দেশে শতকরা ৯০ শতাংশ যৌনকর্মী শিশু বয়সেই এ পেশায় আসেন। এ ছাড়া দেশের যৌনপল্লিগুলোতে ১০-১৬ বছর বয়সী শিশু যৌনকর্মী মোট সংখ্যার ৬০ শতাংশ। যৌনকর্মীদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
‘যৌনকর্মীর মানবাধিকার: যৌনপল্লি উচ্ছেদের মনোসামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব’ নিয়ে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ ও আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ইউকেএইডের সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহ। তিনি বলেন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, চাঁদাবাজ ও জমি দখলদারদের কারণে যৌনকর্মীদের নিজ পল্লি থেকে উচ্ছেদ হচ্ছেন। শতকরা ৫৩ ভাগ যৌনপল্লি উচ্ছেদ হয় রাজনৈতিক কারণে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ যৌনকর্মী কোনো ধরনের প্রশাসনিক সুবিধা পান না। গবেষণায় বলা হয়, যৌনপল্লিতে থাকা শিশুদের মধ্যে দেড় থেকে দুই লাখ এ পেশায় নিয়োজিত।
গবেষণায় দেখা যায়, পুনর্বাসন না হওয়ায় উচ্ছেদ হওয়ার পর যৌনকর্মীরা পার্কসহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েন। তাঁরা যৌন হয়রানি, মানসিক ও শারীরিক সহিংসতার স্বীকার হন। এ দেশের যৌনকর্মীরা তাঁদের মৌলিক মানবাধিকার ও প্রজনন স্বাস্থ্যসুবিধা থেকে বঞ্চিত। এমনকি কেউ কেউ এ পেশা ছেড়ে দিতে চাইলেও বিভিন্ন শারীরিক ও সাংস্কৃতিক সীমাবদ্ধতার কারণে মূলধারার কাজে আসতে পারেন না।
গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যৌনপল্লি এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসাসংক্রান্ত কাজে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। মাদারীপুরের কান্দিপাড়া যৌনপল্লি থাকাকালীন সে এলাকায় দৈনিক ৭৩ লাখ টাকার ব্যবসায়িক লেনদেন হতো। যা পরে কমে গিয়ে ২ লাখ ৩০ হাজারে নেমে যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা হয়, এখানে একজন দরজি আগে দৈনিক পাঁচ হাজার টাকা আয় করতেন, যা যৌনপল্লি উচ্ছেদের পর দৈনিক ৬০০ টাকায় নেমে যায়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমদ বলেন, শিশু যৌনকর্মীরা এ পেশায় আছে, যা নিয়ে ভাবতে হবে। যৌনকর্মীদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ও রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস অব বাংলাদেশের (আরআইবি) প্রধান নির্বাহী মেঘনা গুহঠাকুরতা বলেন, ১৯৯০ সালের দিকে নারায়ণগঞ্জের টানবাজার উচ্ছেদের সময় এত বেশিসংখ্যক শিশু যৌনকর্মী ছিল না। যৌনকর্মীদের নিয়ে হাইকোর্টের নীতিমালা মানতে হবে। তাঁদের প্রতি সংহতি জানানোর চেয়েও এখন জরুরি হলো সুরক্ষার বিষয় নিশ্চিত করা। যৌনকর্মীদের বাঁচার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
আলোচনা সভার সভাপ্রধান ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘দেশের নাগরিক হিসেবে যৌনকর্মীদের মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী, দেশের নাগরিকেরা যে যেখানেই কাজ করুক না কেন, কাজের নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা দিতে হবে। তাঁদের প্রতি বৈষম্য আমরা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে তৈরি করেছি।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক রীনা রায়। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক নীনা গোস্বামী।
Discussion about this post