মিয়ানমারে নতুন করে শুরু হওয়া কথিত সেনা-রোহিঙ্গা সংঘর্ষে ২৮ জন নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে সে দেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম। মাসব্যাপী উত্তেজনার ধারাবাহিকতায় রবিবার সকালে পূর্বাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে ওই সংঘর্ষ হয়।
এর একদিন আগে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিপীড়নের স্যালেলাইট ইমেজ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
২০১২ সালে ওই রাজ্যের জাতিগত দাঙ্গায় শতাধিক রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত হওয়ার পর সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সেখানে চরম উত্তেজনা দেখা গেছে। অক্টোবর মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় নয় পুলিশ সদস্য নিহত হয়। দুই দিনের মাথায় ১১ অক্টোবর মঙ্গলবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরও ১২ জনের মৃত্যুর কথা জানায়। তারা দাবি করে, প্রায় ৩০০ মানুষ পিস্তল এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে সৈন্যদের উপর আক্রমণ করলে সেনাবাহিনী পাল্টা আক্রমণ করে।
মিয়ানমার সরকার কথিত এইসব সংঘর্ষকে হামলাকারীদের খোঁজে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ হিসেবে অভিহিত করছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী রাখাইন রাজ্যে জাতিগত দমনপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেখানে ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া, নারীদের ধর্ষণসহ নানান ধারার শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন চলছে।
শনিবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২২ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে উত্তরাঞ্চলীয় মংগদাউ জেলার তিনটি গ্রামের ৪৩০টি ভবন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিসযক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘নতুন স্যাটেলাইট ইমেজ রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে ব্যাপক ধ্বংস যজ্ঞের নিদর্শনই কেবল প্রকাশ করেনি বরং এটাও নিশ্চিত করেছে যে আমরা আগে যা ভেবেছিলাম পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়াবহ’।
বরিবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন প্রথমে জানায়, রাখাইন রাজ্যের উত্তারাঞ্চলের এক গ্রামে বন্দুক ও ছুরি নিয়ে সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালায় একদল সশস্ত্র রোহিঙ্গারা। ওই ঘটনায় এক সেনাকর্মকর্তা এবং একজন জওয়ানসহ ৬ বেকসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার খবর দেয় তারা।
এরপর অপর এক প্রতিবেদনে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, শনিবার সৈন্যদের ওপর একদল লোক আগ্নেয়াস্ত্র, ছুরি এবং বল্লম নিয়ে হামলা চালানোয় দুজন সৈন্য এবং ছয়জন হামলাকারী নিহত হবার পর, ঐ এলাকায় হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়।সরকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একপর্যায়ে প্রায় ৫০০ মানুষ সেনাদলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে, সৈন্যদের সাহায্যার্থে দুটি হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে রোহিঙ্গা গ্রামে গুলি চালানো হয়।
অনলাইনে প্রকাশিত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এক বিবৃতির বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার সোমবারের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, দার গি জার নামের ওিই গ্রামে ধারালো অস্ত্র হাতে সেনাদের ওপর হামলা চালায় ২২ হামলাকারী। সে সময় সেনাবাহিনীর গুলিতে তারা নিহত হয়। এছাড়া বাকী ৬ জন রাখাইন রাজ্যের অন্যস্থানে সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালাতে গিয়ে নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে সেনাবিবৃতিতে।
প্রসঙ্গত রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না মিয়ানমার সরকার। সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা মনে করে রোহিঙ্গা মুসলমানরা বাংলাদেশ থেকে সেখানে গেছে। গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসবার পরও এই বাস্তবতার বদল ঘটেনি। বরং নির্বাচনের আগে-পরে ফাঁস হয়েছে কোদ সু চির মুসলিমবিদ্বেষের নানা দিক। নির্বাচনে তিনি মুসলমানদের প্রার্থী করেননি। ‘রোহিঙ্গা’ পরিচয়টিও অস্বীকার করেন সুচি।
এদিকে রাখাইন রাজ্যে এ সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সবগুলো পক্ষকে সংযম দেখানোর আহবান করেছে সংস্থাটি।
Discussion about this post