বিডি ল নিউজঃ ফ্রানসেস্কা হগির বয়স চল্লিশের কোটায়। এই নারী সেদিন নিউইয়র্ক থেকে বিমানে উঠলেন লন্ডনে যাবেন বলে। উঠে যথারীতি তার নির্ধারিত আসনেই বসলেন। কিন্তু বিপত্তি বাধলো একটু পরেই। তার পাশের আসনটি জানালার সাথেই। সেটি যে ভদ্রলোকের জন্য বরাদ্দ তিনি এসে হগির পাশে বসতে অস্বীকৃতি জানালেন!
না, সিট পছন্দ হয়নি এমন কোনো ব্যাপার নয়। আসলে ইহুদী ওই ভদ্রলোকের ধর্মে স্ত্রী ছাড়া কোনো মহিলার পাশে বসতে মানা আছে। তাই তিনি বসতে চাচ্ছিলেন না। তার কথা শোনে বিরক্ত হলেও শেষমেশ অন্য আসনে যেতে রাজি হলেন হগি। একই রকমের অভিজ্ঞতা লরা হেইউডের। বেয়াল্লিশ বছর বয়স্ক ওই মহিলা যাচ্ছিলেন স্যান দিয়েগো থেকে নিউইয়র্ক হয়ে লন্ডনে। তিন আসনের সারিতে তিনি এবং তার স্বামী বসেছিলেন করিডোরের পাশের আসন দুটিতে। জানালার পাশের আসনটি ছিল অন্য এক পুরুষের জন্য বরাদ্দ।
লরা বসেছিলেন মাঝের আসনে। অর্থাৎ তার স্বামী এবং অপরিচিত পুরুষের মাঝখানে। তখন সেই অপরিচিত লোকটি লরাকে অনুরোধ করলেন স্বামীকে মাঝখানে দিয়ে তিনি ওপাশে বসতে। কিন্তু তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে সরতে অস্বীকার করে নিজের পছন্দের জায়গায়ই বসে থাকলেন। লরা বলেন, আমি অভদ্র ব্যবহার করিনি। তবে যখন দেখলাম লোকটা আমি শুধু নারী হওয়ার কারণে সরে যেতে বলছে তখন সরাসরি না করে দিলাম। এই দুটিসহ আরো কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে নিউইয়র্ক টাইমস জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইলের মধ্যকার ফ্লাইটগুলোতে এমন ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। অনেক যাত্রীই এমন ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার কথা জানিয়েছেন। রক্ষণশীল ইহুদি পুরুষদের তাদের ধর্ম অনুসরণের প্রবণতা এবং নারীদের আসন পরিবর্তন না করার ইচ্ছা অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতির তৈরি করছে। এ ধরনের ঘটনার কারণে সম্প্রতি নিউইয়র্ক থেকে ইসরাইলগামী বেশ কিছু ফ্লাইট বিলম্ব বা সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক উঠেছে এবং অনেকে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। সংক্ষুব্ধ লোকজন এরকম আচরণের প্রতিবাদ জানিয়ে অনলাইনে পিটিশনও স্বাক্ষর করেছেন। একটি ইহুদী ম্যাগাজিন ব্যঙ্গ করে এ ধরনের পুরুষদেরকে ‘মহিলাদের থেকে বাঁচতে’ নিজেদেরকে বিশেষ ধরনের কাপড় তৈরি করে পরতে বলেছে। তবে রক্ষণশীল ইহুদিদের প্রতিনিধারা বলছেন, এ ধরনের আচরণ খুবই ব্যতিক্রম। অগুদাত ইসরাইল অব আমেরিকার পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক রাব্বী আভি শাফরান বলেন, আমার মনে হয় কিছু মিডিয়ার প্রতিবেদন দেখে যতটা মনে হচ্ছে বিষয়টা আসলে ততটা প্রচলিত নয়।
শাফরান বলেন, ইহুদি ধর্মের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী নারী-পুরুষের বিবাহবহির্ভূত কারো শারীরিক সান্নিধ্যে যাওয়া নিষিদ্ধ আছে। তবে কেউ কেউ রক্ষণশীল ইহুদি স্কলার রাব্বী মোশে ফেইনস্টিনের একটি ব্যাখ্যাও অনুসরণ করে যৌন আকাঙ্খা উদ্রেকের আশংকায় বাসে বা অন্য কোথাও কোনো নারীর পাশে না বসা থেকে বিরত থাকেন। তবে বহু যাত্রী, স্কলার এবং এয়ারলাইনগুলো বলছে, এ ধরনের আচরণ খুবই প্রচলিত এবং এটি দিন দিন বাড়ছে। সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস
Discussion about this post