বিডি ল নিউজঃ কোন কর্ম এমন আছে যে তাতে কোন ব্যর্থতা নেই ? আছে নাকি এমন কর্ম ? যদি এমন কর্ম থাকে যে ততে কোন ব্যর্থতা নেই তবে তো শুধু সে কর্মই মানুষ কর্ম হিসেবে নিতো ! বড় ব্যবসায়ী যিনি ইতিমধ্যে দেশের শীর্ষস্থানে রয়েছে অর্থবিত্তে তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন তিনি ব্যর্থ হয়েছেন কিনা তবে উত্তর পাবেন তার ব্যর্থতাই বেশী ছিল জীবনের কোন এক সময়ে । ব্যর্থতা স্বীকার করলেও জীবনের ভুল সিদ্ধান্তগুলোর কথা কেউ স্বীকার করতে চায় না । তাই বলে কি কেউ ভুল করে না ? ভুল না করে যে শিক্ষাটা তাই কি সবচেয়ে বেশী সঠিক ?
আমাদের চারপাশের নিয়মগুলো খুব বেশী করে অনিয়ন্ত্রিতকতার চিহ্ন দেখায় । সেদিন রাইফা মেয়েটা গলা ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে গেল । ডাক্তার দেখলেন, মেয়েটির যন্ত্রনা কমার চেয়েও যন্ত্রনা বাড়তে বাড়তে খিচুনি শুরু হল । তারপর অভাবনীয়ভাবে শিশুটি আমাদের ছেড়ে চলেই গেল । ডাক্তার নিশ্চই ইচ্ছে করে বাচ্চাটিকে মারতে চায়নি । কিন্তু কেন এমন হল ? ডাক্তারি বিদ্যা কি বলে এর ব্যখ্যায় ?
যাই বলুক ডাক্তারগণ আমাদের সমাজে এখনও সম্মানের দিক থেকে, মানের দিক থেকে অনেক উর্দ্ধে । আমরা তাদেরকে মনে করি অসুখ সারানোর যাদুকর । যখন দেখি ডাক্তারের অবহেলায় বা ভুল চিকিৎসায় কেউ মারা গিয়েছে তখন ডাক্তারদের প্রতি রাগ হওয়ার চেয়েও অভিমানের জায়গাটা বেশি প্রশারিত হয় । মনে হয় তবে কি তারা সঠিক শিক্ষাটা নিতে পারছেনা ? সাধারণ মানুষ হয়ে ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসার কথা বলা যেমনি আমরা বলতে পারিনা তেমনি চাক্ষুস অবহেলা বা চাক্ষুস চিকিৎসা না দেওয়ার ব্যপারটিও আমরা খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারি ।
রাইফার অসুখটি সেদিন আসলে কি ছিল বা কেন সেদিন এন্টিবায়োটিক দেওয়ার পরই খিচুনি হল তা যেমন আমাদের কাছে ধোঁয়াসা তেমনি নির্মম সত্য রাইফা কিছুক্ষনের মধ্যেই মিলিয়ে গিয়েছে এ পৃথিবী থেকে ।
হয়ত ডাক্তারগণেরা ইতিমধ্যেই কারণ দাঁড় করে ফেলবেন তাদের বাঁচার মত করে অথবা সত্যিটুকুই কিন্তু বাচ্চাটি যদি সত্যিই ভুল চিকিৎসায় বা অবহেলায় মারা গিয়ে থাকে তবে এই অবহেলা জনিত মৃত্যুর জন্য প্রশ্ন করে, শাস্তি দিয়ে, অপরাধ বোধ নিয়ে আসলে লাভ কতটুকু ?
রাইফার সমান একটি বাচ্চা আমার ঘরেও আছে । তার অসুস্থতার সময় যদি আমি জিজ্ঞেস করি তোমার কি পেট ব্যথা করছে ? সে সরাসরি বলে না । তাকে যাই বলি সে বলে না কিন্তু রাতে ঘুমানোর আগে একবার আমার মুখ, তার বোনের মুখ না দেখে ঘুমায় না । এ বয়সী শিশুরা পৃথিবীর একেকটি ফুলের মত । তাদের আকুতির সৌন্দর্যের চেয়ে পৃথিবীর আর কিছুই সুন্দর নেই । যে রাইফা ঘর জুড়ে প্রজাপতির মত বিচরণ করতো সে রাইফা যখন বাবার কোলে সাদা কাফনে ছিল তখন সব বাবাদের হৃদয় ভেঙ্গে গেছে, সব বাবারাই নতুন করে শঙ্কিত হয়েছে কিভাবে অসুস্থ হলে সে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে এই ভেবে !
আমি ধরে নিলাম ডাক্তার রাইফার ক্ষেত্রে কোন দোষীই নয় তাই বলে কি ডাক্তার হয়েও সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়া একজন মানুষ বলতে পারেন সাংবাদিকদের ছেলেমেয়েদের চিকিৎসা দেওয়াই বন্ধ করে দেবো এমন কোন কথা?
তদন্তের পর রিপোর্ট কি কোনদিনও রাইফার পক্ষে দেবেন কোন ডাক্তার ? তারপর কোন সাংবাদিক কি কোন ডাক্তারের পক্ষে বলবেন যে ডাক্তারের কোন দোষ ছিলোনা ?
পেশায় পেশায় দ্বন্দ সৃষ্টি হয়ে যারা ডাক্তার হয়ে বলতে পারেন সাংবাদিকদের সন্তানদের চিকিৎসা দেবেন না এমন কথা সে আদৌ কোন সার্টিফিকেটে ডাক্তার তা কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায় ! এ কথার জন্যও তার শাস্তি হওয়া প্রয়োজন । ডাক্তারি বিদ্যা এমন কোন অর্জিত বস্তু নয় যা ইচ্ছে করলেই অন্যকে দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া যায় । ডাক্তারি হচ্ছে ব্রতর জায়গা যেখানে অন্য মানুষের হাসিতে সফলতার সত্যিকারের স্তম্ভ নির্ভর করে ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির ব্যপারে যেমনি বলেছেন তেমনি ডাক্তারদের ব্যপারেও বলেছেন । সঠিক তদন্ত হোক রাইফার মৃত্যুর । যদি ডাক্তার দোষী হয়ে থাকেন তবে শাস্তি হোক তার । যদি চিকিৎসার অবহেলা বা ভুল চিকিৎসায় রাইফার মৃত্যু হয়ে থাকে তবে দায় নিতেই হবে, তবে জবাবদিহিতা করতেই হবে, তবে বিচারের মঞ্চে দাঁড়াতেই হবে । তবে সবচয়ে বড় শঙ্কা হল তদন্ততে কি আদৌ সত্যবিষয়টি মানুষ জানবে নাকি শুধু দেখানো তদন্তে মানুষের মনোযোগ আকর্ষন !
ডাক্তার এবং সাধারণ মানুষের দূরুত্ব না কমাতে পারলে এই অসহনশীলতা থেকেই যাবে যা পরবর্তিতে হতে পারে ভয়ানক । কেউ দোষী হলে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এর উপর ভিত্তি করে শাস্তির ব্যবস্থা করুন ।
সাঈদ চৌধুরী
সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি
ও রসায়নবিদ
শ্রীপুর, গাজীপুর
Discussion about this post