বিডি ল নিউজঃ মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যপারে কোন কথা বলবেন নাকি তাদের শুধু নিরাপদে বাঁচার অধিকার নিশ্চিত করবেন ? এমন প্রশ্ন যদি বিশ্ব নেতাদের করা হয় তবে তারা কি উত্তর দেবেন ! আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষায় যেখানে জাতিসংঘের মত সংস্থা কাজ করে সেখানে এত হত্যার পরও যদি মন্তব্য হয় “উদ্বিগ্ন” কথাটির দ্বারা তবে সত্যিই তা এক অসহায়ত্বেরই বহিঃপ্রকাশ । 70 বছর আগে রক্তক্ষরণ দিয়ে শুরু হওয়া ফিলিস্তিনিদের রক্তক্ষরণ দিন দিন যেভাবে বাড়ছে তা কিন্তু মানবতার ক্ষেত্রে অসহনীয় হতাশারই বলা যায় ! গতকাল ফিলিস্তিনি শিশুর একটি ভিডিও দেখছিলাম ।বিস্ফোরণের পর শিশুটি বাবা মায়ের চোখের সামনে কাতরিয়ে কাতরিয়ে মারা গেল ! বাবা অনেক চেষ্টা করছে শিশুটিকে কথা বলানোর জন্য আর মা চিৎকার করে আহাজারি করছে ! এর মধ্যেই দৌড়ে চলে এসেছে অনেকেই কিন্তু বাবা কাউকেই ধরতে দিচ্ছেনা শিশুটিকে ! একেবারে অসহায় একটা অবস্থা ! মানুষ এত অসহায় হতে পারে ? খুব অবাক হই । ফিলিস্তিনে চলমান এ সহিংশতা আজকে একদিনের ঘটনা নয় । 1948 সালে ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদের পর থেকে শুরু হওয়া এ যুদ্ধ পাঁচ যুগেরও বেশী সময় ধরে চলমান রয়েছে । সংবাদ মাধ্যমের তথ্যমতে যতজন মানুষের মৃত্যুর কথা বলা হয় এই পাঁচ যুগে সে হিসেবের বাইরেও অনেক মৃত্যু রয়েছে বলেও ধারণা করা হয়ে থাকে ।
আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা ইসরায়েলের এরকম হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ বিশ্ব আগে থেকে করে গেলেও যুক্তরাষ্ট এর কিছুটা নীতিগত পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে সহিংশতা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে । মূলত নতুন করে সংঘাত সৃষ্টি হয় 14 মে গাজা সীমান্তে । জেরুজালেমে আমেরিকার দূতাবাস চালুর প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ফিলিস্তিনিরা । এদিন প্রাণ হারায় প্রায় 60 জন ফিলিস্তিনি । আহত হয় প্রায় 2500 এর মত !
এত মানুষের মৃত্যু ও স্বয়ং আমেরিকার মধ্যেই এ যুদ্ধ নিয়ে দ্বিনীতি নিয়ে উদ্বেগ যখন শীর্ষে অবস্থান করছে তখন দেখবেন অন্যান্য দেশগুলোর কি নীরব আচরণ ! অবাক হই আরব বিশ্বের চুপচাপ থাকার দৃশ্য দেখে । তারা কোন দেশের পক্ষপাতিত্ব না করেও মানব হত্যা বন্ধে তাদের অবস্থান জোড়ালো করতে পারতো । মুসলিম বিশ্ব মুসলমান হত্যায় এমন নীরব আচরণ সত্যিই খুব হতাশারই বলে মনে হয় ।
আন্তার্জতাতিক প্রতীরক্ষা আইন, মানবাধিকার লঙ্ঘন আইন, যুদ্ধে কি ধরণের অস্ত্র ব্যবহার হবে তার আইন, যদ্ধের সময় কোন কোন এলাকায় সরাসরি হামলা চালানো যাবেনা এমন আইন সহ কত আইনই না আছে মানব কল্যানে কিন্তু এখানে শিশু মৃত্যুর মিছিলে শুধু সংবাদ প্রচার হওয়া আর বড় বড় মিটিং এ বাকবিতন্ডা ছাড়া যেন কিছুই করার নেই !
অবশ্য ফ্রান্স জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক আইনকে সামনে এনে বলেছে জেরুজালেমে যুক্তরাস্ট্রের দূতাবাস স্থানান্তর জাতিসংঘ নিরাপত্তা আইনের লঙ্ঘন । যুক্তরাজ্যও দূতাবাস স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে মত দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ভুল সময়ে ভুল কার্ড খেলেছে।
এত কিছুর পরও যেটা মুখ্য তা হল মানব হত্যা বন্ধ হচ্ছে না । আইনের তোয়াক্কা না করে আন্তর্জাতিকভাবে এ হত্যা স্বীকৃতি পেয়ে গেলে বিশ্ব এক সময় অশান্ত হয়ে উঠবে । শিশু হত্যা বন্ধ করতে হবে । আইনের বাধ্যবাধকতাকে নিশ্চিত করে সারা বিশ্বের এ হত্যাগুলো বন্ধে সব দেশের এগিয়ে আসা প্রয়োজন । আগামী বিশ্ব শান্ত রাখতে ও নিরাপদ রাখতে সার্বজনিন এই শান্তিরক্ষার প্রয়োসের কোন বিকল্প নেই । সকল দেশের কাছে আবেদন সব দেশের আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার ব্যপারে মতৈক্যে পৌছার জন্য কাজ করুন এবং বিশ্বকে করে তুলুন মানব জাতির জন্য নিরাপদ ।
লেখাঃ সাঈদ চৌধুরী
রসায়নবিদ ও সদস্য উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি
শ্রীপুর, গাজীপুর
Discussion about this post