মামলা সংকটে শেয়ারবাজার সংক্রান্ত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। ১৯টি মামলার মধ্যে বর্তমানে ১৬টির ওপর উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে। মাত্র তিনটির বিচার কাজ চলছে। ফলে ট্রাইব্যুনাল অনেকটাই নিষ্ক্রিয়।
সম্প্রতি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আকবর আলী শেখ সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ তথ্য উল্লেখ করেন।
তবে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বলছে, তারা মামলা নিয়ে আসার চেষ্টা করছে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, যেসব মামলায় উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে, সেসব মামলা ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে বিএসইসি। এ ক্ষেত্রে আন্তরিকতার অভাব নেই।
জানা গেছে, ২০১০ সালে বাজারে ধসের পর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির তদন্ত কমিটির সুপারিশে ২০১৫ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এরপর এ পর্যন্ত ২৪টি মামলা ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এসব মামলায় আসামি ব্যাংক ও আর্থিক খাতে অত্যন্ত প্রভাবশালী। এর মধ্যে রয়েছেন বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, র্যাংগস গ্রুপের চেয়ারম্যান এ রউফ চৌধুরী, এইচআরসি গ্রুপের চেয়ারম্যান সাঈদ হোসেন চৌধুরী, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক প্রেসিডেন্ট রকিবুর রহমান, ডিএসইর মেম্বার শাহদুল হক বুলবুল প্রমুখ। এর মধ্যে ৫টি মামলার রায় হয়েছে। এতে উল্লেখযোগ্য কোনো আসামি নেই।
এ ছাড়া একটি মামলার রায়ের দিন ঘোষণা করা সত্ত্বেও উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে ট্রাইব্যুনাল সে রায় ঘোষণা করতে পারেননি। বিচারিক ক্ষমতা না থাকায় ২টি মামলা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ফেরত দেয়া হয়েছে। ১৬টি মামলা উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।
এ ব্যাপারে বিএসইসির প্যানেল আইনজীবী মাসুদ রানা বলেন, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে অনেক মামলার বিচার ট্রাইব্যুনালে শুরু করা যাচ্ছে না। এসব মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে বিএসইসিকে উদ্যোগ নিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯২-২০১৫ সাল পর্যন্ত শেয়ার কারসাজি ও সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের কারণে বিএসইসির করা মামলাগুলো এ বিশেষ ট্রাইব্যুনালের আওতায় নিষ্পত্তি হবে।
বর্তমানে বিএসইসির মোট ৫৩৫টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে ১৭টি, হাইকোর্ট বিভাগে ২২১টি, স্পেশাল জজ কোর্ট এবং পরিবেশ আপিল আদালত ঢাকায় একটি, তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা জজ কোর্টে ৬টি, মহানগর দায়রা জজ কোর্টে ৯টি, মহানগর দায়রা জজ প্রথম অতিরিক্ত কোর্টে তিনটি, মহানগর দায়রা জজ দ্বিতীয় অতিরিক্ত কোর্টে ২টি, মহানগর দায়রা জজ পঞ্চম অতিরিক্ত কোর্টে ২টি, মহানগর সহকারী দায়রা জজ প্রথম অতিরিক্ত কোর্টে ১টি, চতুর্থ যুগ্ম জেলা জজ কোর্টে ১টি, পঞ্চম যুগ্ম জেলা জজ কোর্টে ৯টি, চতুর্থ সহকারী জজ কোর্টে ১টি, নবাবগঞ্জ সহকারী জজ কোর্টে ১টি, মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ৬টি, শ্রম আদালতে ২টি, জেনারেল সার্টিফিকেট কোর্টে ২৫৩টি মামলা বিচারাধীন। তবে সার্টিফিকেট মামলাগুলো বিচার প্রচলিত আদালতে হবে।
এ হিসাবে এখন পর্যন্ত আড়াইশ’র বেশি মামলা ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তি হওয়ার কথা। কিন্তু প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না থাকায় ট্রাইব্যুনালে এসব মামলা স্থানান্তরিত হচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে ট্রাইব্যুনাল গঠনের লক্ষ্য অর্জন নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া উচিত। এ কারণে ট্রাইব্যুনালে মামলাগুলো যাতে স্থানান্তরিত হয় সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে বিএসইসি। নতুন আইনে ট্রাইব্যুনালে সরাসরি মামলা করার সুযোগ দেয়া হবে। এ ছাড়া চার্জ গঠনের ১৮০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির বিধান থাকছে।
এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য কারণ ছাড়া মামলা স্থানান্তর করা যাবে না। শেয়ারবাজারে কারসাজির ঘটনা বিচারে সাধারণত নিন্ম আদালতে মামলা করে বিএসইসি। নিন্ম আদালতের বিচারিক কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতার কারণে বহুদিন ধরে এ সংক্রান্ত অনেক মামলা ঝুলে আছে।
Discussion about this post