তারা বলছেন, শুধু হুমকিই নয়, খুনিদের দায়ের করা কাউন্টার মামলায় নিহতের ভাই মামলার বাদী মোশারাফ হোসেনকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। মিথ্যা মামলায় জেলও খাটতে হয়েছে তাকে।
মোশারাফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আসামিদের মধ্যে যারা এখনও গ্রেফতার হয়নি, তারা প্রতিনিয়ত আমার পরিবারকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে।
‘পুলিশও মামলাটি নিয়ে কথা না বলতে বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছে’ অভিযোগ করেন তিনি।
মোশারাফ বলেন, হুমকির বিষয়ে ভাষানটেক থানায় পৃথক তিনটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও মিরপুর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোন সমাধান পাইনি। এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
গত বছরের ৯ অক্টোবর রাজধানীর ভাষানটেক থানা এলাকায় মামাতো বোনকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় নাছির (২৫) নামে এক তরুণকে পিটিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
ওইদিন রাতেই নগর পুলিশের ভাষানটেক থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নাছিরের ভাই মোশারাফ।
পুলিশ সূত্র জানায়, নাছির হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৪ জনকে আসামি করে ওই হত্যা মামলাটি করা হয়। এ ঘটনায় এজহারভুক্ত ছয় আসামিকে গ্রেফতার করেছে
পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুরাদ হোসেন বলেন, এ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি বাবলু, শরীফসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
‘এরমধ্যে তিনজন জামিনে বের হয়ে পলাতক রয়েছেন। বাকিরাও পলাতক। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
চার্জশিট বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুরাদ হোসেন বলেন, সব আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় চার্জশিট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
মামলার বাদী মোশারাফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন,‘হুমকির মুখেও ভাই হত্যার মামলা তুলে নিইনি। এনিয়ে তারা (আসামি) তো আমায় হুমকি দিচ্ছেই,
এমনকি পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশে নাছির হত্যার আসামি মামুনের বড়ভাই জহির আহমেদ ওরফে বালু জহির আমার বিরুদ্ধে তিনটি মিথ্যা মামলা দিয়েছে।’
‘ভাই হত্যার বিচার না পেলেও মিথ্যা মামলায় ৯ দিন জেল খাটতে হয়েছে’ যোগ করেন তিনি।
তবে হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন হত্যা মামলার আসামি মামুনের ভাই বালু জহির।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন,‘আমি মোশারাফকে কোনো হুমকি দিইনি। মামলায় আমার ভাই মামুনের নাম থাকায় আমি নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছি।’
‘ভাই আসামি হওয়ায় মোশারাফ আমাকে মামলার চার্জশিটে নাম জড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে বারবার চাঁদা দাবি করেছেন। এজন্য আমি তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেছি,’ দাবি করেন বালু জহির।
মামলা তুলে নিতে পুলিশের ‘চাপ’ প্রসঙ্গে নগর পুলিশের ভাষানটেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, মামলাটি এখন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে। মামলা তুলে নিতে বাদীকে কোনো চাপ দেওয়া হচ্ছে না।
এদিকে স্থানীয় লোকজন বলছেন, নাসির হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেন বালু জহিরের ভাই মামুন। কিন্তু তিনি এখনও পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী বলেন,‘ পুলিশের চোখে মামুন পলাতক হলেও প্রকাশ্যে ভাষানটেক এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের সখ্যতার কারণে গত বছর ভাষানটেক এলাকায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে যায়।
নাসির হত্যাকাণ্ডের পর দায়িত্বে অবহেলার কারণে ওই বছরের ১৩ অক্টোবর ভাষানটেক ফাঁড়ির একজন এসআই, পাঁচজন এএসআই ও ১৩ জন কনস্টেবলকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
একই অভিযোগে ভাষানটেক থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম নবীকেও প্রত্যাহার করা হয়। এক পর্যায়ে থানার ওসি হোসনেআরাকেও প্রত্যাহার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
Discussion about this post