ভারতে নারী নির্যাতনের এক ভয়াবহ দলিল প্রকাশ করেছে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি। গত দশ বছর ধরে এক নারীর ওপর নানাভাবে হেনস্তা চালিয়ে গেছেন এক উচ্চশিক্ষিত ভারতীয় যুবক। এ ঘটনায় বুধবার ৩২ বছরের ওই যুবককে ১৯ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে টেক্সাসের এক আদালত।
ঘটনার শুরু ২০০৬ সালে। দিল্লির এক কলেজে পড়তে এসে সুন্দরী সহপাঠিনীর প্রেমে পড়েন জিতেন্দ্র। তিনি তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। মেয়েটি এতে রাজি না হওয়ায় পরে তিনি তাকে বিয়ের প্রস্তাবও দেন। কিন্তু মেয়েটি তার সেই প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেন। এতেই জিতেন্দ্রের পৌরুষে ঘা লাগে। এরপর থেকেই তিনি নানাভাবে মেয়েটিকে অপদস্থ করতে থাকেন। মুখ বুঝে সেই নির্যাতন সয়েই ওই কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট ডিগ্রি লাভ করেন ওই ছাত্রী। ২০০৭ সালে ওই তরুণী উচ্চশিক্ষার জন্য ভারত ছেড়ে যুক্তরাষ্টে পাড়ি জমান। ভর্তি হন নিউ ইয়র্ক শহরের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে।
কিন্তু এরপরও জিতেন্দ্রর নির্যাতন থেকে তার রেহাই মেলেনি। ভারতে অবস্থানকারী মেয়েটির বাবাকে অনবরত অপমান করতে থাকেন তিনি। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেন মেয়েটির বাবা। ভারতীয় এক আদালতে দোষীও সাব্যস্থ হয়েছিলেন ওই যুবক। কিন্তু ওই নারীর সঙ্গে তিনি আর কোনো রকমের অসদাচরণ করবেন না, এই মর্মে আদালতে মুচলেকা দেয়ার বিনিময়ে শাস্তি থেকে বেঁচে যান জিতেন্দ্র।
পরে নিউ ইয়র্ক পাড়ি জমান জিতেন্দ্র। তিনি ওই নারী যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন সেখানে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ওই ক্যাম্পাস থেকে দূরে থাকারও নির্দেশ দেয়। ওই ছাত্রী নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে ইটার্নি করার জন্য ক্যালিফোর্নিয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। জিতেন্দ্র সেখানেও তাকে ধাওয়া করেন। পরে তিনি নিউ ইয়র্ক ফিরে এলে, জিতেন্দ্রও সেখানে পাড়ি জমান।
লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে ২০১১ সালে আমেরিকার একটি প্রযুক্তি কোম্পানিতে চাকরি নেন ওই মেয়ে। চাকরির কারণে তিনি টেক্সাসের প্লানো শহরে চলে যান। এরপরও জিতেন্দ্রর হাত থেকে তার মুক্তি মিলেনি। ২০১১-২০১৪ গত চার বছর ধরে সমানে ফোনসহ নানা ধরনের আধুনিক প্রযুক্তির আশ্রয় নিয়ে তার ওপর নির্যাতন চালিয়ে যান ওই যুবক। ২০১৪ সালে ওই নারীর প্লানোর ঠিকানা জোগার করেন জিতেন্দ্র। এরপর মেয়েটির অবর্তমানে তার বাড়িতে তালা ভেঙে প্রবেশ করে তার পাসপোর্ট, সোসাল সিকুরিটি কার্ডসহ প্রয়োজনীয় তথ্যাদি হাতিয়ে নেন। এমনকি তার মূল্যবান অলঙ্কারও বাদ দেননি। ঘটনার দিন মেয়েটির বাড়ির সামনের পার্ক লটে জিতেন্দ্রর গাড়ি দেখে তার এক প্রতিবেশীর সন্দেহ হয়। তখন তিনি প্লানো পুলিশকে খবর দেন এবং পুলিশ এসে তাকে গ্রেপ্তার করে।
Discussion about this post