বিডি ল নিউজঃ
রাজনৈতিক সংকট থেকে জনসাধারণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ভিন্ন দিকে ফেরানোর কৌশল হিসেবে জঙ্গিবাদের প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির এক পর্যালোচনা বৈঠকে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। আল্লামা শফীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
হেফাজত আমির বলেন, চলমান রাজনৈতিক সংকট থেকে জনসাধারণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ভিন্ন দিকে ফেরানোর কৌশল হিসেবে নতুন করে নিরীহ আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসা ছাত্রদেরকে জড়িয়ে কথিত জঙ্গিবাদের নাটক তৈরি করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ছত্রছায়ায় মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরুর চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, নতুন করে জঙ্গিবাদের প্রচারণা রাজনৈতিক সংকট থেকে দৃষ্টি ঘুরানোর কৌশল হতে পারে। গত কয়েক দিন ধরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে বিভিন্ন মাদ্রাসায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে যুদ্ধক্ষেত্রের মতো আতঙ্ক তৈরি করে অভিযান পরিচালনা করছে বলে শোনা যাচ্ছে।
আল্লামা শফী বলেন, এসব অভিযানে ঢালাওভাবে নিরীহ মাদ্রাসা ছাত্র ও আলেমদেরকে গ্রেপ্তার করে তাদের কাছে থাকা পবিত্র কুরআন-হাদিস ও ইসলামী বই-পুস্তককে জঙ্গিবাদী বই হিসেবে উপস্থাপন করে মারাত্মকভাবে ইসলাম অবমাননা করা হচ্ছে। এটা খুবই উদ্বেগজনক।
তিনি বলেন, বিশ্বের নির্যাতিত মুসলমানদের ভিডিও চিত্র, কম্পিউটার, মোবাইল ফোনের মেমোরি কার্ড এবং পবিত্র কুরআন-হাদিস ও ইসলামী বই-পুস্তক কখনোই জঙ্গিবাদের প্রমাণ হতে পারে না।
হেফাজতের আমির বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত যে কারো বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ আইনি পদক্ষেপ ও অভিযানে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে দেশকে ইরাক-আফগানিস্তানের মতো পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলতে দেয়া যায় না।’
বৈঠকে হেফাজত আমির সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ইসলাম বিদ্বেষী বক্তব্য ও রাসুল (সা.) এর অবমাননা বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতার বিষফল জাতি অনুভব করতে শুরু করেছে।
অবিলম্বে সকল ইসলাম বিরোধী অপতৎপরতা বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম ঈমান-আক্বিদা বিরোধী যে কোনো তৎপরতার বিরুদ্ধে শক্ত ভূমিকা রাখতে পিছপা হবে না।
রাসুল (সা.) অবমাননায় জড়িত বইমেলায় রোদেলা প্রকাশনীর শুধু স্টল বন্ধ করাকে যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে আল্লামা শফী বলেন, ‘বইটি সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করে দায়ী প্রকাশক ও লেখককে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, হেফাজতের মহাসচিব মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, মাওলানা সালাহ উদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা লোকমান হাকিম, মাওলানা সলিম উল্লাহ, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেপুরী, মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা মুঈনুদ্দীন রুহী, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, কাতেব ইলিয়াস ওসমানী, মাওলানা ফোরকান আহমদ, আশরাফ আলী নিজামপুরী, মাওলানা মুনির আহমদ, আইয়ুব বাবুনগরী, মাওলানা মীর মুহাম্মদ ইদরিস, মাওলানা শফিউল আলম প্রমুখ।
বৈঠকে রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে দেশের চলমান সংকট, মানুষের জানমালের নিরাপত্তাহীনতা, নানা পর্যায়ে অব্যাহত ইসলাম অবমাননা এবং আকস্মিকভাবে কথিত জঙ্গিবাদের ইস্যু তৈরির অভিযোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
বৈঠকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাংবাদিক সম্মেলনসহ বেশ কয়েকটি সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
Discussion about this post