একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে সন্দেহভাজন আরও ৬৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এরা সবাই স্থানীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের যুদ্ধাপরাধী। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে ২৫টি মামলা বিভিন্ন পর্যায়ে বিচারাধীন।
তদন্ত সংস্থায় জমা রয়েছে ৫৩১টি অভিযোগ। ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর একাত্তরে শহীদ পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন আদালতে স্থানীয় রাজাকারদের বিরুদ্ধে এসব মামলা করেন। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করায় সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে মামলাগুলো ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় পাঠানো হয়। তদন্ত সংস্থা সেসব মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে পর্যায়ক্রমে তদন্ত করছে। ওই রাজাকারদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, অপহরণ, ধর্মান্তরিত, অগি্নসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
প্রাথমিক অভিযোগ তদন্তের পর ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখায় প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। এরপর তা যাচাই-বাছাই শেষে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের পর আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে। সন্দেহভাজনের এ তালিকায় একাধিক রাজনীতিক, সাবেক আমলা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে কয়েকজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকে পালিয়ে গেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা জানায়, গ্রামগঞ্জে ঘাপটি মেরে থাকা সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রী-এমপি, রাজনৈতিক নেতা, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, চিকিৎসক ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য রয়েছে। টাঙ্গাইলে কুমুদিনীর প্রতিষ্ঠাতা রণদা প্রসাদকে মুক্তিযুদ্ধের সময় অপহরণের পর হত্যা মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিক অনুসন্ধান করতে গিয়ে অনেক রাজাকার পালিয়ে গেছে বলে তদন্ত সংস্থা জানায়।
এদিকে বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছে শরীয়তপুরের সোলায়মান মোল্লাসহ ২ জন, কিশোরগঞ্জের মোসলেম প্রধান, হবিগঞ্জের সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত আলী, গাইবান্ধার সাবেক এমপি আবদুল আজিজসহ ৬ জন, মৌলভীবাজারের শামসুল হক গং এবং একই জেলার রাজনগরের আকমল আলী তালুকদারসহ চারজন।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা থেকে প্রসিকিউশনে দাখিল করা হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত বিচার কার্যক্রম শুরু করা হয়নি- এমন মামলার মধ্যে রয়েছে নোয়াখালীর সুধারামের রাজাকার আমির আলীসহ ৫ জন, কক্সবাজারের সালাতমউল্লাহ খানসহ ১৯ জন, ময়মনসিংহের রিয়াজউদ্দিন ফকিরসহ ২ জন, নেত্রকোনার খালেক তালুকদার গং, পটুয়াখালীর এছহাক শিকদারসহ ৫ জন, ময়মনসিংহের আক্কাস মৌলভী গং, মৌলভীবাজারের রাজনগরের ওয়াজউদ্দিন-রিয়াজউদ্দিনসহ ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলা। তদন্ত শেষে অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে রয়েছে ময়মনসিংহের এমপি জাতীয় পার্টির নেতা এমএ হান্নান, নেত্রকোনার আঞ্জু-মঞ্জুসহ ৩ রাজাকার, পূর্বধলার ৬ রাজাকার, নড়াইলের ২ রাজাকার, সাতক্ষীরার সাবেক এমপি জামায়াত নেতা আবদুল খালেক মণ্ডলের মামলাসহ অন্যান্য মামলা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক গণমাধ্যমকে জানান, বিভিন্ন এলাকায় থাকা সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। শিগগিরই আরও কয়েকটি মামলার প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত করে তা প্রসিকিউশনে পাঠানো একটা চলমান প্রক্রিয়া। তদন্ত সংস্থায় জমা থাকা প্রায় সাড়ে ৫শ’ অভিযোগ তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই তদন্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া তদন্ত সংস্থায় নতুন নতুন অভিযোগ আসছে। সেগুলোও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
প্রসিকিউটর জেয়াদ-আল মালুম গণমাধ্যমকে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে ২৫ মামলায় বিচার কার্যক্রম চলছে। এ ট্রাইব্যুনাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৬ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালতে ৭টি আপিল নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষ ৬ যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। আপিল বিভাগে ১৭টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। সূত্র: সমকাল
Discussion about this post