অপরাধ দমন ও অপরাধীদের চিহ্নিত করতে কূটনৈতিক এলাকাসহ পুরো রাজধানীকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতায় আনতে কাজ করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
অপরাধীরা যেনো কোনো ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে এই লক্ষ্যে রাজধানী জুড়ে বিভিন্ন পয়েন্টে ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরা বসানোর কাজ চলছে।
অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সিসিটিভি’র মাধ্যমে পুরো রাজধানীকে নজরদারি করবে। এতে অপরাধীদের তৎপরতা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
এর ধারাবাহিকতায় রাজধানীর গুলশান, বারিধারা, নিকেতন, বনানী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রধান অংশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসিটিভি বসানো হযেছে। যে কেউ এসব এলাকায় প্রবেশ করলেই তাকে কোনো না কোনো সিসিটিভির সামনে পড়তে হবে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, ৩-১৬ মেগা পিক্সেল রেজুলেশনের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন প্রায় ৬শ ৪২টি ক্যামেরা ইতোমধ্যে এসব এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে।
উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন এ সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো তাইওয়ান থেকে আনা হয়েছে। যেকোনো দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ক্যামেরাগুলো বিশেষ ফোকাসের মাধ্যমে স্পষ্ট ইমেজ ক্যাপচার করতে পারবে। কোথাও কোনো ঝামেলা বা বেশী লোক সমাগম দেখা গেলে সংকেতের মাধ্যমে তা মনিটরিং সেলে জানান দেবে। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশকে সেখান থেকে নির্দেশনা দেওয়া যাবে।
সূত্র জানায়, ক্যামেরাগুলো প্রায় দু’মাস সময়কার সব ফুটেজ সংরক্ষণ করতে পারবে। এছাড়াও প্রতিটি ক্যামেরা আলাদা স্টোরেজ সিস্টেম রয়েছে যা ৪৮ ঘণ্টার ফুটেজ সংরক্ষণ করতে পারবে।
বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলেও এই সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো তিন ঘণ্টার ব্যাকআপ দিতে সক্ষম। এতে আলাদা ইউপিএস সিস্টেম রয়েছে।
এমনকি অন্ধকার এবং কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায়ও স্পষ্ট ছবি ক্যাপচার করতে সক্ষম। এছাড়াও কিছু ক্যামেরা রাস্তায় চলাচলরত যানবাহনের ‘নম্বর প্লেট’ এর ছবি ক্যাপচার ও সংরক্ষণ করতে পারবে।
খুব শিগগিরই আরও ৫শ ৫৮টি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। এসব এলাকায় মোট ১২শ সিসিটিভি স্থাপন করতে মোট ব্যয় হবে ১৫ কোটি টাকা। এই এলাকার স্থানীয়রা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এসব সিসিটিভি ক্যামেরা মনিটরিংয়ের জন্য গুলশানের ১০২ নম্বর রোডের পুলিশ ফাঁড়িতে একটি মনিটরিং সেল তৈরি করা হয়েছে। সেখানে তিন থেকে চারজন পুলিশ সদস্য পুরো ২৪ ঘণ্টাই সিসিটিভিগুলো মনিটরিং করবে বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এস এম মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, সার্বিকভাবে ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটির পাশাপাশি গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনসহ পুরো এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কাজ করছি। যেনো সম্পূর্ণ এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করা যায়।
‘পুরো এলাকায় মোট ১২শটি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। ইতোমধ্যে আমরা ৬শ ৪২টি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করেছি। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ১শ ৩৪টি বসানোসহ দ্বিতীয় ধাপে অতিরিক্ত ৫০৮টি সিসিটিভি বসানো হয়েছে। এরপর তৃতীয় ধাপে আরও ৫শ ৫৮টি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।’
উপ-কমিশনার বলেন, বর্তমানে কূটনৈতিক এলাকাসহ গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনের পুরো এলাকাই সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারি ব্যবস্থার অধীনে রয়েছে।
অন্যদিকে, পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পুরো এলাকা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতায় আনতে এই পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, সোনারগাঁও ক্রসিং থেকে আব্দুল্লাহপুর, হাতিরঝিল, রামপুরা ব্রিজ থেকে আব্দুল্লাহপুর, মহাখালি, তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড ও গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পুরো এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে। এজন্য ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট তিন হাজার সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।
তবে এসব অর্থ যোগানে স্থানীয় বাসিন্দারা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সহায়তা করবে বলেও সূত্রটি জানিয়েছে।
Discussion about this post