আজ ২৯ সেপ্টেম্বর রামু সহিংসতার চার বছর। ২০১২ সালের এ দিনে কক্সবাজারের রামুর বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহার ও বৌদ্ধপল্লীতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। হামলার চার বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার অগ্রগতি না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষেরা।ওই হামলার ঘটনায় রুজু হওয়া মামলাগুলোর বিষয়ে কিছুই জানেন না তারা। এসব মামলায় কাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, কাকে বাদ দেওয়া হয়েছে এসব বিষয় নিয়ে তারা এখনও অন্ধকারে রয়ে গেছেন।২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি ট্যাগ করার ঘটনা নিয়ে রামুতে ভয়াবহ সহিংসতা ঘটে যায়। ওই দিন কক্সবাজারের রামুতে একে একে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বৌদ্ধ ধর্মের ১২টি বিহার ও শতাধিক বসত বাড়ি। একইভাবে উখিয়া ও টেকনাফে আরও ৭টি বৌদ্ধ বিহারে হামলা হয়। এ ঘটনার এক বছরের মধ্যে নতুন করে বৌদ্ধ বিহার তৈরি করে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ঘটনায় ১৯টি মামলা হলেও একটি মামলায় আপস হয়ে গেছে।
কক্সবাজারের রামু উপজেলা কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ ঐক্য ও কল্যাণ পরিষদ এবং কেন্দ্রীয় সীমা বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তরুন বড়ুয়া বলেন, ‘২০১২ সালের ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর বৌদ্ধ মন্দির ও পল্লীতে হামলার ঘটনায় ১৯টি মামলার বাদী পুলিশ। পুলিশ তাদের ইচ্ছামতো আসামি করছে, আবার বাদও দিচ্ছে। এমনকি সেদিনের হামলায় যারা মিছিলের সামনের সারিতে ছিলেন, যারা ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের অনেকের নাম পুলিশের চার্জশিটে নেই।’
রামুর কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের অধ্যক্ষ ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের বলেন, ‘আমরা এখনও সম্পূর্ণ নিরাপদ নই। গত চার বছরে অনেক কিছুর সাক্ষী হয়েছি। এ চার বছরে মামলার কোনও অগ্রগতি হয়নি তাও নয়। তবে আমাদের সম্প্রীতির জায়গাটাকে আরও সমৃদ্ধ করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। সুষ্ঠু বিচারের পাশাপাশি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সম্প্রীতি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। আগে যেভাবে সরকার আমাদের নিরাপত্তার উদ্যোগ নিয়েছে তা যেন অব্যাহত থাকে।’.”
কক্সবাজার কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক রঞ্জিত পালিত বলেন, ‘১৯টি মামলায় ৯৪৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে রামুর আটটি মামলায় ৪৫৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রামু থানার সুধাংশু বড়ুয়ার নামে করা মামলাটি দু’পক্ষের আপস-মীমাংসার ভিত্তিতে খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। বাকি ১৮টি মামলার মধ্যে ৩টি পুনঃতদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে দেওয়া হয়েছে। ১৫টি মামলা বিচারাধীন।’
কক্সবাজার জেলা দায়রা ও জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মমতাজ আহমদ বলেন, ‘হুমকির কারণে কিছু সাক্ষী সাক্ষ্য দিচ্ছেন না। জামায়াত-বিএনপিসহ যারা বৌদ্ধ বিহার হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তারাই সাক্ষীদের সাক্ষ্য দিতে বাধা দিচ্ছে। তাই নতুন করে পিবিআই মামলাগুলো তদন্ত করছে।’
এ বিষয়ে জানতে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হয়। তবে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।.” o
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ‘বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ আতঙ্কিত হওয়ার বিষয়টি ঠিক নয়। কারণ, ঘটনার পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা পুরো বিষয়টি দেখছেন। এরপর রামু ব্যাটালিয়নের বিজিবি সদস্যরা এখনও পর্যবেক্ষণে রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, উত্তম বড়ুয়া নামে এক বৌদ্ধ যুবকের ফেসবুকে পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননার ছবি ট্যাগ করার অভিযোগ এনে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামুর বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহার ও বৌদ্ধপল্লীতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় ১২টি বৌদ্ধ বিহার, ২৬টি বসতঘরে অগ্নিসংযোগ, ছয়টি বৌদ্ধ বিহার এবং শতাধিক বসতঘরে হামলা লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয়। পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর বিকালে উখিয়ায় আরও চারটি বৌদ্ধ বিহারে হামলা চালানো হয়।
Discussion about this post