আমরা ভুলে যাই বলেই বাঁচি । একটি শোক বেশী দিন মনে রাখলে তা মনকে বিষন্ন করে তোলে, মন হয়ে ওঠে উতলা । তবে সব ভুলে যাওয়াই কি উচিৎ ? একটি সংসারে হাজারো জিনিসের প্রয়োজন । একখন বাড়ির কর্তাকে সবার আগে যেটা চিহ্নিত করতে হবে তা হল কোন জিনিসটি সংসারে বেশী প্রয়োজনীয় । একদিনের খাবার যেমন খুব গুরুত্বপূর্ণ তেমনি একজন মানুষের জীবন রক্ষাকারী ঔষধও তেমনি গুরুত্বপূর্ণ । বাড়ির কর্তা যদি সব কিছু কিনে আনার পর খাবারে কেনার কথাই ভুলে যায় তবে সেরকম কর্তা আসলে কতটা প্রয়োজনীয় তা কিন্তু দ্বিতীয়বার আপনাকে ভাবতেই হবে । ভুলে যাওয়া নিয়ে অনেক নাটক সিনেমাও হয়েছে, হয়েছে গানও । ভুলো মন যতই ভুলে যাওয়াকে সায় দিক কিন্তু ভুলে যাওয়ার মানেই হল পরবর্তিতে বড় ধরনের ক্ষতি । বাড়ির কর্তা সব কিনে আনার পর যদি তার নিজের প্রেসারের ওষুধটিই না কেনে তবে এই সামান্য ভুলটিই হতে পারে মৃত্যুর কারণ । তার মানে একটি নির্দিষ্ট সময়ে সামান্য অর্থ ও সামান্য অমেনোযোগীতার ভুলগুলো বড় ধরণের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে যেকোন সময় ।
পরিবার থেকে ব্যপারগুলো যখন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যায় তখন কিন্তু আরও বড় ধরনের সমস্যা । রাষ্ট্র যদি সকল জনসাধারণ মিলেই তবুও রাষ্ট্রের কিছু আলাদা দায়িত্ব, কর্তব্য রয়েছে । সচেতন জনগণ সৃষ্টি করা যেমন রাষ্ট্রের দায়িত্ব তেমনি জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়াও রাষ্ট্রের কর্তব্য । এখন যে বিষয়গুলো বার বার ঘটছে সেই বিষয়গুলো আলাদা কোন ফর্দে লিপিবিদ্ধ করে তা দীর্ঘমেয়াদী সমাধানে কাজ করা হচ্ছে কিনা অথবা যাদের এই কাজের জন্য নিয়োজিত করা আছে তারা সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা কিন্তু চিহ্নিত করে কাজ গতিশীল করা খুব বেশী প্রয়োজন ।
বর্ষাকাল খুব নিকটে । গত বছর এই সময়ের কিছুদিন পরেই হাওরে পানি বাড়তে শুরু করে । ফসল তলিয়ে যায় । আস্তে আস্তে পানি স্থির হয়ে যায় । পানির মধ্যে বিভিন্ন কারণে মাছও মারা যেতে থাকে । এ বছরও আবার প্রায় সময় হয়ে এলো । হাওরে কি বাঁধ নির্মাণ হয়েছে, এই বাঁধ নির্মাণ নিয়ে কোন দুর্নীতি হচ্ছে অথবা দুদক কি আগে থেকেই তদন্তু শুরু করেছে ?
প্রত্যেকটি বিষয়ই এমন । অনেক রাস্তার কাজই অনুমোদন হয়ে আছে অথচ কাজ শুরু করা হচ্ছেনা । বর্ষা আসবে কাজ শুরু হবে আর মানুষের ভোগান্তি হবে, রোগাক্রান্ত মানুষ যেতে না পেরে রাস্তায় মারা যাবে ।
আরেক শ্রেণী যারা বর্ষায় কাজ শুরু করতে পারলে বেশী দুর্নীতি করতে পারবে,তারা সেই রোগাত্রান্ত মানুষের মৃত্যু দেখে হাসতে হাসতে টাকা নিয়ে নিজেদের সংসারের বিলাসীতা করবে !
বর্ষার আগে অর্থাৎ এই সময়ে রাস্তাগুলোর কাজ ধরা হচ্ছেনা কেন ? শুকনো মৌসুমে রাস্তার কাজ শুরু হলে সরকারের বাড়তি ব্যয় কমে যেতে পারে ত্রিশ শতাংশ পর্যন্ত ।
এবার আসুন পাহার ধ্বসের কথায় । প্রচুর বৃষ্টি হয় আর আরেক দিকে হাহাকার শুরু হয় এই বুঝি ধ্বসে পড়লো পাহার । তা পড়েও । পাহার ধা্বসে মানুষ মরে যায় আর তখন খুঁজে বের করা হয় কে কে পাহারের পাদদেশে গিয়ে বাড়ি বানিয়ে ভাড়া দিয়েছিল তাদের । এক পাশ থেকে পাহার কেটে সমতল বানিয়ে খাড়া পাহারে ঘর করে বসত শুরু করে আর অন্যদিকে অসহায় মৃত্যুবরণ দেখে আমরা কাঁদতে শুরু করি । বর্ষায় বাংলাদেশের অপরুপ চিত্র দেখারতো সময়ই নেই শুরু হয় রাস্তায় বুক সমান বৃষ্টির পানি জমে রিকশা উল্টে পড়ার দৃশ্য দেখে হাহাকার !
আরেকটু ভাবুন কোথায় কোথায় আমরা ভুলে যাচ্ছি এবং কি কি ভুলে যাচ্ছি ? হ্যা যেদিন ভূমিকম্প হয় সেদিনই কেবল মনে হয় এবার খুঁজে বের করে ফেলবো কয়টা বাড়ি ভূমিকম্পের ঝুকিতে রয়েছে, কয়টা বাড়ি হেলে পড়েছে এবং কয়টা বাড়ি বা অফিস ভূমিকম্পের ঝুকি মুক্ত ।এই কিছুদিন আগে ভূমিকম্পে যে বিল্ডিংগুলো হেলে পড়ার খবর পেয়েছিলাম সেগুলো কি ভাঙ্গা হয়েছে অথবা সেগুলো কি কোনরকমভাবে বিপদমুক্ত করা হয়েছে ? একদিন শোনা যাবে সামান্য কম্পনে বাড়িগুলো ধ্বসে পড়ে অনেকগুলো মানুষের মৃত্যুর কথা হয় !এইতো এরকমই আমরা । যখন যে বিপদ দেখি তখন সেটা ফেরানোর চেষ্টা করি । এতে করে মানুষের নিরাপত্তা যেমন ব্যহত হয় তেমনি খরচ হয় বিপুল পরিমান টাকা ।
এরকম অনেক অনেক বিষয় জানা আছে অনিয়ম কিন্তু তা আলসেমি করে, ক্ষমতার অপব্যবহারে বা পেশিশক্তির জোড়ে কোন কোন মহল করেই যাচ্ছে বার বার ।যদি কোন কাজ সঠিক সময়ে করা যায় তবে অবশ্যই জনসাধারণ ভালো থাকবে এবং অর্থও বেঁচে যাবে অনেক । পরিকল্পনা বিষয়গুলো সরকারের প্রধান থেকে যেভাবে গতিশীল থাকে তা তৃণমূল পর্যায়ে সমান হারে গতিশীল করতে সচেষ্ট হওয়াটা খুব জরুরী ।
এখনই ভাবতে হবে হাওর নিয়ে, পাহার নিয়ে, বন্যা নিয়ে, রাস্তার মেরামতের কাজ নিয়ে, আগুন থেকে দুর্ঘটনা নিয়ে, ভূমিকম্প নিয়ে, কেমিকেল গুদামের কেমিকেল নিয়ে এবং সর্বপরি আরও যে বিষয়গুলো এর সাথে যোগ করা যায় সেগুলো নিয়েও ।
সময় থাকতে ভাবতে পাললে আমাদের এই করুণ পরিনতিগুলো দেখতে হবে না । বিষয়গুলো নিয়ে সুচিন্তিত পদক্ষেপের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও মন্ত্রনালয়গুলোর দৃষ্টি আকর্ষন করছি ।
Discussion about this post