আনার পর কিংবা তার সঙ্গে কথা বললেই কিভাবে তিনি সীমান্ত পাড়ি দিলেন সে রহস্য উদঘাটন হবে । এখন আইন-শৃঙ্থলা বাহিনীর প্রধান কাজ তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা। কারণ পুলিশের তালিকায় তিনি ফেরারী আসামি।
উল্লেখ্য, রাজধানীর উত্তরার একটি বাড়ি থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ১০ মার্চ—এমন অভিযোগ করে থানা পুলিশের পাশাপাশি উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন তার পরিবার। সন্ধান চেয়ে ১১ মার্চ রাতে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গুলশান ও উত্তরা পশ্চিম থানায় যান তাঁর স্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ। তবে কোনো থানাই তাঁর জিডি গ্রহণ করেনি। ১২ মার্চ হাসিনা আহমেদের করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে কেন খুঁজে বের করা না এবং রোববার তাঁকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। গত ২০ এপ্রিল হাইকোর্ট আগামী ছয় মাস সালাহ উদ্দিন আহমদের খোঁজ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন।
Discussion about this post