কুমিল্লা প্রতিনিধি: কুমিল্লায় অর্থের বিনিময়ে সাজাপ্রাপ্ত মাদক কারবারি আনোয়ার হোসেনের হয়ে কারাভোগ করছেন হানিফ মিয়া নামে এক দিনমজুর। এ ঘটনায় আদালতপাড়াসহ সচেতন মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। মূল আসামি আনোয়ার হোসেন জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী গঙ্গানগর এলাকার মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে। আর কারাভোগকারী হানিফ মিয়া বরুড়া উপজেলার বড় হাঙ্গিনী গ্রামের মৃত মনু মিয়ার ছেলে।
সোমবার (১০ আগস্ট) বিষয়টি সরকারপক্ষের কৌঁসুলির মাধ্যমে আদালতকে অবহিত করেন এলাকাবাসী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আনোয়ার হোসেন জেলার একজন আলোচিত মাদক কারবারি। ব্রাহ্মণপাড়া সীমান্ত এলাকায় রয়েছে তার বিশাল মাদকের নেটওয়ার্ক। তিনি ভারত থেকে প্রতিটি মাদকের চালান দেশে আনতে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে থাকেন। অধিকাংশ মাদকের চালানই পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে যায় গন্তব্যস্থলে। তার পরও মাঝেমধ্যে আটকের মধ্য দিয়ে তিনি আটটি মাদক মামলার আসামি।
একপর্যায়ে গোয়েন্দা সূত্র অনুসারে তাকে শীর্ষ মাদক কারবারি হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত করা হয়। আনোয়ার পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ড এলাকাসহ ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থান করেন। মাঝেমধ্যে রাতের অন্ধকারে এলাকায় এলেও তার অবস্থান শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এর মাঝে বেশ কয়েকটি মামলায় আদালত থেকে আনোয়ারের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়।
সূত্র জানায়, গত ৮ জুলাই কোতোয়ালি থানার একটি মাদক মামলায় আনোয়ার মোটা অঙ্কের অর্থ এবং পরিবারের খরচ বাবদ মাসিক ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে তার পরিবর্তে হানিফ মিয়াকে আদালতে আত্মসমর্পণ করালে আদালত আসামিকে কারাগারে পাঠান। এরই মাঝে মামলাটি নিম্নআদালত থেকে জজকোর্টে স্থানান্তর করা হয়। প্রায় এক মাস কারাভোগের পর আইনজীবীর মাধ্যমে একাধিকবার তার জামিনের জন্যও আবেদন করা হয়।
সোমবার এ মামলার জামিন শুনানির ধার্য তারিখ ছিল। শুনানির আগ মুহূর্তেই রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির কাছে খবর আসে এ মামলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত আসামি মাদক সম্রাট আনোয়ার এলাকায় অবস্থান করছেন। আর নকল আসামি কারাভোগ করছেন। পরে বিষয়টি আদালতকে অবহিত করা হলে আদালত মুলতবির ঘোষণা করা হয়।
মামলার বাদী এসআই নন্দন চন্দ্র সরকার বলেন, ২০১৯ সালের ১৩ জুলাই মাদক ব্যবসায়ী হেলাল ওরফে মুরগি হেলালকে গাঁজার চালানসহ আটক করি। পরে আটক আসামি হেলাল বলেন, তার সঙ্গে আরেক মাদক কারবারি আনোয়ার ছিল। এ বিষয়ে তখন কোতোয়ালি থানায় একটি মাদক মামলা করি। ওই মামলায় পলাতক আসামি ছিল আনোয়ার হোসেন।
সরকারপক্ষের আইনজীবী পিপি জহিরুল ইসলাম সেলিম বলেন, গত ৮ জুলাই আনোয়ার নামে এ আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সোমবার আমার কাছে তথ্য আসে, আলোচিত মাদক কারবারি আনোয়ার হোসেন অর্থের বিনিময়ে বরুড়া উপজেলার বড় হাঙ্গিনী গ্রামের মৃত মনু মিয়ার ছেলে হানিফকে আদালতে আত্মসমর্পণ করিয়েছে।
আমি স্থানীয়দের মাধ্যমে তথ্যটি পেয়ে আদালতকে অবহিত করি। আদালত মামলাটি পুনরায় সদর কোর্টে পাঠান, আর বিষয়টি জানার পর আসামিপক্ষের আইনজীবী মামলা পরিচালনা থেকে সরে দাঁড়ান।
Discussion about this post