বিচারপতি নিয়োগে সরকারি হস্তক্ষেপের চেষ্টা আটকেই দিচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট। দেশের প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর-সহ পাঁচ সিনিয়র বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত কলেজিয়াম ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রককে জানিয়ে দিয়েছে, বিচারপতি নিয়োগে কলেজিয়ামই শেষ কথা বলবে, এই নিয়োগে কেন্দ্রের কোনও ভূমিকা থাকতে পারে না। কেন্দ্রীয় সরকার এই সব নিয়োগের জন্য যে আলাদা কমিশন গঠন করতে চেয়েছিল, তা অসাংবিধানিক বলেও জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টগুলিতে বিচারপতি নিয়োগ করে সুপ্রিম কোর্টের নিয়োগ কলেজিয়াম। প্রধান বিচারপতি-সহ পাঁচ সিনিয়র বিচারপতিকে নিয়ে এই কলেজিয়াম গঠিত হয়। কেন্দ্রীয় সরকার চাইছিল, এ বার থেকে কলেজিয়ামের বদলে ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্টস কমিশনের (এনজেএসি) মাধ্যমে বিচারপতিদের নিয়োগ করা হোক। পাঁচ বিচারপতির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী এবং দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ওই কমিশনের সদস্য করা হবে বলে কেন্দ্র জানিয়েছিল। আট সদস্যের এই কমিশনের হাতে যদি বিভিন্ন হাইকোর্টের এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের ভার যেত, তা বিচারপতি নিয়োগে সরকারই শেষ কথা বলার ক্ষমতা পেত। বিচারবিভাগে সরকারের সেই নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ অসাংবিধানিক বলে সুপ্রিম কোর্ট মনে করছে।
কলেজিয়াম না এনজেএসি, কার হাতে থাকবে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা, এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে অনেক দিন ধরেই টানাপড়েন চলছিল। সরকারের সিদ্ধান্ত আটকে দিয়ে বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া কলেজিয়াম নিজের নিয়ন্ত্রণেই রেখেছিল। তবে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকও চেষ্টা ছাড়েনি। এনজেএসি গঠনের বিরুদ্ধে যে রায় সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিরা দিয়েছিলেন, তা পুনর্বিবেচনা করার আবেদন জানানো হয়েছিল আইন মন্ত্রকের তরফে। জানা গেছে, আর কোনও পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন নেই বলে কলেজিয়ামের পাঁচ সদস্যই সহমত হয়েছেন।
কলেজিয়াম মনে করছে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার স্বার্থেই বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণে থাকা জরুরি। তবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে কেন্দ্র যে প্রশ্ন তুলেছিল, তার প্রেক্ষিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কিছু পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্তও হয়। বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কী কী পরিবর্তন আনার কথা ভাবা হচ্ছে, তা বিশদে জানিয়ে চলতি বছরের মার্চেই মেমোরান্ডাম অব প্রসিডিওর-এর (মপ) চূড়ান্ত খসড়া আইন মন্ত্রকে পাঠানো হয়েছিল। কেন্দ্র অবশ্য সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবিতে অনড় ছিল। কিন্তু কলেজিয়াম তার সিদ্ধান্ত আর বদলাবে না বলে পাঁচ বিচারপতিই সম্প্রতি এক বৈঠকে সহমত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। মার্চে যে মেমোরান্ডাম পাঠানো হয়েছিল, সেই অনুযায়ীই কাজ হবে এবং কলেজিয়ামই বিচারপতি নিয়োগ করবে বলে কেন্দ্রকে জানানো হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট বা কলেজিয়ামের তরফে অবশ্য এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। বিচার বিভাগ সূত্রকে উদ্ধৃত করে নিউজ ১৮ এই খবর জানিয়েছে।
Discussion about this post