বিডি ল নিউজঃ বেপরোয়া যান চালনের ফলে কারো মৃত্যু হলে তার শাস্তি ৩ বছর। কিন্তু, সাথে রয়েছে জরিমানা। আর তা নির্ধারিত নয়। কোটি টাকাও হতে পারে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দুই বাসের চাপায় প্রথমে হাত হারানো এবং পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হাসানের ছোট দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর মধ্যে স্বজন পরিবহনের মালিক দেবেন ৫০ লাখ, আর রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি দেবে ৫০ লাখ টাকা।
প্রথম ধাপে এক মাসের মধ্যে ২৫ লাখ টাকা করে মোট ৫০ লাখ টাকা দিতে বলা হয়েছে।
উচ্চ আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, নিহত রাজীবের খালা জাহানারা পারভীন ও রাজীবের ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদের ছেলে কাস্টমস কর্মকর্তা ওমর ফারুকের যৌথ ব্যাংক হিসাবে এই টাকা জমা দিয়ে আগামী ২৫ জুনের মধ্যে আদালতকে অবহিত করতে হবে। এ জন্য ওমর ফারুক ও জাহানারা পারভীনকে সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় একটি হিসাব খুলতে বলা হয়েছে। প্রথম ধাপের প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী আদেশ দেওয়া হবে।
বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। আদেশ দেওয়ার আগে আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাস্তায় নেমে প্রতিযোগিতা করার জন্য চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয়নি।
আদেশ দেওয়ার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন নিহত রাজীবের ছোট দুই ভাই মেহেদী হাসান বাপ্পী ও মো. আবদুল্লাহ, মামা জাহিদুল ইসলাম ও খালা জাহানারা পারভীন। এ ছাড়া আইনজীবীদের মধ্যে রিট আবেদনকারী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, বিআরটিসির পক্ষে ব্যারিস্টার মুনীরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
আদেশের আগে শুনানিতে আদালত আইনজীবীর কাছে জানতে চান, রাজীবের মস্তিষ্কের আঘাতের বিষয়টি কখন ধরা পড়ল।
জবাবে ব্যারিস্টার কাজল বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। প্রথমে রাজীবকে শমরিতা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। পরে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আদালত বলেন, তার হাত গেছে। সবাই সেটা দেখল। কিন্তু শরীরের অন্য কোথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে কি না তা কেউ খেয়াল করেনি?
ব্যারিস্টার কাজল বলেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম রাজীবের ব্রেন কাজ করছে না। পরে তাঁর খালা আমাকে ফোন করে জানালেন, রাজীব আইসিইউতে আছেন। আমি তাঁকে দেখতে যাব ভাবছিলাম। কিন্তু তা আর হয়নি। তাঁর খালা বলেছেন, ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে রাজীব বিভিন্ন জায়গায় চাকরির জন্য পরীক্ষা দিয়েছেন। যদি চাকরি হয় তাহলে চাকরির পাশাপাশি পড়ালেখা করে ভাইদের ভরণ-পোষণ চালাবেন। কিন্তু তা তো আর হলো না। তবে এখনো তাঁর ঠিকানায় ইন্টারভিউয়ের জন্য চিঠি আসে। আর তখন আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি (খালা)। ’
একপর্যায়ে বিআরটিসির আইনজীবী মুনীরুজ্জামান আদালতকে বলেন, ‘তারেক মাসুদের মামলায় হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছেন। ’ এ কথা শোনার পর আদালত বলেন, ‘আপনি বিআরটিসির গাড়িচালক। রাস্তায় নেমে প্রতিযোগিতা করার জন্য কি আপনাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে ?’
উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল দুই বাসচালকের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর শিকার হন রাজীব হাসান। দুই বাসের চাপে হাত কাটা পড়ে তাঁর। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ৪ এপ্রিল রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। ওই দিন হাইকোর্ট অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করেন। রাজীবের চিকিৎসার খরচ স্বজন পরিবহনের মালিক ও বিআরটিসিকে বহনের নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে রাজীবকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক কোটি টাকা দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে কার্যকর করতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না এবং প্রয়োজনে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আইন সংশোধন বা নতুন করে বিধিমালা প্রণয়নের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না—তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। এই রুল এখন বিচারাধীন। কিন্তু রাজীব ১৬ এপ্রিল রাতে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর খবর ৬ মে আদালতকে অবহিত করেন আইনজীবী। এ অবস্থায় আদেশ দিলেন আদালত।
Discussion about this post