প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, আমাদের বর্তমান বিচার ব্যবস্থা মরিচা ধরা পুরাতন আইনগুলো ঘষা-মাজা করে কোনো মতে চালাই। এমনভাবে ঘষা-মাজা করি, এর কোনো মৌলিকত্বও নেই এখন। এই ডিজিটালাইজেশনের যুগে পুরাতন আইন চলবে না, এই জামানায় নতুন আইন করতে হবে।
মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘রাজস্ব মামলার ব্যবস্থাপনা ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) কার্যকারিতা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের আইন যেটা আছে সেটা শুধু ১৯৬৯ না তারো আগের আইন, ১৮৭২ খৃষ্টাব্দ থেকে নেওয়া। এই আইন দিয়েই আমাদের বর্তমান বিচার ব্যবস্থা চলছে। এখনো এসব মরিচা ধরা আইনগুলো ঘষা-মাজা করে কোনো মতে চালাই। এমনভাবে ঘষা-মাজা করি, এর কোনো মৌলিকত্বও নেই এখন।
এস কে সিনহা বলেন, আমাদের যেগুলো প্রসিডিউর, সেগুলো ৬০ থেকে ৭০ ভাগ এখন অপ্রচলিত। এখন এই একবিংশ শতাব্দীতে যখন আমরা ডিজিটিলাইজেশনের কথা বলি, ডিজিলাইজেশনের জামানায় এই সব পুরাতন আইন দিয়ে চলে না। এই পুরাতন সবগুলা ‘স্টপ’ করতে হবে। বর্তমান ডিজিটালাইজেশনের জামানায় নতুন আইন করতে হবে।
তিনি আইন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এই ব্যাপারে আমাদের আইনকমিশন আছে। আইন কমিশনকে আরো শক্তিশালী করে সেখানে যতগুলো আইন হবে সেখানে তারা রিপোর্ট দিবে এরপর সেটা পার্লামেন্টে বিবেচনা করা হবে। কিন্তু কাস্টমস ভ্যাটসহ যতগুলা আইন আমরা পাই, একটা অর্ডিন্যান্স কার্যকারিতা হওয়ার দুই-চারটা অ্যামেডমেন্ট বা সংশোধনী চলে আসে। আমরা আবার এসবের কোনটা কোন সময়ে হয় তার হদিসও পাই না।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কর কমিশনার আমিনুল হোসেন। তিনি বলেন, বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টে শুল্ক, আয়কর ও ভ্যাট সংক্রান্ত ২৪ হাজার ৫৭২টি মামলা বিচারাধীন আছে। এর মধ্যে শুল্কে ১৭৪৭০টি, আয়করে ৩৮৭৬টি ও ভ্যাটে ৩২২৬টি মামলা বিচারাধীন। এসব মামলায় ৩০ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকার রাজস্ব আটকে আছে।
তিনি মূল প্রবন্ধে আরো বলেন, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। এ থেকে দেখা যায়, লক্ষ্যমাত্রার ১৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ রাজস্ব বিভিন্ন মামলায় আটকে আছে। মামলায় আটকে যাওয়া রাজস্ব আদায়ে রাজস্ব মামলা বিচার করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিশেষায়িত বেঞ্চের সংখ্যা বৃদ্ধি, এনবিআরের বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থাকে কার্যকর করাসহ বিভিন্ন সুপারিশ করেন তিনি।
সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন- অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, এফবিসিসিআই সভাপতি মাতলুব আহমেদ ও বিচারপতিরা। এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান সেমিনারটির সভাপতিত্ব করেন।
Discussion about this post