বিডি ল নিউজঃ আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫০তম জন্মদিন উপলক্ষে ছাত্রদল আয়োজিত সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাত্রদল নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘রক্তের মধ্য দিয়ে শপথ নিতে হবে। আমরা আমাদের ভাইদের রক্তের ঋণ শোধ করব। এ জন্য আন্দোলনের বিকল্প নেই।’ ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান।
তারেক রহমানের জন্মদিনে ছাত্রদলের এ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ। তাদের মধ্যে শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, আমানউল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, নাজিমউদ্দিন আলম, হাবিবুর রহমান হাবিব, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, হাবিব উন নবী খান সোহেল, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, শফিউল বারী বাবু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশীদ হাবিব প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগের নেতাদের অন্ধের মতো কথা না বলার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘ইতিহাস পড়েন। ইতিহাস জানেন। এরপর কথা বলেন। আমরা হাওয়ায় বসে কথা বলি না। তারেক রহমান যা বলেন, তা তার নিজের কোনো বক্তব্য নয়। তিনি ইতিহাস থেকে ডকুমেন্ট নিয়ে কথা বলেন।’
তিনি বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবীর সকল বাংলাভাষীর আগামী দিনের সবচেয়ে প্রিয় ও গ্রহণযোগ্য দিশারী বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি আওয়ামী লীগের মতো ভুয়া ও অলীক কথা বলেন না। তিনি ডকুমেন্ট নিয়ে কথা বলেন। ডকুমেন্ট দিয়েই তিনি বলেছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য আওয়ামী লীগের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। অথচ তার বক্তব্যকে সত্য দিয়ে খণ্ডাতে না পেরে তারা (আওয়ামী লীগ) তাকে নিয়ে নানা রকম অশ্লীল ও অস্রাব্য ভাষায় বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।’
ফখরুল বলেন, ‘তারেক রহমান কখনো বাংলাদেশের কোনো নেতাকে নিয়ে কোনদিন কটূক্তি করেননি। তিনি টুঙ্গীপাড়ায় গেছেন শেখ মুজিবের কবর জিয়ারত করতে। জয় যখন বাংলাদেশে আসেন তখন তিনি তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফুল পাঠিয়েছিলেন। অথচ জয় তা গ্রহণ না করে প্রত্যাখ্যান করেছিল। কারণ এটাই আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। তারা অন্যকে সম্মান দিতে জানে না। তাদের মধ্যে কোনো সহনশীলতা নেই।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘তারেক রহমান তার পিতা-মাতার মতো দেশপ্রেম নিয়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন। এ জন্যই তার বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র। ওয়ান ইলেভেনের অবৈধ ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকার থেকে শুরু করে এ সরকার বার বার তার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। অথচ তারা একটি মামলাও আজ পর্যন্ত প্রমাণ করতে পারেনি। এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই তিনবার তদন্তে তারেক রহমানের নাম না থাকলেও চতুর্থবার তার নাম ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় জড়ানো হয়।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘একজন অবসরপ্রাপ্ত দলীয় লোক আব্দুল কাহহার আকন্দ, যে ব্যক্তি নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থনা করেছিল, তাকে দিয়ে তদন্তের নামে তারেক রহমানের নাম মমলায় জড়ানো হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুফতি হান্নানকে দুই মাসেরও বেশি সময় রিমান্ডে নিয়ে অকথ্য অত্যাচারের মাধ্যমে জোর করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা হয়। অথচ তিনি আদালতকে বিষয়টি জানালেও তারেক রহমানকে মামলায় জড়নো হয়।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বার বার দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। স্বাধীনতার সময় ছাত্ররা হাতের কলম ফেলে দেশের প্রয়োজনে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ হাজার হাজার ছাত্রের হাত থেকে অস্ত্র না নিয়ে তাদের বিপথে যেতে উৎসাহিত করেছিল। লুটপাট ও অপরাধী হতে প্ররোচিত করেছিল।’
তিনি বলেন, ‘মাত্র তিন মাসে এ অবৈধ সরকার আমাদের তিনশরও বেশি নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। গুম করেছে ৬৫ জনেরও বেশি নেতাকর্মীকে। হতভাগ্য ওইসব পরিবার-পরিজন যখন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার কাছে সাক্ষাৎ করতে আসেন, তখন তাদের আহাজারিতে সমগ্র দেশ যেন ভারি হয়ে ওঠে।’
তিনি আওয়ামী লীগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘আপনাদের কী ওইসব হতভাগ্যের জন্য একটু কষ্ট লাগে না। মনে হয় না তাদের অসহায় পরিবারের সদস্যদের কথা। মনে পড়ে না আল্লাহর কথা, যখন তাদের আহাজারিতে মহান আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। তখন আপনাদের কী একটুও ভয় করে না, শিগগিরই আল্লাহর গজব আপনাদের উপর নেমে আসবে? সেদিন দূরে নয়, এসব মজলুমের আর্তনাদে আপনাদের সিংহাসন বালির বাঁধের মতো ভেসে যাবে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা ক্ষুব্ধ, বিক্ষুব্ধ, মর্মাহত। আমাদের এতগুলো ভাইকে তারা হত্যা করেছে। সমগ্র দেশকে রক্তের বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছে। এসব ভাইদের রক্তের মধ্য দিয়ে শপথ নিতে হবে, আমাদের ভাইদের রক্তের ঋণ আমরা শোধ করব। এ জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলনের বিকল্প আমাদের সামনে আর কিছুই নেই।’
Discussion about this post