পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রায় মুখোশ না পরার অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
সোমবার (১১ এপ্রিল) সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার আরও জানান, পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে নিশ্চ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মঙ্গল শোভাযাত্রায় কেউ যেন মুখোশ না পরেন আয়োজকদের সে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে শোভাযাত্রা উপলক্ষে তৈরি মুখোশ হাতে রাখা যাবে।
কিছু কিছু কোম্পানি তাদের প্রচারণার জন্য চুক্তি ভিত্তিতে লোক নিয়োগ করেন একই ধরনের টি-শার্ট পরে শোভাযাত্রায় অংশ নিতে।
এই সুযোগ নিয়ে দুর্বৃত্তরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এবছর সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখা হবে। শোভাযাত্রার ভেতরে, সামনে এবং পেছনে আমাদের বিশেষায়িত দল সোয়াট টিম নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে, বলেন তিনি।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে রমনা-শাহবাগ-টিএসসিসহ পুরো এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং টিএসসিতে তিনটি কন্ট্রোল রুম করা হবে। সেখানে থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাবে দায়িত্ব পালনকারী সদস্যরা। ওই এলাকায় নয়টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে।
এসময় গত বছরের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ওই ঘটনার তদন্তসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, এবছর যেন কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। ইভটিজিং-পকেটমার প্রতিরোধ করতে সোয়াট টিমের পাশাপাশি পোশাকি পুলিশ এবং ডিবি মাঠে থাকবে। থাকবে সেন্ট্রাল মাইকিং সিস্টেম।
রমনা পার্ক এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশে এবার নারী-পুরুষের আলাদা লাইন থাকবে। প্রবেশ গেটে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা থাকবে যেন কাউকে হয়রানির শিকার হতে না হয়।
পাশাপাশি ওই এলাকার ফুটপাত এবং রাস্তা হকার মুক্ত রাখা হবে। আমাদের লস্ট ফর কল সেন্টার থাকবে। কোনো শিশু হারিয়ে গেলে সেখানে অভিযোগ জানানো যাবে। এছাড়াও যেকোনো প্রয়োজনে ডিএমপি’র তাৎক্ষণিক সহায়তা পাওয়া যাবে, যোগ করেন তিনি।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, শাহবাগ, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী, রমনা এলাকায় বিনামূল্যে মিনারেল ওয়াটার সরবরাহ করবে ডিএমপি। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আটটি স্থানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে।
তিনি বলেন,এবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে সব ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে। তবে সন্ধ্যার পরে রাস্তায় হাঁটতে, রেস্তোরাঁয়া বসে গল্প করতে কোনো নিষেধ নেই। ইনডেরে সব অনুষ্ঠান করা যাবে, শুধুমাত্র উন্মুক্ত স্থানে বড় ধরনের গানের কনসার্ট বা অনুষ্ঠান করা যাবে না। সন্ধ্যার পরে বাড়ির ছাদে এবং রেস্তোরাঁয় আপনার উৎসব উদযাপন করুন, পুলিশ আপনাদের নিরাপত্তা দেবে।
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, এবার নগরবাসীর বিনোদনের জন্য প্রথমবারের মতো হাতিরঝিলে নৌকা বাইচের আয়োজন থাকছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে কোনো ধরনের হুমকি নেই। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে ১৩ এপ্রিল ভোর ছয়টা থেকে ১৪ এপ্রিল রাত নয়টা পর্যন্ত শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টিকারযুক্ত গাড়ি রমনা-শাহবাগ-ঢাবি এলাকায় চলাচল করতে পারেব।
শব্দ দূষণ রোধ করতে এবার ভুভুজেলা উৎপাদনও বিক্রি সম্পূন্নভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি অ্যান্ড প্রসিকিউশন) দিদার আহমেদ, ক্রাইম অ্যান্ড অপস শেখ মুহাম্মদ মারুফ হাসান, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমস ইউনিটের মো. মনিরুল ইসলাম, অপসের যুগ্ম কমিশনার মীর রেজাউল আলম ও অপরাধ বিভাগের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়।
Discussion about this post