প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে (এস কে সিনহা) বাদ দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর আপিল মামলার শুনানি পুনরায় করার দাবি জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইমলাম।
‘একাত্তরের গণহত্যাকারীদের বিচারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, সরকার, বিচার বিভাগ ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে ৫ সদস্যের আপিল বেঞ্চ আগামী মঙ্গলবার (০৮ মার্চ) মীর কাসেম আলীর আপিল মামলার চূড়ান্ত রায় দেবেন।
মুক্তিযুদ্ধকালে জামায়াতের কিলিং স্কোয়ার্ড আলবদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষ নেতা ও ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক মীর কাসেমকে ২০১৪ সালের ০২ নভেম্বর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে তিনি আপিল করেন। এ আপিল মামলার শুনানি শেষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রায়ের দিন ০৮ মার্চ ধার্য করেন সর্বোচ্চ আদালত।
গোলটেবিল আলোচনার প্রধান আলোচক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এই মামলার রায় কী হবে তা প্রধান বিচারপতি প্রকাশ্য আদালতে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আমি অনুধাবন করছি, এই রায় রাষ্ট্রপক্ষের বিপক্ষে যাবে। মামলায় আর মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
‘আমার বিশ্বাস, প্রধান বিচারপতি তার এ বক্তব্য থেকে বের হতে পারবেন না। হয় তিনি আসামিকে খালাস দেবেন, নয় সাজা কমিয়ে দেবেন অথবা মামলা পুনর্বিবেচনায় পাঠাবেন। মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার কোনো উপায় নেই তার’।
তিনি বলেন, এরপরও যদি আপিল মামলার রায়ে মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে, তাহলে সবাই ভাববেন, সরকার চাপ দিয়ে এই কাজ করিয়েছে। তাই আমি দাবি জানাচ্ছি যে, প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে মীর কাসেম আলীর আপিল মামলার শুনানি পুনরায় করা হোক’।
প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করে অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘৪৫ বছরে বাংলাদেশে অনেক বিচারপতি এসেছেন-গেছেন। কিন্তু কেউ তার মতো এতো অতিবক্তব্য দেননি। তার অতিকথনে সুধী সমাজের মানুষেরা জিহ্বায় কামড় দিচ্ছেন’।
‘তাই আমি তাকে (প্রধান বিচারপতি) অতিকথন থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি। আর তা না হলে সরকারের নতুন করে বিকল্প চিন্তা করা উচিত বলেও আমি মনে করি’- বলেন তিনি।
গোলটেবিল আলোচনায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমেরও সমালোচনা করেন খাদ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, তার (অ্যাটর্নি জেনারেল) দায়িত্ব হচ্ছে, রাষ্ট্রপক্ষের মামলা পরিচালনা করা। কিন্তু তিনিও একই সুরে কথা বলছেন। কোথায় যাবো?
‘কারো সমালোচনা করতে আমরা এখানে বসিনি, বসেছি বিচারের (মীর কাসেম আলী) দাবিতে। মীর কাসেম আলী কনডেম সেলে থাকলেও তার অর্থ বাইরে সক্রিয়, তার বিরাট কর্মী বাহিনীও সক্রিয়। যার ফলশ্রুতিতে আজ তার রায় নিয়ে এতো কথা উঠেছে’।
আলোচনায় মীর কাসেম আলীর মামলার আপিল রায় নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বলছি, এ রায় নিয়ে শঙ্কা এখন একটি সঙ্কটে পরিণত হয়েছে। তবে এ সঙ্কট আমাদের সৃষ্ট নয়। সঙ্কট সৃষ্টি করেছেন আমাদের প্রধান বিচারপতি। এটাই আমাদের দুঃখ’।
গোলটেবিল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের পরিচালনায় গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য দেন- শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি শামসুল হুদা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের ভাইস চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মুফিদুল হক, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, সাংবাদিক স্বদেশ রায়, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট জেয়াদ আল মালুম, তুরিন আফরোজ প্রমুখ।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানবতাবিরোধী অপরাধের মূল হোতা মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে আটজনকে নির্যাতনের পর হত্যা ও মরদেহ গুম এবং ২৪ জনকে অপহরণের পর চট্টগ্রামের বিভিন্ন নির্যাতনকেন্দ্রে আটকে রেখে নির্যাতনের ১৪টি অভিযোগ আনা হয় ট্রাইব্যুনালে। রায়ে প্রমাণিত ১০টি অপরাধের মধ্যে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন, রঞ্জিত দাস লাতু ও টুন্টু সেন রাজুসহ আটজনকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং অন্য ৮টি অভিযোগে আরও ৭২ বছরের কারাদণ্ডাদেশ পান তিনি।
Discussion about this post