ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডেইলি স্টার’-এর সম্পাদক ও প্রকাশক মাহ্ফুজ আনামের বিরুদ্ধে মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে প্রায় অর্ধশত মামলা দায়েরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস (আইএফজে)।
সাংবাদিকদের এই আন্তর্জাতিক সংগঠনটি গতকাল মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে বলেছে, মাহ্ফুজ আনামের বিরুদ্ধে মামলা বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর পরিষ্কারভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শনের শামিল।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক সংকটের সময় জনস্বার্থে সংবাদ প্রকাশের ফলে মাহ্ফুজ আনামের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাঁকে হয়রানির কারণে আইএফজে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। সারা দেশে তাঁর বিরুদ্ধে বিপুলসংখ্যক মামলা দায়ের এই ইঙ্গিতই বহন করে যে, এটা দেশের জ্যেষ্ঠ একজন সম্পাদক এবং শীর্ষস্থানীয় একটি সংবাদপত্রকে হয়রানি করতে আক্রমণাত্মক রাজনৈতিক চেষ্টা।
মাহ্ফুজ আনামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোর বাদী ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গ-সহযোগী ও সমমনা সংগঠনের নেতা ও আইনজীবীরা। এসব মামলার কোনোটা মানহানির অভিযোগে, কোনোটা রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে, আবার কোথাও কোথাও মানহানির পাশাপাশি রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মাহ্ফুজ আনামের বিরুদ্ধে করা বেশির ভাগ মামলার অভিযোগ প্রায় একই রকম। এক-এগারোর সময় একটি গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশনা বাস্তবায়নে গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে এবং আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে ‘ডেইলি স্টার’-এর সম্পাদক তাঁর পত্রিকায় মিথ্যা, বিকৃত ও মানহানিকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে এক-এগারোর সময় সংবাদ প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের বিচ্যুতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মাহ্ফুজ আনাম তাঁর পত্রিকায়ও এমন ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছিল বলে স্বীকার করেন। পরদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তাঁর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় নিজের ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে ‘ডেইলি স্টার’-এর সম্পাদকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তুলে তাঁর (মাহ্ফুজ আনাম) বিচার চান। এক দিন পর ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে কয়েকজন সাংসদ ‘ডেইলি স্টার’ বন্ধ এবং মাহ্ফুজ আনামের পদত্যাগ ও বিচার দাবি করেন। এর পরদিন থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেওয়া হচ্ছে।
Discussion about this post