একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শরীয়তপুরের রাজাকার পলাতক ইদ্রিস আলী সরদার ওরফে গাজী ইদ্রিসকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পালং উপজেলার রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটির নেতা ইদ্রিসের বিরুদ্ধে শরীয়তপুর-মাদারীপুরে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতন, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও হিন্দুদের দেশান্তরে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি অভিযোগ আনা হয়। এসব অভিযোগের সবগুলোই প্রমাণিত হওয়ায় সর্বোচ্চ এ সাজা দেন ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার (০৫ ডিসেম্বর) সকালে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এ রায় দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচারিক প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী।
সকাল দশটা ৫০ মিনিট থেকে ৪৮৬ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথম অংশ পড়ে শোনান বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম। পরে রায়ের মূল অংশ অর্থাৎ সাজা ঘোষণা করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
শুরুতে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান তার সূচনা বক্তব্যে বলেন, এ রায় দেওয়া হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। অপরাধের বিষয়ে একমত হলেও একজন বিচারপতি সাজার বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন।
এ মামলার দুই আসামির মধ্যে সোলায়মান মোল্লা ওরফে সোলেমান মৌলভী গ্রেফতারের পর অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ায় তাকে মামলার দায় থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার ২৭তম রায়। সব মিলিয়ে এসব রায়ে ৫১ যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৮ জন মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং বাকি ২৩ জন আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ পেয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালতে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পর ইতোমধ্যেই কার্যকর হয়েছে ছয় শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি।
গত বছরের ১৪ জুন সোলায়মান-ইদ্রিসের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ওইদিনই রাতে গোয়েন্দা পুলিশ সোলায়মান মোল্লাকে গ্রেফতার করলেও ইদ্রিস সরদার পলাতক। গত ২৫ অক্টোবর অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা যান সোলায়মান।
গত বছরের ২৯ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে সাত খণ্ডে ৮৫২ পাতার তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রসিকিউশনে হস্তান্তর করেন তদন্ত সংস্থা।
এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত বছরের ১৬ নভেম্বর প্রসিকিউশন দুই আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর ২২ ডিসেম্বর এ অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ০২ মে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি অভিযোগে সোলায়মান-ইদ্রিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ০২ নভেম্বর মামলার সর্বশেষ ধাপ উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণা অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, হৃষিকেশ সাহা ও সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি রাষ্ট্রপক্ষে এবং সোলায়মানের পক্ষে তার আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম ও পলাতক ইদ্রিসের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আব্দুশ শুকুর খান যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
২০১০ সালে শরীয়তপুরের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ তালুকদার রাজাকার সলেমান ও ইদ্রিস আলী সরদারসহ আরও সাতজন রাজাকারের (তাদের অনেকেই মারা গেছেন) বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।
Discussion about this post