সালাম মিয়া বর্তমানে মালয়েশিয়া প্রবাসী। তার স্ত্রী বিউটি বেগমের সঙ্গে স্থানীয় এক যুবকের অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আর সেটা দেখে ফেলাই কাল হয়েছে কিশোরী আজিজা খাতুনের। নিজের অপকর্ম ঢাকতে উল্টো আজিজার বিরুদ্ধে মোবাইল চুরির অপবাদ দেন বিউটি বেগম। তারপরও ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে নিজের চাচাতো ভাইসহ কয়েক-জনকে ডেকে এনে আজিজাকে তুলে নিয়ে গায়ে আগুন লাগিয়ে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে।
বিউটি বেগমের চাচাতো ভাই রুবেল মিয়া যে দোকান থেকে কেরোসিন তেল কিনেছিলেন সেই দোকানদার আব্দুর রশিদকেও আটক করেছে পুলিশ। তিনি স্বীকার করেছেন কেরোসিন বিক্রির কথা।
আজিজার বাবা আব্দুস সাত্তার বলছিলেন, ‘আমরা দুই ভাই। ছোট ভাই মালয়েশিয়ায় থাকে। এই সুযোগে আমার ভাইয়ের বউ আরেকজনের সাথে খারাপ সম্পর্ক করেছিল। আজিজা একদিন দেখে ফেলে। ওই দিন বাড়িতে খুব ঝগড়া হয়। এর পর তার (ভাইয়ের বউ) মোবাইল পায় না বলে প্রচার করে। হঠাত্ করে বলে আজিজা ওই মোবাইল নিয়েছে।’
কিশোরী আজিজাকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় শিবপুর থানায় ৪ জনের নাম উল্লেখসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেছেন আব্দুর সাত্তার। এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে আজিজার চাচী বিউটি বেগম, চাচাত ভাই রুবেল মিয়া, বিউটি বেগমের ফুফুশাশুড়ি তমুজা বেগম এবং বিউটি বেগমের মা সানোয়ারা বেগমকে। অপর তিনজন অজ্ঞাত আসামি। এদের মধ্যে পুলিশ বিউটি বেগমের ফুফুশাশুড়ি তমুজা বেগমকে গ্রেফতার করেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রফিকুল ইসলাম জানান, বিউটি বেগমের সাথে যদি কারোর পরকীয়া থেকে থাকে সেটা তদন্তে বের হয়ে আসবে। প্রধান আসামিসহ অন্যান্য আসামিরা পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের একাধিক টিম বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা কেরোসিন বিক্রেতা আবদুর রশিদকে আটক করেছি। বিক্রির কথা সে স্বীকার করেছে। তবে তাকে আসামি করা হয়নি। কারণ এটা বিক্রি তো নিষিদ্ধ না।
আব্দুস সাত্তার বলেন, সারা শরীর যখন আগুনে পুড়েছে তখন চেনার উপায় ছিল না সে কে? আব্দুস সাত্তার জানতে চান কে তুমি? যন্ত্রণায় কাতরানো কণ্ঠস্বর থেকে উত্তর আসে ‘আমি আজিজা আব্বা’। ১২ বছরের কিশোরী আজিজাকে শুক্রবার রাত নয়টার দিকে বাড়ির পিছনে হাত-পা, মুখ বেঁধে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে হত্যা করা হয়। আজিজার বাবা আব্দুস সাত্তার বিবিসি বাংলাকে গতকাল বলেন, ‘আমার বাড়ির পশ্চিম দিকে জঙ্গল আছে সেখানে নিয়ে যায় তারা আমার মেয়েকে। যখন আমি তাকে দেখলাম তখন আমি তাকে চিনতে পারিনি। সে যে কোন মানুষ নাকি অন্য কিছু সেটা আমি বুঝতে পারিনি। এরপর দৌঁড়াদৌঁড়ি শুরু হয়ে গেছে। আমরা নরসিংদী হাসপাতালে নিয়েছি, সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নিলাম। এরপর ভোর পাঁচটায় মারা গেল মেয়েটা।’
গত শনিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে খৈনকুট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী আজিজা খাতুনের লাশ গ্রামের নিজ বাড়িতে আনা হলে এক হূদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। খৈনকুটসহ আশেপাশের গ্রামের শতশত নারী-পুরুষ ও শিশু তাকে এক নজর দেখতে ভিড় জমায়। এ সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে আজিজার বাবা-মাসহ পুরো-পরিবার। পরে শনিবার রাতে জানাজার নামাজ শেষে আজিজাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানানোর জন্য স্থানীয় এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লাসহ দলীয় নেতাকর্মীরা গতকাল তার বাড়িতে ছুটে যান এবং কিছু আর্থিক সহায়তা করেন।
প্রসঙ্গত, একটি মোবাইল ফোন চুরির অপবাদ দিয়ে চাচী বিউটি বেগম গত শুক্রবার সন্ধ্যায় লোকজন নিয়ে কিশোরী আজিজাকে ধরে নিয়ে যায়। বাড়ির কাছে একটি কাঠাঁল বাগানে নিয়ে হাত পা বেঁধে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
Discussion about this post