মা ফাতেমা খাতুনের গর্ভে ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিলো সে। আর কয়েক মাস পরেই পৃথিবীর আলো দেখার কথা তার। কিন্তু একটু আগেভাগেই চলে এসেছে সে।
কিন্তু বিধি বাম, পৃথিবীর মুখ দেখা হলো না। এর আগেই আলো নিভে গেলো! মৃত জন্ম নিলো শিশুটি। মায়ের ওপর হয়ে যাওয়া নির্যাতন সহ্য হয়নি তার। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন হতভাগ্য মাও।
লোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটেছে বন্দরনগরী কর্ণফুলী থানার বড় উঠানের শাহ মিরপুর এলাকায়। বড় উঠান ইউনিয়ন (ইউপি) পরিষদের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচন পূর্ব সংঘাতের জেরে পৃথিবীর আলো দেখা হয়নি শিশুটির।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, শুক্রবার (২৭ মে) জুমার নামাজের পর ব্যানার ছেঁড়া নিয়ে দ্বন্ধের জের ধরে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
আসন্ন বড় উঠান ইউপি’র আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দিদারুল আলম (নৌকা প্রতীক) দিদারের সমর্থকদের সঙ্গে দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী শাহাজাহানের (টেলিফোন প্রতীক) সমর্থকদের মধ্যে এ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এক পর্যায়ে নৌকা প্রার্থীর সমর্থক আমির হোসেনকে মারতে তার ঘরে হামলা চালান বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকেরা। এ সময় স্বামীকে বাঁচাতে ছুঁটে আসেন ছয় মাসের অন্তঃসত্তা ফাতেমা খাতুন। আর তখনই তার পেটে প্রথমে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকেরা। পরে পেটে লাথিও মারেন তারা। এতে গুরুতর আহত হয়ে পড়েন ফাতেমা।
তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়িতেই প্রসব করানো হয় ফাতেমার। এ সময় মৃত সন্তান প্রসব করেন তিনি। তবে বাচ্চাটি মেয়ে না ছেলে ছিল তা নিশ্চিত করতে পারেনি স্থানীয়রা।
কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যানার ছেঁড়া নিয়ে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। এক পক্ষের হামলায় ফাতেমা খাতুন নামের এক অন্তঃসত্তা গুরুতর আহত হন। পরে মৃত বাচ্চা প্রসব করেন তিনি।’
‘আমরা বাচ্চাটিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৮-৯ জন, তাদেরও চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
ওসি বলেন, ‘এখনও আমরা অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে মামলা নেওয়া হবে। আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চলছে।’
এদিকে এ ঘটনায় আহত ৮ জনকে চমেক হাসপাতালে আনা হয়েছে। তারা হলৈন- ফাতেমা খাতুন, আমির হোসেন, লাকি আক্তার, শাহজাহান, আবদুস সবুর, নুর জাহান, আব্দুর রহিম ও আব্দুল মালেক।
তাদের হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চমেক পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক আবদুল হামিদ।
২৮ মে (শনিবার) বড় উঠানসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ৫৬ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
Discussion about this post