তাতানো গরম দুপুর। মন্ত্রীর গাড়ি এসে থামলো ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের ভালুকা ডাক বাংলোর সামনে। গাড়ি থেকে নামার পর সংবাদ কর্মীরা এগিয়ে যেতেই হাত মেলালেন তিনি। কুশলও বিনিময় করলেন সবার সঙ্গে।
অতঃপর নিজে থেকেই বলতে শুরু করলেন। মহাসড়কের ওপর দাঁড়িয়ে প্রায় আধঘণ্টা নানা বিষয়ে কথা বললেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আকাশ থেকে আগুন ঝরায় অন্যান্যদের সঙ্গে তিনিও ঘামছেন। কিন্তু প্রখর খরতাপ যেন উবে গেলো শিল্প সুন্দর ভাষায় কথা বলা সড়ক পরিবহন মন্ত্রীর বক্তব্যে।
ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের চার লেন প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। সিএনজি চালিত অটোরিকশাসহ সব ধরনের থ্রি হুইলারবিহীন এ মহাসড়ক পরিদর্শনেই সারপ্রাইজ ভিজিটে শনিবার (০৮ আগস্ট) দুপুরে এসেছিলেন মন্ত্রী।
এসময় গতিময় নতুন চেহারার মহাসড়ক নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেন তিনি।
নিজে থেকেই বললেন, ‘আমি এ রাস্তা করার জন্য কতবার রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে এখানে এসেছি। আজ এসে অবাক লেগেছে। যাতায়াতের সময় কতো কমে গেছে। ঢাকা থেকে মাওনা পার হয়ে তেপান্তর পর্যন্ত আসতে অর্ধেক সময় কমে এসেছে। মহাসড়কে যানজট কমে এসেছে।’
স্টেট ফরোয়ার্ড মন্ত্রী হিসেবে আলোচিত ওবায়দুল কাদের। যা বিশ্বাস করেন সেটাই করেন। আর যা করেন তার পেছনে থাকে গভীর পর্যবেক্ষণ।
ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কে দুর্ভোগ কমাতে অনেকটাই সফল হয়েছেন তিনি। অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এনেছেন বিশৃঙ্খল যোগাযোগ ব্যবস্থার। এবার তিনি দৃষ্টি দিয়েছেন সড়ক দুর্ঘটনায় মহাসড়কে রক্তপাত থামাতে।
দেশের ২২টি মহাসড়কে বন্ধ করে দিয়েছেন সিএনজি চালিত অটো রিকশাসহ ৩ চাকার যান। ফলে গত ৭ দিনে মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা কমে গেছে বলেন মন্ত্রী।
এও বললেন,‘জীবনের চেয়ে জীবিকা বড় নয়। ছোট ছোট যান চলাচলের জন্য ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ সব মহাসড়কে বাইলেন হবে।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এক সময় সাংবাদিকতা করতেন। তিনি যখন বাংলার বাণীর সেন্ট্রাল ডেস্ক আগলে রেখেছিলেন, তখন ফুলবাড়িয়া প্রতিনিধি ছিলেন ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুল আলম খান।
ময়মনসিংহের এ জেষ্ঠ্য সাংবাদিক বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের যখন যা বলেন তা আত্মপ্রত্যয় নিয়েই বলেন। কথা আর কাজের মিল রেখে চলতেই পছন্দ করেন তিনি। তার কথা অনেকের কাছেই রূঢ় হলেও জনস্বার্থ সংরক্ষিত হয়। দেশের মানুষ উপকৃত হয়।’
স্থানীয় সাংবাদিকরা প্রথমেই ভেবেছিলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের সঙ্গে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডাক বাংলোতে বসে কথা বলবেন। এরপর রাস্তায় দাঁড়িয়ে ব্রিফ করবেন।
কিন্তু সড়কপথে নিত্য ঘাম ঝরানো মন্ত্রী সেই পথে হাঁটলেন না। একবারের জন্যও প্রবেশ করলেন না ডাকবাংলোতে। তিনি রাস্তার মানুষ, কথা বললেন রাস্তায় দাঁড়িয়েই!
ওবায়দুল কাদের এসেছেন খবর ছড়িয়ে পড়লে তাকে দেখতে ভিড় করেন স্থানীয় সাধারণ মানুষও। তাদের মধ্যে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যাই ছিল বেশি।
তাদের একজন সুরুজ মিয়া। তার ভাষ্যমতে, ‘স্যারের ইস্টাইলডা ভালা। যেইডা কন হেইডাই করেন। তার কতা আমগর খুব ভালা লাগে। তারে দেকবার লেইগ্যাই আইছি।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেই সোজা আধা কিলোমিটার মহাসড়ক হেঁটে গাড়িতে গিয়ে উঠেন মন্ত্রী। এরপর গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে নবীনগর ফোর লেন হয়ে সাভার রোড দিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেন ওবায়দুল কাদের।
‘বিলবোর্ডে চেহারা দেখিয়ে জনগণের মন জয় করা যায় না’ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এ বক্তব্যের বিষয়ে বাংলানিউজকে দুপুরেই তিনি মুঠোফোনে বললেন, ‘দিল্লি গিয়েছিলাম। সেখানে মহাসড়কে নরেন্দ্র মোদির দু’একটি ছবি থাকলেও কোনো পাতি নেতার ছবি নেই।’
‘একই অবস্থা কলকাতায় মমতা ব্যানার্জির বেলাতেও। সেখানেও পাতি নেতার ছবি নেই। ব্যাংকক, টোকিও, কাঠুমান্ডুসহ ১৬টি শহরের কোথাও আমি অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক বিলবোর্ড দেখিনি। তারা পারলে আমরা কেন পারবো না,’ যোগ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
Discussion about this post