মোঃ আজিজুর রহমান দুলু
পৃথিবীব্যাপী ও বাংলাদেশব্যাপী করোনা ভাইরাসজনিত মহামারী চলাকালীন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সাধারণ ছুটির আওতায় বন্ধ থাকা বিচারঅঙ্গণ ভিন্ন বা বিকল্প পন্থায় চালু রাখার পাশাপাশি বিচারপ্রার্থী মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পথ উন্মুক্ত রাখতে এবং দেশের বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী তথা জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ বিচার বিভাগকে ডিজিটাল করতে স¤প্রতি ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ জারি করেন। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টও এই ঐতিহাসিক অধ্যাদেশকে কার্যকরভাবে প্রয়োগের জন্য ক’টি পরিপত্র জারি করেন। আদালতের জরুরী কার্যক্রম করোনা দূর্যোগের সময় পরিচালনার জন্য সরকারিভাবে একটি ওয়েবসাইটও চালু করা হয়।
কিন্তু তথাপিও মূলত ভার্চুয়াল কোর্ট রুম ম্যানুয়াল (লগ ইন সুপড়ঁৎঃ.লঁফরপরধৎু.মড়া.নফ), সরপৎড়ংড়ভঃ ঃবধসং ইত্যাদি সফটওয়ার ব্যবহারে জটিলতা ও আইনজীবীদের প্রযুক্তি জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার জন্য জনকল্যাণকর ঐতিহাসিক এই অধ্যাদেশ কার্যকর হবার প্রথম দিন (১১ মে) হতেই ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া শুরু করে। এক্ষেত্রে সচেতন সবাই বুঝতে পারছিলেন যে, করোনা ভাইরাসজনিত দুর্যোগের কঠিন সময়ে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা না করলে একদিকে যেমন বহু মানুষ সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে, অপরদিকে আদালতের কার্যক্রম গতানুগতিকভাবে পরিচালনা করলে বিজ্ঞ বিচারক, আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী তথা জনগণ এ মহামারীতে আক্রান্ত হবার মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বেন। তথাপিও ভার্চুয়াল কোর্টরুম ম্যানুয়াল (সুপড়ঁৎঃ.লঁফরপরধৎু.মড়া.নফ), সরপৎড়ংড়ভঃ ঃবধসং ইত্যাদি সফটওয়্যার ব্যবহারে মারাত্মক জটিলতা পরিদৃষ্ট হওয়ায় আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সকলে ভীষণ হতাশ হয়ে পড়েন। অনেকেই আশঙ্কা করতে থাকেন যে, সরকার চমৎকার একটি আইন প্রণয়ন করা সত্তে¡ও সফটওয়ার/সিস্টেম জটিলতার জন্য তা বুঝি আর বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। বহু জেলায় আইনজীবী সমিতি ভার্চুয়াল শুনানি বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় বা সিদ্ধান্ত নেবার জন্য জরুরী মিটিং ডাকে।
আইনজীবীসহ দায়িত্বশীল সূত্রের তথ্যমতে, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মত শেরপুর জেলাতেও আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত প্রায় হয়েই গিয়েছিল। কিন্তু ওই পরিস্থিতিতে শেরপুরের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আল মামুনের কার্যকর দ্রæত উদ্যোগ এবং নবাগত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস.এম হুমায়ুন কবীরের দূরদর্শিতার জন্য শেরপুরে ভার্চুয়াল শুনানি বর্জন হয়নি, বরং সেরা সাফল্য এসেছে এখানকার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীতেই। বলা বাহুল্য, নবাগত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস.এম হুমায়ুন কবীর ভার্চুয়াল শুনানির জন্য অত্যন্ত সুচিন্তিত, সহজ ও কার্যকর ৩টি দাপ্তরিক আদেশ জারি করেন। মূলত তার এই ৩টি আদেশ যিনিই দেখবেন, তিনিই ভার্চুয়াল শুনানিতে উৎসাহিতবোধ করবেন এবং সফলভাবে কাজ করতেও সক্ষম হবেন। তিনি বিচারক/ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, আইনজীবী, জেল কর্তৃপক্ষ, পি.পি./কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক অফিসসহ সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের কাজ অতি সহজ করে দিয়েছেন ওই ৩টি আদেশ দ্বারা। কেবল তাই নয়, তিনি ভার্চুয়াল শুনানীর মাধ্যমে আদালত পরিচালনার ১ম ও ২য় আদেশ দ্বারা তিনি মূলত আইনজীবীদেরকে ভার্চুয়ালী কাজ সহজে করবার পথ দেখিয়েছেন এবং জেল কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ভার্চুয়াল শুনানি/ফলাফল সহজে কার্যকর করবার পথ দেখিয়েছেন। এ দু’টি আদেশের আলোকে কাজ করতে আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট কারো কারো কিছু সমস্যা হবার প্রেক্ষিতে তিনি ভার্চুয়াল শুনানীর মাধ্যমে আদালত পরিচালনার ৩য় আদেশ (কার্যক্রমে অংশগ্রহণ সহজিকরণ আদেশ) জারি করেন। তিনি ৩য় আদেশ দ্বারা মূলতঃ সরকার পক্ষ অর্থ্যাৎ সি.আই./সি.এস.আই./পি.পি./ এ.পি.পি/এফ.সি.সি.ও, ফরিয়াদীপক্ষ, আসামীপক্ষ, আইনজীবীবৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট সকলকে আদালতে সহজভাবে ভার্চুয়াল শুনানি করবার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। সেইসাথে প্রয়োজনীয় তথ্য দেখতে ‘চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, শেরপুর’ ফেসবুক পেইজে খুলে সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় তথ্য জানার।
শেরপুর ম্যাজিস্ট্রেসীর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শেরপুর বারের আইনজীবীদের নিকট হতে জানা যায় যে, আদালতে ভার্চুয়াল শুনানি শুরুর প্রাক্কালে শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস.এম হুমায়ুন কবীর তার সমস্ত ম্যাজিস্ট্রেট ও কিছুসংখ্যক সহায়ক কর্মকর্তা/কর্মচারীকে গভীর রাত্রি পর্যন্ত ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে আদালত পরিচালনার প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। একইভাবে তিনি শেরপুর বারের আগ্রহী এডভোকেটদেরকেও গভীর রাত পর্যন্ত জেগে আদালতে ভার্চুয়ালী শুনানি করবার প্রশিক্ষণ প্রদান করেন এবং সরকারের ঐতিহাসিক অধ্যাদেশ ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ জনহিতকরভাবে কার্যকরের জন্য তিনি প্ল্যান এ, বি ও সি নিয়ে অগ্রসর হন। তার প্ল্যান-এ ছিল শেরপুর বারের যতবেশী সম্ভব আইনজীবীকে রাতের মধ্যে আদালতে ভার্চুয়ালী শুনানীর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং রাত পোহালে কোর্ট আওয়ারে তাদেরকে দিয়ে আদালতে সর্বপ্রথম ভার্চুয়াল শুনানি নিশ্চিত করে ভার্চুয়াল শুনানিতে আগ্রহী করে তোলা, অতঃপর আগ্রহী বাকি আইজীবীদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া। তবে সরকারের জনহিতকর অধ্যাদেশের সুদূরপ্রসারী কল্যাণের বিষয়টি না বুঝবার দরুণ কোন কারণে শেরপুর বার ভার্চুয়াল শুনানি বর্জন করলে তিনি প্ল্যান-বি নিয়ে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেন। তার প্ল্যান-বি ছিল শেরপুর জেলার পাশ্ববর্তী জেলার দক্ষ আইনজীবী যারা ভার্চুয়াল শুনানিতে আগ্রহী হবেন, তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আদালতের কার্যক্রম ভার্চুয়ালী পরিচালনা করা যাতে দেশের মানুষ উপকৃত হয় এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকারও প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর যদি কোন কারণে প্ল্যান-বি ব্যর্থ হয়, তখন তিনি প্ল্যান-সি নিয়ে এগুনোর প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। তার প্ল্যান-সি ছিল সুপ্রীম কোর্টের এডভোকেট যারা ভার্চুয়াল শুনানিতে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক তাদেরকে দিয়ে কাজ করানো। এভাবে তিনি প্ল্যান-এ, বি ও সি নিয়ে সরকার ও সুপ্রীম কোর্টের জনকল্যাণকর আইন ও সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকেন। আর এর মধ্যদিয়ে শেরপুরের সিজেএম তার দূরদর্শী নেতৃত্বের জন্য তার প্ল্যান-এ বাস্তবায়নেই সক্ষম হন, প্ল্যান বি ও সি’র দিকে তাকানোরও প্রয়োজন পড়েনি।
বাংলাদেশের আইন-আদালতের ইতিহাসে সর্বপ্রথম ভার্চুয়াল শুনানির দ্বার খুলে ১১ মে। কিন্তু প্রথম দিন ছিল মূলতঃ আবেদন করবার দিন। ভার্চুয়াল শুনানীর প্রথম দিন ই-মেইলে আবেদন পড়বার পর তিনি আবশ্যিক কারণে ১২ মে আবেদন শুনানির দিন ধার্য্য করেন এবং বাংলাদেশের সর্বপ্রথম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে তিনি নিজে ২টি মামলা ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করেন। মজার বিষয় হল যে, তিনি যখন প্রথম মামলায় ভার্চুয়াল শুনানি নিচ্ছিলেন, তখন স্থানীয় বারে ভার্চুয়াল আদালত বর্জনের জন্য মিটিং চলছিল। কিন্তু আগের রাতে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট যেসব আইনজীবীকে গভীর রাত পর্যন্ত ভার্চুয়াল শুনানির প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে বিশেষত এডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধার, এডভোকেট আল-আমিন, এডভোকেট এম.কে মুরাদুজ্জামান, এডভোকেট রওশন কবীর আলমগীর, এডভোকেট মেরাজ উদ্দিন চৌধুরী, এডভোকেট রূপম কুমার সিং, এডভোকেট তারিকুল ইসলাম ভাসানী, এডভোকেট নূরে আলম হীরা প্রমুখের সময়োচিত ভূমিকার কারণে আত্মঘাতী বর্জনের সিদ্ধান্ত থেকে বেঁচে যায় শেরপুর বার। এর ফলে শেরপুরে মামলা সংখ্যা মাত্র ৪ হাজার এর কাছাকাছি হওয়া সত্তে¡ও মাত্র ৯দিনে জামিন পেয়ে উপকৃত হয় অন্তত ২শ মানুষ, ঈদের পূর্বে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদেরও অর্থকষ্ট বেশ লাঘব হয়।
শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এসএম হুমায়ুন কবীর ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে আদালত পরিচালনা করে নিজে নিষ্পত্তি করেন ১৬টি মামলা (ভিসি. কেস নং-১-১৬), তার নিয়ন্ত্রিত ও প্রশিক্ষিত অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: সুলতান মাহমুদ নিষ্পত্তি করেন ২১টি মামলা(ভিসি কেস নং-১-২১), সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালত ফারিন ফারহানা নিস্পত্তি করেন ১৩১টি মামলা(ভিসি কেস নং-১-১৩১), সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালত হুমায়ুন কবীর নিষ্টপত্তি করেন ০৫টি মামলা(ভিসি কেস নং-), সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালত এর অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট মোহসিনা হোসেন তুষি নিষ্পত্তি করেন ০৫টি মামলা(ভিসি কেস নং-১-৫), জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালত মোহসিনা হোসেন নিষ্পত্তি করেন ২৭টি মামলা((ভিসি কেস নং-১-২৭), জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট মো: আল-মামুন নিষ্পত্তি করেন ০৭টি মামলা(ভিসি কেস নং-১-৭), জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালত মোহাম্মদ আল-মামুন নিষ্পত্তি করেন ৩১টি মামলা(ভিসি কেস নং-১-৩১) এবং জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪র্থ আদালত মো: শরিফুল ইসলাম খান নিষ্পত্তি করেন ২৫টি মামলা(ভিসি কেস নং ১-২৫)। এভাবে শেরপুরের সকল ম্যাজিস্ট্রেট নবাগত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম. হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে ভার্চুয়াল চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, শেরপুরে ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে সফলভাবে আদালতের কার্যক্রম চলছেশুনানির মাধ্যমে রেকর্ড পরিমান ২৬৮টি মামলা নিষ্পত্তি করেন মাত্র নয় দিনে। এতে বহু সংখ্যক পরিবার পরিজনের সাথে ঈদের আনন্দে শরিক হতে পেরেছে।
শেরপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের প্রত্যেক ম্যাজিস্ট্রেটই ভার্চুয়াল শুনানির শুরু হতেই অত্যন্ত দক্ষভাবে আদালত পরিচালনা করেছেন। এখানেও তিনি ব্যতিক্রম। অন্যান্য জেলায় এক/একাধিক ম্যাজিস্ট্রেটকে ভার্চুয়াল শুনানির জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, বাকি ম্যাজিস্ট্রেগণ দায়িত্বহীন থেকেছেন বিধায় তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ হয়নি, যেমনটি হয়েছে শেরপুর ম্যাজিস্ট্রেসীতে কর্মরত ম্যাজিস্ট্রেটদের। শেরপুর ছাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার মডেলে কোন ম্যাজিস্ট্রেট ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে পরিশ্রম করে আদালত পরিচালনা করে করোনা ঝুঁকি মোকাবেলা করে বেতনভাতাদি নেবেন, আর কোন ম্যাজিস্ট্রেট পরিশ্রম না করে/কম পরিশ্রম করে করোনা ঝুকি মোকাবেলা না করে বেতনভাতাদি নেবেন। কিন্তু শেরপুরের সিজেএম কোর্ট মডেলে সব ম্যাজিস্ট্রেটই কাজ করেন, সব ম্যাজিস্ট্রেটই পরিশ্রম করে বেতনভাতাদি নেন যা সত্যিই অধিক যৌক্তিক ও নৈতিক বটে। কিছু কিছু জেলায় বেশী আবেদন পড়লে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট স্বল্প বিধায় একই সঙ্গে দাখিলকৃত আবেদন শুনানি একই দিনে নাও হতে পারে। কিন্তু শেরপুরের সিজেএম এর মডেলে সব ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করেন বিধায় এরূপ সমস্যা হবার কোন সম্ভাবনাই থাকে না। সবচেয়ে বড় কথা, দেশের জনগণের অর্থে যেসব ম্যাজিস্ট্রেটের বেতনভাতাদি হয়, সাংবিধানিক অধিকার হিসাবে জনগণ সেসব ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট জামিন চাইতে সক্ষম হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জামিন পায় এবং হাজারো মানুষের মুখে হাঁসি ফুটে। শেরপুর জেলার পাশ্ববর্তী জেলাসহ দূরবর্তী জেলাগুলোও শেরপুরের ভার্চুয়াল শুনানীর সাফল্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দেখে শেরপুর বারের আইনজীবীসহ পরিচিত নানাজনকে ফোন করে ভার্চুয়াল শুনানিতে আগ্রহী হয়েছেন। সকলের নিকট শেরপুরের সিজেএম এস.এম হুমায়ুন কবীরের পদ্ধতি অত্যন্ত সহজসাধ্য হওয়ায় সং¤িøষ্ট সকলে আদালতের ভার্চুয়াল শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হয়। এতে জনগণ, আইনজীবী সবাই উপকৃত হয়। এখনও যদি কোন জেলাতে ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হওয়া শুরু না হয়ে থাকে বা শুরু হবার পরও কঠিন মনে হয় বা সফল করা যাচ্ছেনা প্রতিভাত হয়, তবে শেরপুরের সিজেএম মডেল অনুসরণ করুন, এতে সবাই সহজে কাজ করতে পারবেন, দেশ ও জনগণের উপকার হবে ইনশাআল্লাহ। বর্তমানে করোনা মহামারি সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকা সত্তে¡ও অর্থনীতিকে সচল রাখতে সরকার বাধ্য হয়েই হয়ত অফিস আদালত খুলে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে অন্তত যতদিন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের মহামারী দূর না হবে, ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের সকল চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টসহ জজ কোর্টেও ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে আদালত পরিচালনা করা সবার নিরাপত্তার স্বার্থেই আবশ্যক।
শেরপুরের চীফ জুডিডিসয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস.এম হুমায়ুন কবীরের মত এরূপ সুচিন্তিত ও কার্যকর আদেশ সমগ্র বাংলাদেশে আর কোথাও কেউ করেছেন কিনা তা রীতিমত গবেষণার বিষয় হতে পারে। সরকার যদি সমগ্র বাংলাদেশে ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে আদালত পরিচালনাকে জনপ্রিয় ও অতি সহজে প্রায় বিনা খরচে বাস্তবায়ন করতে চায়, তবে শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস.এম হুমায়ুন কবীরের পদ্ধতি সব জেলায় ও আদালতে কার্যকরের ব্যবস্থা নিতে পারে। বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি যে, ইউ.এন.ডি.পি. যেভাবে সফটওয়্যার প্রস্তুত করেছে তা খুবই কঠিন ও অজনপ্রিয় হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই সময় এসেছে শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে অত্যন্ত সহজ ও সফলভাবে ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে যেভাবে সফলতা এসেছে সেভাবে সারা দেশে সবাই কাজ করে সফল হবার। বলা বাহুল্য, ২৮ মে রাতে ইউনাইটেড ভয়েস বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ভার্চুয়াল কোর্ট : সম্ভাবনা ও প্রায়োগিক সমস্যা’ শীর্ষক এক অনলাইন টকশোতেও উঠে এসেছে ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনায় শেরপুরের সিজেএমের মডেলের সাফল্যের কথা। টকশোতে শেরপুর বারের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আধার ভার্চুয়াল শুনানীতে বিচারকদের পাশাপাশি আইনজীবীদের উৎসাহিত করতে সিজেএমের ভূমিকা এবং সফলতায় শেরপুর এখন মডেল বলে উল্লেখ করলে টকশোতে অংশ নেওয়া সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট এআরএম কামরুজ্জামান কাকন ও এডভোকেট খাদিজাতুল কোবরা বাপ্পীসহ সঞ্চালক মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আওরঙ্গজেব আকন্দ ভূয়সী প্রশংসা করেন।
কাজেই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস.এম হুমায়ুন কবীরকে দায়িত্ব দিলে তিনি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের ন্যায় জজ কোর্টেও জরুরী কাজসমূহ ভার্চুয়ালী সম্পন্ন করবার সহজ পথ দেখাতে পারবেন। দেশের সবার স্বার্থে তার মেধার যথাযথ মূল্যায়ন করা হোক। আশা করি সদাশয় সরকার ও মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট সবার নিরাপত্তা ও সুবিধা চিন্তা করে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।
লেখক : এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারক।
Discussion about this post