মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের প্রভাবশালী নেতা ও একাত্তরে চট্টগ্রামের আলবদরপ্রধান মীর কাসেম আলীর নিয়োগ করা লবিস্ট ফার্মের খবর জানতে নিউ ইয়র্কে এসেছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। গত কয়েকদিন ধরেই ম্যানহাটানের একটি বিলাসবহুল হোটেলে মীর কাসেম আলীর পরিবার ও মার্কিন আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। স্থানীয় আওয়ামীলীগের একটি সুত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের গোপন এ বৈঠকের কথা ফাঁস হলে প্রবাসীদের মাঝে ব্যপাক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত সোমবার রাত ১১টার পর ম্যানহাটানের ১২৫ ইস্ট ও ৫০ স্ট্রিটের বেঞ্জামিন হোটেল ঢুকে লাউঞ্চে বসে ব্যারিস্টার রাজ্জাক প্রকাশ্যে মীর কাসেম আলীর পরিবার ও মার্কিন আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া মতিউর রহমান নিজামীর এক ছেলে ও মীর কাসেম আলীর ছোট ভাই মীর মাসুম আলী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মুসলিম উম্মাহ ও জামাতের সংগঠন ‘কোয়ালিশন অব বাংলাদেশি আমেরিকান এসোসিয়েশনের বেশ কয়েকজন নেতাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের সূত্রটি জানিয়েছে, যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধে মার্কিন প্রশাসনকে প্রভাবিত করার জন্য একটি লবিং ফার্মকে কয়েক বছরে মোটা অংকের অর্থ দিয়েছেন নিউইয়র্ক প্রবাসী মীর কাসেম আলীর ভাই মীর মাসুম।
সম্প্রতি গুলশানের আর্টিসান রেস্টুরেন্টে বর্বর হত্যাকাণ্ড ও শোলাকিয়ার ঈদ জামাতে সন্ত্রাসী হামলার পর ব্যারিস্টার রাজ্জাকের নিউইয়র্ক সফরের বিষয়টি নজরে রাখছে বাংলাদেশ সরকার। নিউইয়র্ক কন্স্যুলেটের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিষয়টি মনিটরিং করে ইতোমধ্যেই ঢাকাকে অবহিত করেছেন।
সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে আপিল নিষ্পত্তি হওয়ায় পাঁচ বিচারপতি পূর্ণাঙ্গ রায়ে সই করেন। এর পর মীর কাসেম আলীর ফাঁসির দণ্ডের রায় প্রকাশ করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটেও এটি আপ করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায়ে ট্রাইব্যুনালে মীর কাসেম আলীর বিচার চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী প্রসিকিউটরদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগ। পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপিসহ একাত্তরে চট্টগ্রামে ‘বাঙালি খান’ নামে কুখ্যাত মীর কাসেম আলীর মৃত্যু পরোয়ানা এরইমধ্যে পাঠানো হয়েছে কারাগারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এবং ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও পাঠানো হয়েছে এর কপি।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বন্ধে মীর কাসেম আলী যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে প্রভাবিত করতে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিলেন এবং ওই লবিস্ট ফার্মকে ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানের কথা উল্লেখ রয়েছে।
বিভিন্ন সুত্র জানায়, মীর কাসেমের ছোটভাই মীর মাসুমসহ ও একটি সংঘবদ্ধ চক্র ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে মানবতবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের প্রভাবশালী নেতা মীর কাসেম আলীর জন্য লবিস্ট ফার্ম নিয়োগের কথা উল্লেখ করলেও এর অধিকাংশ অর্থই তসরুপ করেছেন। এসব অর্থ হালাল করতেই নিউ ইয়র্কে এসেছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।
এছাড়াও মীর কাসেমের নিজস্ব অর্থায়নে মীর মাসুম নিউইয়র্কে একটি টেলিভিশন চ্যানেলও চালু করেন অভিযোগ বলে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে প্রভাবিত করা এবং বাংলাদেশের সরকার বিরোধী প্রচারণা চালানোর প্রধান দায়িত্ব ছিল ওই লবিস্ট ফার্ম ও টিভি চ্যানেলটির। কিন্তু লবিস্ট ফার্ম ও টিভি চ্যানেল তার কোনো কাজেই আসেনি। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড থেকে কোনভাবেই আর রেহাই পাচ্ছেন না মীর কাসেম আলী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মীর মাসুম আলী প্রতিষ্ঠিত চ্যানেলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীসহ প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধারা এর বিরোধিতা করে আসছিলেন। কিন্তু এখন আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীসহ মুক্তিযোদ্ধারা নিয়মিত উক্ত চ্যানেলের টক শোতে অংশগ্রহণ করেন। এ নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
Discussion about this post