বিডি ল নিউজঃ
দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও লেখক অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাচ্ছেন। আজ রাতের ফ্লাইটে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাবেন বলে জানা গেছে। তবে ফ্লাইটের নিদিষ্ট সময়সূচি জানা যায়নি।
দুর্বৃত্তদের হামলায় তার স্বামী নিহত হওয়ার পর বন্যার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র সরকার। ওই হামলায় বন্যাও গুরুতর আহত হয়েছেন। এ জন্য সেখানে তার উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হবে। এ বিষয়ে তদারকি করছে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস।
মার্কিন দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, বন্যাকে দেশে ফিরিয়ে নিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে শারীরিক ফিটনেস সার্টিফিকেট চাওয়া হয়েছে। সেটা পেলেই বন্যাকে ফ্লাইটে ওঠানো হবে। অামেরিকায় নিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হবে।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে বন্যার স্বামী অভিজিৎ রায় নিহত হন। মারাত্বক আহত হয়ে বন্যাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ওইদিন রাত আড়াইটার দিকে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
বন্যার ফিরে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অভিজিতের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক অজয় রায়। তিনি জানান, ‘বন্যাকে সম্পুর্ণভাবে মার্কিন অ্যাম্বাসি দেখভাল করছেন। সেখানে আমাদের কিছুই করার নেই। আর তাদের অগোচরে বেশি কিছু বলতেও পারব না। তবে সোমবার সকালের দিকে স্কয়ার হাসপাতালে বন্যাকে দেখতে গিয়েছিলাম। দেখলাম মার্কিন অ্যাম্বাসির লোকজন তাকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য জোর কাজ চালাচ্ছেন। বাংলাদেশে বন্যার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র সরকার। তাই তারা বন্যাকে সে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অ্যাম্বেসি ইতিমধ্যে সব রকম ব্যবস্থা করে রেখেছে। এক্ষেত্রে বন্যা বিমানে যাত্রা করতে পারবেন কি না- সেজন্য ফিটনেস সার্টিফিকেট চাওয়া হয়েছে। সেটা মিললেই হয়তো তাকে দেশে ফিরিয়ে নেবেন। তবে আমি দেখে এসেছি বর্তমানে বন্যার অবস্থা উন্নতির দিকে। আজ রাতেই তাকে নিয়ে যাওয়া হবে। তবে রাত কয়টায় ফ্লাইট, তা জানানো হয়নি।’
বন্যাকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হলে মামলার কোনো ক্ষতি হবে কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে অজয় রায় আরো বলেন, ‘বন্যাতো মার্কিন সিটিজেনশিপ। সুতরাং সে তো দেশে ফিরে যাবে। আর মামলার ক্ষেত্রে মনে হয় না কোনো ক্ষতি হবে। কারণ এরই মধ্যে বন্যার কয়েক দফা জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। র্যাব, পুলিশের পাশাপাশি, গোয়েন্দা ও সিআইডি বিভাগও রেকর্ড সংগ্রহ করেছে। এছাড়া আদালতে যদি কখনো বন্যার প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে মার্কিন দূতাবাসের সহযোগিতায় বন্যাকে বাংলাদেশে আনা সম্ভব হবে। তবে এই মূহুর্তে বন্যাকে দেশে রাখা নিরাপদ নয়। এখানে নিরাপত্তা ঘাটতি রয়েছে। তাই তাকে দেশে ফেরত পাঠাতে আমাদের আপত্তি নেই।’
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, রাফিদা আহমেদ বন্যার গুরুত্বপূর্ণ জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। তার উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে তাকে অামেরিকায় নিতে চাইলে নিতে পারে। সেক্ষেত্রে কোনো আইনি বাধা থাকবে না। আর তার তো এদেশে কেউ নেই। সবাই ওই দেশে বসবাস করেন। কোনো কারণে বন্যার দরকার হলে দুই দেশের দূতাবাসের আলোচনায় তাকে আবারও বাংলাদেশে আনা যাবে।
নিরাপত্তার অভাবে বন্যাকে অ্যামেরিকায় পাঠানো হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে তিনি জানান, কোনো ধরণের নিরাপত্তার অভাব নেই তার। তাকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়েছে। বরং তার উন্নত চিকিৎসার জন্যই তিনি দেশে ফেরত যাচ্ছেন। অভিজিৎ হত্যাকারীদের মধ্যে সন্দেহভাজন একজনকে এরই মধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকিদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত, অভিজিৎ রায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতেন। তারা মার্কিন নাগরিকত্বও পেয়েছেন। এবার একুশের বইমেলায় তার দুটি বই প্রকাশ হওয়ার কারণে তিনি দেশে ফিরেন। ধর্ম নিয়ে লেখালেখির কারণে এর আগে বেশ কয়েকবার তাকে মৌলবাদীরা প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছিল। অভিজিৎ নিহত হওয়ার পর আনসার বাংলা-৭ নামের একটি গোষ্ঠী ইতিমধ্যে এর দায় স্বীকার করেছে।
Discussion about this post