যুবলীগ নেতার দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় নাটোর জেলা আইনজীবী সমিতির জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আমেল খান চৌধুরীকে (৫৭) কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সদর থানার পুলিশ গত বুধবার রাতে তাঁকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করলে আদালত এ আদেশ দেন। আমেল খান ইসলামী আন্দোলন নাটোর জেলা শাখার সভাপতিও।
নাটোর সদর আমলি আদালত সূত্রে জানা যায়, পুলিশ গতকাল বিকেল চারটার দিকে আমেল খান চৌধুরীকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে। আসামির পক্ষে জামিনের আবেদন করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের। এ সময় তাঁর সঙ্গে সমিতির সভাপতি রুহুল আমিন তালুকদারসহ অনেক আইনজীবী জামিনের আবেদন নিয়ে দাঁড়ান। শুনানির সময় আইনজীবী আবদুল কাদের আদালতকে বলেন, মামলার মূল অভিযোগ আমলযোগ্য অপরাধের তালিকাভুক্ত নয়। অথচ পুলিশ আদালতের অনুমতি না নিয়ে আইনজীবী আমেল খানকে গ্রেপ্তার করেছে। এ কারণে মামলাটি চলতে পারে না। এ ছাড়া এই মামলার বাদী জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে আসামি আমেল খান কয়েক দিন আগেই এই আদালতে জুয়া আইনে মামলা করেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সমন হয়েছে। তাই বাদী আক্রোশবশত এই আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
আসামিপক্ষ থেকে আরও বলা হয়, আসামি রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড করেননি। তিনি জুয়ার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন মাত্র। তাই তিনি জামিন পেতে পারেন।
তবে আদালত পুলিশের পরিদর্শক নাসির উদ্দিন মণ্ডল জামিনের বিরোধিতা করে আদালতে বলেন, আসামি গত মঙ্গলবার বিকেলে শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে তাঁর অনুসারীদের জড়ো করে সরকারের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করেছেন। তিনি আলেম-ওলেমাদের সংগঠিত করে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছেন। তাই তিনি জামিন না দেওয়ার আবেদন করেন।
শুনানি শেষে আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সামশুল আল আমিন জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
রুহুল আমিন বলেন, তাঁর বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আসামির তৎপরতা তাঁকে কষ্ট দিয়েছে। এ কারণে তিনি বাদী হয়ে এ মামলা করেছেন। আমেল খানের দায়ের করা মামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা একটা অজুহাত মাত্র।
আবদুল কাদের আইনজীবী আমেল খানের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে বলেন, সারা নাটোরের মানুষ তাঁকে একজন প্রতিবাদী মানুষ হিসেবে চেনেন। তিনি আজীবন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। তিনি কোনো রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করেননি। স্বার্থবিঘ্নিত হওয়ায় একটি মহল তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে।
ইসলামী আন্দোলন নাটোর জেলা শাখার আইন ও বিচারবিষয়ক সম্পাদক আবদুল খালেক বলেন, আমেল খান চৌধুরী দেশপ্রেমিক মানুষ। তিনি রাষ্ট্রদ্রোহের কোনো কাজ করতে পারেন না। তাঁকে অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, রুহুল আমিন বুধবার রাতে আইনজীবী আমেল খান চৌধুরীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন। মামলায় পুলিশ তাঁকে মধ্যরাতে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। আসামির বিরুদ্ধে কিছুদিন ধরে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি বেআইনিভাবে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করে সরকারের বিরুদ্ধে কটূক্তি করছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
Discussion about this post