নাসরীন সুলতানা
বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন এবং ধর্মীয় আশীর্বাদ সম্বলিত একটি দেওয়ানী চুক্তি। অনান্য চুক্তির মতই এখানে দু’পক্ষ থাকে। এক পক্ষ প্রস্তাব করে অন্য পক্ষ প্রস্তাব গ্রহণ করে। দু’জনকেই আইনগত কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলের বয়স ২১ বছর, মেয়ের ক্ষেত্রে ১৮ বছর হওয়া একান্ত আবশ্যক। বিয়েতে উভয়ের সম্মতি থাকতে হবে। দু’জনপ্রাপ্ত বয়স্ক ও সুস্থ্য মস্তিষ্কের অধিকারী সাক্ষী থাকতে হবে।
প্রতিটি বিয়ে অবশ্যই নিবন্ধিত হতে হবে। নিবন্ধন হলো বিয়ের আইনানুগ দলিল। সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিয়ে পরবর্তী সময়ে একজন নারীকে অনেক উঁচু সামাজিক মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ইসলামী আইনে বিয়ের সামাজিক এবং ধর্মীয় গুরুত্ব অনেক।
বিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পারিক কর্তব্য ও দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করে। দায়িত্ব বোধের এই বিয়ের বন্ধনই অন্য যে কোন চুক্তির চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। “দেনমোহর (যা) তোমরা স্ত্রীকে স্পর্শ করার আগেই দেনমোহর নির্ধারণ করবে।” -সুরা বাকারা, আয়াত-২৬৬।
ইসলাম ধর্মে বিয়েকে সমাজের ভিত্তিরূপে গণ্য করা হয়। বিয়ে একটি সামাজিক চুক্তি হলেও এটি একটি পবিত্র সম্পর্ক। বিয়ের মাধ্যমেই মানব জন্মের শ্বাশ্বত ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয়। বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন হচ্ছে বিয়ের দলিল। বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। কাবিনে বর-কনে উভয়ের তথ্য লেখা থাকে। এতে বর-কনে উভয়ের এবং স্বাক্ষীগণসহ কাজী স্বাক্ষর করেন। মুসলিম বিয়ে রেজিষ্টেশন হচ্ছে নিকাহনামা অথবা কাবিন। ইসলামী বিধান মোতাবেক বৈবাহিক জীবনে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়-দায়িত্ব, অধিকার রয়েছে। তেমনি স্বামীর প্রতিও স্ত্রীর একই সমান অধিকার ও দায়-দায়িত্ব রয়েছে। একজন নারীর অধিকার প্রাপ্তিতে বিয়ের ক্ষেত্রে স্বামীর কাছ থেকে দেনমোহরের অধিকারী হয়। “বিয়েকে বৈধ করার জন্য দেনমোহর একটি অন্যতম অনুসঙ্গ” বিয়ের পর স্ত্রী তাঁর স্বামীর পক্ষ থেকে আর্থিক শ্চিয়তা হিসেবে মোহরানা পাওয়ার অধিকারী। আল-কোরআনে বিয়ে উপলক্ষে নারীকে (স্ত্রী) সন্তুষ্ট চিত্তে মোহরানা প্রদান করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। (সুরা-নিসা, আয়াত-০৪)
বিয়েতে আল্লাহতায়ালা কর্তৃক নির্দেশিত অপরিহার্য প্রদেয় হিসেবে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী যে অর্থ সম্পদ অর্জন করে থাকেন এটাই মোহরানা। বিয়ের পর ভবিষ্যতে যাতে স্ত্রীকে সম্মানীয় অভিজাত নারী হিসেবে দেখেন – এর প্রতীক স্বরূপ স্বামী এ- দেনমোহর প্রদান করেন।
প্রতিটি মুসলিম পুরুষের জন্য বিয়ের সময় ধার্যকৃত মোহরানা আদায় করা একটি বাধ্যবাধ্যকতা। মুসলমানদের বিয়ের ক্ষেত্রে দেনমোহর একটি ধর্মীয় বিধান হলেও এটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবন্ধ থাকে। “মোহরানা” ঋণের সমতুল্য।এটি একটি অরক্ষিত ঋণ।
দেনমোহরের গুরুত্ব সম্পর্কে বলা যায়, কোন অনিবার্য কারণে স্বামী তাঁর জীবদ্দশায় স্ত্রীর মোহর পরিশোধ না করে ইন্তেকাল করলে স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁকে কবরস্থ করার প্রয়োজনীয় খরচাদি নির্বাহ করার পর স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে স্ত্রীর প্রাপ্য, অপরিশোধিত মোহরানা স্ত্রীকে দিতে হবে। কারণ স্ত্রীর প্রাপ্য মোহরানা স্বামীর নামে ঋণ হয়ে আছে । বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, স্ত্রী উত্তরাধিকার হিসেবে স্বামীর সম্পত্তিতে তাঁর প্রাপ্য অংশও পাবে।
দেনমোহর স্ত্রীর কাছে স্বামীর জামানতবিহিন ঋণ। স্ত্রীর প্রাপ্য দেনমোহর পরিশোধ করা একজন স্বামীর নৈতিক ও আইনী দায়িত্ব। যা থেকে অব্যাহতি লাভের কোন সুযোগ তাঁর নেই।
মুসলমানদের বিয়ের ক্ষেত্রে দেনমোহর একটি ধর্মীয় বিধান। কিন্তু এটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থাকে। দেনমোহর বা মোহরানা ঋণের সমতুল্য স্বামীর জন্য এটি অরক্ষিত ঋণ ।
ইসলামী বিধান অনুসারে মোহার দুই ধরণের হতে পারে- মোহরে মোআজ্জল বা নগদ প্রদেয় এবং মোহরে গায়রে মুআজ্জল বা বিলম্বে প্রদেয়। প্রথমটি নগদ প্রদান। দ্বিতীয়টি চাহিবা মাত্র দিতে হয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে স্ত্রীকে মোহর প্রদান স্বামীর অন্যতম দায়িত্ব এবং স্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতক অধিকার মোহরানা স্ত্রীর এমনি একটি নায্য প্রাপ্য, যা তিনি স্বামীর সঙ্গে মিলিত ( দৈহিক মিলনের) আগেই পাওনা হন। তবে স্ত্রী স্বেচ্ছায় কিছু সময় দিলে বাকী রাখা যাবে। কিন্তু স্মরণ রাখতে হবে যে, মোহরানার অর্থ আবশ্যিকভাবে পরিশোধ করতে হবে।
বাংলাদেশে মুসলিম বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন বাধ্যতামূলক হলেও হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টানদের ক্ষেত্রে বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন বিধান নেই। তবে কেউ যদি রেজিষ্ট্রেশন চায় তাহলে তা করতে পারবে, কোন বিধি নিষেধ নেই।
Discussion about this post