যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের ‘অত্যন্ত রক্ষণশীল’ বলে পরিচিত বিচারপতি আন্তোনিন স্কালিয়ার উত্তরসূরি নিয়োগ নিয়ে চলছে তুলকালাম কাণ্ড।
দেশটির সুপ্রিম কোর্টে এখন যে আটজন বিচারপতি রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে চারজন রক্ষণশীল ও চারজন উদারনৈতিক হিসেবে পরিচিত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার হাতে এখনো উদারনৈতিক বা মধ্যপন্থী বিচারপতিকে মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ওবামা যাতে তা না করতে পারেন, এ জন্য তৎপর রিপাবলিকানরা।
রিপাবলিকানরা চায়, রক্ষণশীল ধারার কেউ আবারও সে পদে আসুন। আর ওবামার হাত দিয়ে যে তা হবে না, তা নিশ্চিত।
রিপাবলিকান সিনেটর মিচ ম্যাককনেল স্কালিয়ার মৃত্যুর খবর প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওবামাকে সাবধান করে দেন, তিনি যদি কোনো বিচারপতির মনোনয়ন দেন, তাহলে তিনি কোনো শুনানির আয়োজন করবেন না। ম্যাককনেলের দাবি, ওবামার সময় শেষ হয়ে আসায় এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেবেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।
ছয়জন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর প্রত্যেকে বলেছেন, ওবামার হাতে স্কালিয়ার স্থলাভিষিক্ত বিচারপতির মনোনয়ন তাঁরা সহ্য করবেন না। স্কালিয়া একজন রক্ষণশীল ছিলেন, তাঁর জায়গায় তাঁরা একজন রক্ষণশীল বিচারককে দেখতে চান। এরই মধ্যে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বুদ্ধি দিয়েছেন, যেভাবে পারো মনোনয়ন-প্রক্রিয়া বিলম্বিত করো।
ওবামা অবশ্য সে কথায় কান দিচ্ছেন না। তিনি জানান, মার্কিন শাসনতন্ত্রের স্পষ্ট নির্দেশ মোতাবেক তিনিই মনোনয়ন দেবেন। দুই ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও বার্নি স্যান্ডার্সও ওবামার সঙ্গে একমত। তাঁরাও রিপাবলিকানদের দাবি নাকচ করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, রিপাবলিকানরা হরহামেশা শাসনতন্ত্র অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার কথা বলে। তাহলে এখন ওবামাকে তাঁর দায়িত্ব পালনে বাধা দিচ্ছেন কেন? হিলারি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ২০ জানুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকছেন ওবামা।
স্কালিয়ার উত্তরসূরি যিনিই হোন না কেন, তাঁর হাতেই সুপ্রিম কোর্টের বেশ কয়েকটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। এর একটি গর্ভপাত-সংক্রান্ত। এ ছাড়া রয়েছে শ্রমিক ইউনিয়নে বাধ্যতামূলক চাঁদা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় সংখ্যালঘুদের জন্য কোটা, অভিবাসন প্রশ্নে ওবামার নির্বাহী আদেশ ও সর্বোপরি ওবামা কেয়ার নামে পরিচিত স্বাস্থ্য বিমা আইন।
এসব ব্যাপারেই স্কালিয়া ছিলেন রক্ষণশীলদের কাছে অভয়াস্ত্র। তাঁকে নিয়ে মোট পাঁচজন রক্ষণশীল বিচারকের হাতে উদারনৈতিকদের প্রিয় উপরিউক্ত আইনগুলো বাতিল হবে—এমন স্বপ্ন এ দেশের রক্ষণশীলেরা অনেক দিন থেকেই দেখছেন। নতুন বিচারক নিয়োগ না দেওয়া হলে ৪-৪ ভোটে আদালত সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলে এর আগে দেওয়া নিম্ন আদালতের রায়ই বহাল থাকবে।
রিপাবলিকানরা ভয় পাচ্ছেন, ওবামা যদি তাঁর পছন্দমতো কোনো বিচারপতিকে মনোনয়ন দেন তাহলে আদালতের উদারনৈতিক শাখার পাল্লা ভারী হবে।
ওবামাকে ঠেকানো অবশ্য খুব সহজ হবে না। রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত চলতি কংগ্রেস (অর্থাৎ প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট) ওবামাকে নিয়ে বেশি কঠোর হওয়ায় এমনিতেই বেশির ভাগ মার্কিনিদের জনসমর্থন হারিয়েছে। বিচারপতি নিয়োগের প্রশ্নে আপসহীন অবস্থান নিলে সে মনোভাব আরও দৃঢ় হবে। এর প্রভাবে এ বছরের সাধারণ নির্বাচনে রিপাবলিকান দল সিনেটে তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে।
সিনেটে নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে হলে ডেমোক্র্যাটদের প্রয়োজন অতিরিক্ত পাঁচটি আসন। নভেম্বরের নির্বাচনে তাদের যেখানে ১০টি আসন রক্ষার জন্য লড়তে হবে, সেখানে রিপাবলিকানদের লড়তে হবে ২৪টি আসনের জন্য।
রিপাবলিকানদের জন্য আরেক চ্যালেঞ্জ হলো সাধারণ নির্বাচনে যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প বা টেড ক্রুজের মতো কেউ দলের প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন পান, তাহলে এই দলের অনেক সমর্থক হয়তো ভোট দিতেই যাবেন না।
বেশির ভাগ ভাষ্যকার একমত যে, প্রেসিডেন্ট ওবামা যদি অতি উদারপন্থী কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার বদলে সুপরিচিত মধ্যপন্থী এমন কোনো পরীক্ষিত প্রার্থীকে মনোনয়ন দেন, তাহলে রিপাবলিকান দল প্রতিবন্ধকতার দেয়াল তুলে নিজেদের জন্যই বিপদ ডেকে আনবে।
ওবামা কাকে মনোনয়ন দেবেন, সে কথা প্রকাশ করেননি। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বিপদ এড়াতে তিনি সম্ভবত নিম্ন আদালতে এর আগে সিনেট কর্তৃক গৃহীত হয়েছেন, এমন কোনো সুপরিচিত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে পারেন। এঁদের মধ্যে সবার আগে আসেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত শ্রী শ্রীনিবাসন। ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার আপিল কোর্টের এই বিচারক তিন বছর আগে সিনেট কর্তৃক ৯৭-০ ভোটে বিচারকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। এ ছাড়া আরও যাঁদের নাম শোনা গেছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আফ্রিকান-আমেরিকান বিচারপতি পল ওয়াট ফোর্ট, ওবামা প্রশাসনের চলতি আফ্রিকান-আমেরিকান ও নারী আইনমন্ত্রী লোরেটা লিঞ্চ।
আবার রিপাবলিকান নেতাদের বিব্রত করতে সিনেটের কোনো ডেমোক্রেটিক সদস্যকেও ওবামা মনোনয়ন দিতে পারেন।
Discussion about this post