নিজস্ব প্রতিবেদক: নরসিংদী যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া এবং তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমনের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলা হচ্ছে। পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) আগামী সপ্তাহে মামলা করবে।
সিআইডির একটি সূত্র বলছে, সুনির্দিষ্ট পেশা না থাকলেও পাপিয়া ও তার স্বামী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুমন বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন।
এ ছাড়া অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থের কিছু দেশে বিনিয়োগ করলেও বেশিরভাগই তারা বিদেশে পাচার করেছেন। দেশে যেসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে মামলায় তা উল্লেখ করা ছাড়াও কী পরিমাণ টাকা পাচার করেছেন, তা তদন্তে বের করার চেষ্টা চালানো হবে। পাশাপাশি পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে। এদিকে শামীমার দুই সহযোগীকে ফের তিনদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। রবিবার শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমাম আসামিদের রিমান্ডের আদেশ দেন।
সূত্র বলছে, মানি লন্ডারিং মামলায় পাপিয়ার সিটি ব্যাংকের এফডিআর, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক এবং প্রাইম ব্যাংকের হিসাবের কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। এই তিন ব্যাংকে ১৫ লাখ টাকার তথ্য পেয়েছে সিআইডি। এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত ব্যাংক স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে।
সূত্র বলছে, তেজগাঁওয়ের একটি কার সেন্টারের সঙ্গে পাপিয়া কোটি টাকা বিনিময় করেছেন। গ্রেফতার হওয়ার আগের দুই মাসে পাপিয়া হোটেল ওয়েস্টিনে তিন কোটি টাকা ব্যয় করেছেন। নরসিংদী কেএমসি এন্টারপ্রাইজে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। জানতে চাইলে সিআইডির ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এ পর্যন্ত আমরা পাপিয়ার যে সম্পদের তথ্য পেয়েছি তা তার আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
বিদেশে পাচার করা টাকার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট একাধিক দেশে তথ্য চাওয়া হয়েছে। স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে শিগগির মামলা করা হবে বলে ডিআইজি ইমতিয়াজ জানান। সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী রাজধানীর ফার্মগেট ইন্দিরা রোডে তাদের দুটি এবং নরসিংদী শহরে আরও দুটি ফ্ল্যাট আছে।
নরসিংদী পৌর এলাকার ব্রাহ্মণদী এলাকায় পাপিয়ার স্বামীর নামে ছয় তলা ও দোতলা দুটি বাড়ি, শহরের বিলাদী মোড়ে ১০ শতাংশ জমি, নরসিংদীর বাগদী এলাকায় দুটি দুই তলা বাড়ি ও দুটি প্লট এবং বিলাসবহুল গাড়ির তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া কালো ও সাদা রঙের দুটি হায়েস মাইক্রোবাস, একটি হ্যারিয়ার, একটি নোয়া, একটি ভিলেজ কার, পাঁচটি মোটরসাইকেল, থাইল্যান্ডে একটি বার থাকার বিষয়েও তথ্য এসেছে। এসব তথ্য যাচাইয়ের পাশাপাশি তাদের আরও সম্পদ খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশত্যাগের সময় পাপিয়াসহ চারজনকে আটক করে র্যাব। গ্রেফতার অন্যরা হলেন : পাপিয়ার স্বামী সুমন চৌধুরী, সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবা। এরপর তাদের নিয়ে ফার্মগেট ও নরসিংদীর বাসায় অভিযান চালিয়ে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ২০টি পিস্তলের গুলি, ৫ বোতল দামি বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেকবই, বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি ভিসা ও এটিএম কার্ড উদ্ধার করে।
পরে তাদের নামে তিনটি মামলা করে র্যাব। একটি মামলা রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় এবং অপর মামলা হয় শেরেবাংলা নগর থানায়। তবে গত ১০ মার্চ মামলা তিনটির তদন্ত র্যাবের হাতে ন্যস্ত করা হয়। ১১ মার্চ পাপিয়া দম্পতিকে তিন মামলায় ১৫ দিন করে রিমান্ডে পাঠান আদালত।
পাপিয়ার দুই সহযোগী ফের রিমান্ডে : শামীমার দুই সহযোগীকে ফের ৩ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। রোববার ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমাম তাদের রিমান্ডে পাঠান। জাল টাকা উদ্ধারে বিমানবন্দর থানায় করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় আসামিদের এ রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
এরা হলেন : সাব্বির খন্দকার ও শেখ তাবিয়া নূর। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামিদের নাম-ঠিকানা যাচাই; জাল টাকাসহ বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ ও বৈদেশিক টাকার উৎসের সন্ধান; জাল টাকা তৈরিতে এবং দেশের অর্থ পাচারের কাজে জড়িত সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্যদের শনাক্তকরণ, অবস্থান নির্ণয় ও গ্রেফতার; অপরাধ জগতে আসার কারণ এবং পেছনের শক্তির সন্ধান; অবৈধ মাদক ও অস্ত্রের ব্যবসা, চোরাচালান, অর্থের বিনিময়ে জমির দখল-বেদখল; অনৈতিক ব্যবসাসহ নানাবিধ অপরাধমূলক কাজের তথ্য-উপাত্ত উদ্ঘাটন ও যাচাই-বাছাইকরণের জন্য আসামিদের প্রত্যেককে ১০ দিন করে রিমান্ডের একান্ত প্রয়োজন। আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান। অপরদিকে আইনজীবী মীর সাখাওয়াত হোসেনসহ কয়েকজন আসামির রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন শুনানি করেন। পরে আদালত আসামিদের ৩ দিনের রিমান্ডে পাঠান।
Discussion about this post