চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার মাদ্রাসাছাত্র আবির হোসাইনের বিচ্ছিন্ন মাথাটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর আগে বুধবার সকালে মাদ্রাসার নিকটবর্তী ইটভাটার পাশ থেকে ওই ছাত্রের মাথাবিহীন মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত আবির হোসাইন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের দুবাই প্রবাসী আলী হোসেনের ছেলে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ ও ডুবুরি দল যৌথভাবে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে মাদ্রাসার মাত্র ১০০ গজ দূরের একটি পুকুর থেকে আবিরের মাথাটি উদ্ধার করা হয়।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. কলিমুল্লাহ গণমাধ্যমকেকে জানান, বুধবার রাতেই খুলনা থেকে একটি বিশেষ ডুবুরি দল আসে চুয়াডাঙ্গায়। তাদের সহযোগিতায় জেলা পুলিশের একটি দল ও ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা কয়েক ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় আবিরের মাথাটি উদ্ধার করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। পরে মাদ্রাসার নিকটবর্তী মশিউর রহমানের পুকুরের উত্তর এলাকা থেকে মাথাটি উদ্ধার হয়।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা নুরানি হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় মাস ছয়েক আগে আবির হোসেন (১১) ভর্তি হয়। ওই মাদ্রাসার নুরানি বিভাগের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র সে। মঙ্গলবার এশার নামাজের সময় সে নিখোঁজ হয়।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামে কয়েক বছর আগে স্থানীয় বিত্তশালীদের আর্থিক সহযোগিতায় গড়ে তোলা হয় একটি মাদরাসা ও এতিমখানা। মাদরাসাটির নাম দেওয়া হয় নুরানী হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা। বর্তমানে মাদরাসায় অধ্যায়নরত রয়েছে প্রায় ৭১ শিক্ষার্থী। চুয়াডাঙ্গা ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে অধ্যায়নরত আছেন বেশ কিছু ছাত্র।
মাদরাসাটির মুহতামিম মুফতি আবু হানিফ জানান, ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে আবির হুসাইন প্রায় এক বছর আগে এই মাদরাসায় ভর্তি হয়।তার মা কমেলা খাতুন তাকে ভর্তি করান। আবির হুসাইন মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়াশুনা করত।
মুফতি আবু হানিফের মতে মঙ্গলবার এশার নামাজের একটু আগে আবির হুসাইন নিখোঁজ হয়।স্থানীয়দের সহযোগিতায় গ্রামের বিভিন্ন স্থানে অনেক খোঁজাখুজি করেও আমরা তার সন্ধান মেলাতে পারেনি। এরপর সকালে গ্রামবাসী মাদ্রাসার অদূরে একটি আমবাগানে আবিরের মাথাবিহীন মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে।
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান মুন্সি জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে সকাল ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কানাই লাল সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. কলিমুল্লাহসহ পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে পুলিশ নিহতের ছাত্রের মৃতদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠাতে গেলে উত্তেজিত হয়ে ওঠে গ্রামবাসী। তারা মাদ্রাসাছাত্র আবিরের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
পরে পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান গ্রামবাসীদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন। পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে গ্রামবাসীকে শান্ত থাকারও অনুরোধ জানানো হয়। আশ্বাস দেওয়া হয় ঘাতকের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করার।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ জানান, দিনভর পুলিশের বেশ কয়েকটি ইউনিট কাজ করার পর আমাদের হাতে কিছু তথ্য আসে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়। এরই মধ্যে হাসপাতাল থেকে তথ্য পাওয়া যায়- নিহত মাদরাসা ছাত্র আবির হুসাইনের মলদ্বারে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ তথ্যের পর হাসপাতালে ছুটে যান জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমানসহ তদন্তকারী দল।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসকের ময়নাতদন্তের বর্ণনা দিয়ে মো. কলিমুল্লাহ গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ওই ছাত্রকে দীর্ঘদিন ধরে বলাৎকার বা যৌন নির্যাতন চালানো হতো।নির্যাতনের ঘটনাটি ধামাচাপি দিতেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।
মাদরাসা ছাত্রকে যৌন নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. শামীম কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে সে রকমই মনে হয়েছে। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা ডিএনএ টেস্ট ও নিহতের শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকাতে পাঠিয়েছি।
এদিকে, বিকালে র্যাবের সদর দপ্তর থেকে হেলিকপ্টারযোগে ডগস্কোয়াড নিয়ে একটি বিশেষ দল চুয়াডাঙ্গা আসেন। টিমের সদস্যরা সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত ঘটনাস্থলসহ আশপাশের কয়েক কিলোমিটার অনুসন্ধান চালিয়েও নিহত মাদরাসা ছাত্রের মাথা উদ্ধারে ব্যর্থ হন।
দলটির ইনচার্জ ছিলেন অতি.পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা মাসুদ আলম।তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের গুজবের সঙ্গে এই হত্যার সম্পর্ক নেই। মাদরাসা ছাত্র আবির হুসাইনকে হত্যার পর কৌশলে গুজবে রুপ দিতে কাজ করেছে হত্যাকারীরা। আমরা র্যাবের পক্ষ থেকে চুয়াডাঙ্গা পুলিশকে সহায়তা করব।
Discussion about this post