সাম্প্রতিক মিয়ানমার সরকারের নির্যাতন,নিপীড়নের শিকার প্রায় তিন লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ।সে দেশে গণহত্যার শিকার হয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা । মানবিক দিক চিন্তা করে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে তিন লক্ষাধিক শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে ।তবে এ আশ্রয় কতদিন হতে পারে ? বাংলাদেশের ভূখন্ডের দিক বিবেচনা করলে মিয়ানমারের তুলনায় পাঁচগুণ ছোট হতে পারে ।সে কথা চিন্তা করলে এ বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের বাংলাদেশে যদি দীর্ঘ মেয়াদী স্থান দেয় তা দেশের জন্য স্ব-বিরোধী হবে কেননা এ ক্ষুদ্র দেশে বাংলাদশের জনগণ প্রায় ষোল কোটির অধিক ।
এদিকে প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে এবং মিয়ানমারের হেলিকপ্টার বারবার সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করার পরেও বাংলাদেশ সরকার কে অনেকটা চুপ থাকতেই দেখা যায় ।হয়তো কূটনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশের পররাষ্ট মন্ত্রণালয় । এত কিছু ঘটার পরেও বাংলাদেশের পার্শবর্তী রাষ্ট্র ভারত এবং মিয়ানমারের পার্শবর্তী রাষ্ট্র চীন কে পাশে পাচ্ছে না বাংলাদেশ । তার কিছু কারণ হতে পারে………
১ । বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশে দীর্ঘ দিন ধরে বাণিজ্য করে যাচ্ছে ভারত এবং চীন । সফলতা হিসেবে দু’টি দেশ’ই ভাল লাভবান ।কেননা ঐ দু’টি দেশ বাংলাদেশে বাণিজ্য করে অনেক ফায়দা হাসিল করেছে । যেমন ভারত বাংলাদেশে ট্রানজিট থেকে শুরু করে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা নিয়েই এ দেশে বাণিজ্য করছে । এখন অনেকে বলতে পারে ট্রানজিট ব্যবহার করে ভারত বাংলাদেশকে একটা মোটা অঙ্কের টাকা দিচ্ছে তবে প্রশ্ন থেকেই যায় ভারত ট্রানজিট ব্যবহার করে যে সুবিধা নিচ্ছে বাংলাদেশ কি তাদের মত সুবিধা নিতে পারছে ? সীমান্তে আদৌ কি হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়েছে ?
২ । এখন বলা চলে,ভারতের বাংলাদেশে বাণিজ্য করার মত তেমন বড় ক্ষেত্র আর নেই কারণ ইতোমধ্যে ভারত বাংলাদেশে বলতে গেলে সব ধরণের বাণিজ্য করে ফেলেছে তাই তাদের চিন্তা-ভাবনা এখন মিয়ানমারের দিকে হবে এটাই স্বাভাবিক । ঠিক তেমনিভাবে চীন বিগত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে বাণিজ্য করে আসছে,ব্রিজ নির্মাণ,পদ্মা সেতুর মত প্রকল্প,ফেনী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ প্রকল্প,কর্ণফুলী টানেল থেকে শুরু করে সব বড় বড় প্রকল্প চীনের সাথে চুক্তিবদ্ধ বাংলাদেশ । তাই ভারতের মত চীনও চাচ্ছে মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখতে ।
৩ । ভারত এবং চীন বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিকভাবে একে অপরের সাথে স্নায়ু যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে । ভারত কে সাপোর্ট দেয় আমেরিকা আর চীন কে সাপোর্ট দেয় রাশিয়া । ভারত এবং চীনের এখন টার্গেট হচ্ছে মিয়ানমার কারণ মিয়ানমারে রয়েছে দু’টি দেশের বাণিজ্য করার বিশাল সুযোগ ।
৪ । ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি ভারত এবং চীন মিয়ানমারে বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু করেছে । যখন সে দেশ থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসছে ঠিক তখনি নরেন্দ মোদি মিয়ানমার সফর করেছে ।দিল্লি নাইপিদুকে বুঝাতে চেয়েছে ভারত সরকার তাদের পাশে আছে ।
৫ । এখন ভারত যদি বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায় অন্যদিকে চীন চাইবে মিয়ানমারের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে কারণ চীন তখন এককভাবে মিয়ানমারের সাথে বাণিজ্য চুক্তি করার ক্ষেত্র সহজতর হবে ।তবে এ সুযোগ চীন কে ভারত কোনদিনও দিতে চাইবেনা ।ঠিক তেমনিভাবে চীন যদি রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে চাপ দেয় তাহলে ভারত সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে মিয়ানমারের সাথে বাণিজ্য চুক্তি বাড়াবে ।
৬ । সম্প্রতি ভারত সরকার ৫২টি সামরিক ট্রাক ভর্তি অস্ত্র এবং গোলাবারুদ মিয়ানমার সরকারের কাছে হস্তান্তর করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখেও ভারত সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছে। অন্যদিকে চীন-মিয়ানমারের মধ্যে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা বিষয়ে একটি চুক্তি এবং সিল্ক রোড ইকনমিক বেল্ট ও একবিংশ শতকের সামুদ্রিক সিল্করোড কাঠামোর আওতায় সহযোগিতা বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। এছাড়া, চীন-মিয়ানমার সীমান্তে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোন প্রতিষ্ঠা, দু’দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সহযোগিতা এবং মিয়ানমারের বাগন অঞ্চলে ভূমিকম্প পরবর্তী সংস্কার ও ঐতিহাসিক পর্বতগুলো সংরক্ষণ তিনটি এমওই সই হয়েছে ।
লেখক
মঈন উদ্দিন ইলাহী
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
mayenelahictg121@gmail.com
Discussion about this post