একে.এম নাজিম,হাটহাজারী(চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানা পুলিশ গতকাল মঙ্গলবার (৩ ফেব্রুয়ারী) ভোর রাতে পৌর সদরের বিভিন্ন স্থানে অভিযানে চালিয়ে পেট্রল বোমা ও নাশকতার সরঞ্জাম সহ ৭ জনকে আটক করেছে। সংবাদ পেয়ে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আকতার,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মোস্তাফিজুর রহমান থানায় ছুটে আসে। আটককৃতদের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ এসব বিষয় গোপন রেখেছে।
থানা পুলিশ জানান,গত ২১ জানুয়ারী ভোরে চট্টগ্রাম-রাউজান সড়কের চারাবটতল এলাকায় দূবৃর্ত্তরা চালক ও সহকারীকে নামিয়ে দিয়ে একটি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে গত সোমবার স্থানীয় একটি কলেজের ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ওমর ফারুককে পুলিশ গ্রেফতার করে। সে রাউজান উপজেলার গুজরা গ্রামের মোঃ নাছির উদ্দিনের পুত্র। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে মঙ্গলবার (৩ ফেব্রুয়ারী) ভোর চার টায় পৌরসভার মেখল সড়কের শায়েস্থখাঁন পাড়া মান্নান ভবনে অভিযান পরিচালনা করে মাঈন উদ্দিন নামে এক জনকে আটক ও তার হেফাজত থেকে ২২ টি ব্যবহার উপযোগী পেট্রল বোমা,২ টি তাজা ককটেল,১২০ টি ক্র্যাকারস/চকলেট বোমা,মহাসড়কে যানবাহন বিকল করার ছোট বড় অসংখ্য বিশেষায়িত অস্ত্র যা মারাতœক দূর্ঘটনার কারণ হতে পারে। গোপন হামলার করার জন্য মারবেল ও গুলতি,বোমা তৈরি নানা সরঞ্জাম,জিহাদী বই,চাঁদা আদায়ের রশিদ,একটি ল্যাপটপ, ৬ টি সিডি ক্যাসেট ও ইসলামি ব্যংকের ৬ টি একাউন্টের চেক বই,(একাউন্ট নম্বর ২১৪০৭,২৫৬০৮,২২৪০৭,৩০৯৮৬,২৫৬০৮) এসব চেক বইয়ের একটি পাতায় ১২ শ টাকার একটি চেকে মোঃ রায়হানের নাম,নাশকতায় ব্যবহৃত ২ টি মোটর সাইকেল উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক একই ্এলাকার নাসরিন ভবনের ৫ম তলা থেকে আরো তিন জন এবং পৌর সদরের ঈদগাহ সংলগ্ন মোঃ জসিম উদ্দিনের বিল্ডিং এর ৩য় তলা থেকে ২ জনকে সহ মোট সাত জনকে আটক করে। আটকৃতরা হলেন মাঈন উদ্দিন(২৪), পিতা: মফিজুর রহমান, হাটহাজারী, নজরুল ইসলাম(২১), পিতা:সুরত আলী, কুড়িগ্রাম(অনার্স ৩য় বর্ষ, রাজনীতি বিজ্ঞান চবি), সুজাত হোসেন(২৩), পিতা:রশিদ, ময়মনসিংহ, (অনার্স ৪র্থ বর্ষ, ইতিহাস বিভাগ, চবি), মাহমুদুল হাসান(২৪), পিতা:দেওয়ান , আলী, নেত্রকোনা,(এমএস এস চবি), আব্দুল মালেক(১৯), পিতা:মকুল মিয়া, কুড়িগ্রাম, খায়রুল আমিন (২৩), পিতা: বদিউল আলম, কক্সবাজার।
পুলিশ জানায়,আটকৃতরা সকলে জামাত শিবিরে সক্রিয় কর্মী দলীয় হাই কমান্ডের নির্দেশে তারা হাটহাজারী ও আশেপাশের স্থানে নাশকতা ও আতংক সৃষ্টি করতে কাজ করেছিল। ভবিষ্যতে আরো নাশকতা করার প্রস্তুতি ছিল তাদের।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এএসপি হাটহাজারী সার্কেল আ.ফ.ম নিজাম উদ্দিন, থানার ওসি মোঃ ইসমাইল পিপিএম(বার) থানার উপপরিদর্শক শরিফুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে এ অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযান পরিচালনাকারীরা সাংবাদিকদের জানান,এ চক্রটি সার্বক্ষনিক পুলিশে গতিবিধি লক্ষ্য রাখার জন্য সোর্স নিয়োগ করে রেখে ছিল। এলাকার লোকজন কেউ মূলত জানত না এরা এখানে কিজন্য অবস্থান করছেন। পরিবার নিয়ে বসবাস করার জন্য বাসা ভাড়া নিয়ে তারা মূলত ব্যাচেলার হিসাবে এসব বাসায় বাস করত। মন্নান ভবনে মাঈন উদ্দিন আটক করতে গেলে সেখানে পুলিশ দরজায় বাহিরে তালা লাগানো দেখতে পায়। যাতে প্রথম দেখে কেউ বুঝতে না পারে ভেতরে লোক আছে। ২য় দরজায় ও একই ধরণে আটকানো। ৩য় রুমে সে বসবাস করত। ভোর রাতে যখন পুলিশ তাকে আটক করতে যায়,তখন সে ঘুমিয়ে ছিল।পুলিশ কৌশলে দরজা খুলে তাকে আটক করার পর সে হতবম্ব হয়ে পড়ে। এসময় তার কাছ থেকে উল্লেখিত বিপুল পরিমান নাশকতার সরঞ্জাম পাওয়া যায়। সে তার অপরাপর সহযোগীদের ব্যাপারের প্রথমে জীবনের ঝুঁকির কারণে মূখ খুলতে রাজি হয়নি।পরে পুলিশি আশ্বাসের প্রেক্ষিতে মুখ খুললে পুলিশ অন্যান্য ভবনে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ এসব বিষয় গোপন রেখেছে। মন্নান ভবনে নাশকাতার বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করে উত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে এসব সরঞ্জাম সরবারহ করে থাকে।
আটককৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানান,এগার মাইল একশ মেগাওয়ার্ড পিকিং পাওয়ার প্লান্ট ও বিদ্যুৎ গ্রীডে কেন্দ্রে হামলা করার পরিকল্পনা তাদের ছিল। এ ব্যাপারে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। আটকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে আটককৃতরা তাদের অর্থের যোগান দাতাদের নাম বলেছে।
সংবাদ পেয়ে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এ কে এম হাফিজ আকতার,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মোস্তাফিজুর রহমান থানায় ছুটে আসে। কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিক ভাবে অভিযানকারী পুলিশদের নগদ ১০ হাজার টাকা পুরস্কার প্রদান করেন। নাশকাতার বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে থানার ওসি সাংবাদিকদের জানান।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার হাফিজ আকতার জানান,আটককৃতরা নাশকতাকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। পুলিশ গোপন সংবাদে ভিত্তিতে তদন্ত করে তাদেরকে নাশকতার সরঞ্জামসহ আটক করেছে। তারা এখানে পেট্রল বোমা সহ বিভিন্ন নাশকতার সরঞ্জাম তৈরি করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে সরবারহ করে থাকে। ইতিমধ্যে আটকৃতদের কাছ থেকে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে। তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। যদি পুলিশ তাদেরকে আটক করতে না পারত তাহলে হয়তো বড় ধরণের নাশকতার ঘটনা ঘটত।
Discussion about this post