বিডি ল নিউজঃ নয়া পল্টনের কার্যালয় থেকে রুহুল কবির রিজভীকে ‘আটক’ এবং গুলশানের কার্যালয়ে খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার মধ্যে রোববার এক বিবৃতিতে সরকারের এই আচরণের নিন্দা জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আতঙ্কিত স্বৈরশাসকের এই দানবীয় তাণ্ডবের বিরুদ্ধে নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশের কোনো ভাষা নেই। বিবেকের কোনো দাবি, ন্যায় ও যুক্তিপূর্ণ কোনো বক্তব্য তারা শোনে না।
বিকালে পাঠানো বিবৃতিতে ফখরুল বলেন, “আমি দল-জোটের নেতা-কর্মীদের ছাড়াও দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক সকল দল, সকল শক্তি রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। দমন-পীড়নের মধ্যেও ৫ জানুয়ারি সোমবার ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবসের’ কর্মসূচি পালন করা হবে। “যে কোনো মূল্যে গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের দম্ভ ও স্বেচ্ছাচারিতার উপযুক্ত জবাব দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”
৫ জানুয়ারির কর্মসূচিতে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে গত শনিবার থেকে প্রকাশ্যে দেখা না যাওয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব তাদের আন্দোলনকে ‘যৌক্তিক পর্যায়ে’ নিতে দেশবাসীর সহযোগিতাও চেয়েছেন।
দশম সংসদ নির্বাচনের দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এদিন সারাদেশে বিক্ষোভ ও কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে।
গত ৩১ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এই কর্মসূচি ঘোষণার পর ঢাকায় বিএনপি সমাবেশের অনুমতি চাইলেও তা পায়নি।
একই দিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ঢাকার ১৬টি আসনের প্রতিটিতে সমাবেশের ঘোষণা দিলে এক বছর পর ফের রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কা উঁকি দিচ্ছে জনমনে।
এর মধ্যেই রোববার বিকাল থেকে ঢাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে পুলিশ। শনিবার রাতে নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয় থেকে যুগ্মমহাসচিব রিজভীকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ, যাকে আটক বলছেন বিএনপি নেতারা।
এছাড়া গুলশানের কার্যালেয়ে অবস্থানরত খালেদা জিয়াকে আটকে দেয় পুলিশ। শনিবার রাত থেকে তিনি সেখানেই রয়েছেন।
ফখরুল বলেন, নেতা-কর্মীদের বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের ধারেকাছেও ভিড়তে দেওয়া হচ্ছে না। সংবাদ কর্মীদেরও খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
“সে কারণে জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের মাধ্যমেই কেবল এসব অপকর্মের জবাব দেওয়া সম্ভব বলে আমরা মনে করি।”
বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল
এদিকে খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা, রিজভীকে তুলে নেওয়ার প্রতিবাদে রোববার দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছে বিএনপি।
এর আগে সকালে দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ টেলিফোনে সাংবাদিকদের জানান, তারা এই কর্মসূচি পালনের জন্য সারাদেশে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন।
দুপুরে লক্ষ্মীপুর শহরের শাখাড়ী পাড়া মোড় থেকে বিএনপির মিছিল শুরু হয়ে শহরের উত্তর তেমুহনীতে গিয়ে শেষ হয়।
মিছিলে নেতৃত্ব দেন লক্ষ্মীপুর পৌর বিএনপির সভাপতি মাহবুবুর রহমান লিটন, সদর উপজেলা যুবদলের সভাপতি খালেদ মোহাম্মদ আলী কিরন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হারুনুর রশিদ হারুন, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক মামুন, পৌর ছাত্রদলের সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন।
যশোর জেলা বিএনপি দুপুরে শহরের টাউন হল ময়দান থেকে মিছিল বের করে। যশোর প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেরুল হক সাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন।
দুপুরে জামালপুর শহরে বিএনপি কার্যালয় থেকে মিছিল বের হয়ে বকুলতলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র ওয়ারেছ আলী মামুন, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আমজাদ হোসেন, শহর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাঈন উদ্দীন বাবুল।
ফেনীতে দুপুরে ছাত্রদলের মিছিল থেকে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর হয়। ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোরশেদ আলম মিলনের নেতৃত্বে শহরের রেজিস্ট্রি অফিস রোড থেকে ওই ঝটিকা মিছিল বের হয়।
মিছিল শেষে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা শান্তি কোম্পানি রাস্তার মাথায় ইট ফেলে ফেনী-কুমিল্লা সড়ক অবরোধ করে। এসময় তারা একটি যাত্রীবাহী বাস ও দুটি অটোরিকশা ভাংচুর করে।
Discussion about this post